ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

৪ বছরে শুরু, ৫৪-তে শেষ

বৃষ্টি শেখ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
৪ বছরে শুরু, ৫৪-তে শেষ শ্রীদেবী (ছবি: সংগৃহীত)

দু’দিন আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঘুরপাক খাচ্ছিলো শ্রীদেবীর ছবি। কত হাসি খুশিই না দেখাচ্ছিল তাকে। কিন্তু শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মাত্র ৫৪ বছর বয়সে দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলিউডের এই অভিনেত্রী। আচমকা সবাইকে অবাক করে পরলোকে পাড়ি দিলেন ‘নাগিন’ খ্যাত এই নায়িকা।

এখন শুধু স্মৃতি হয়েই রয়ে যাবেন সকলের হৃদয়ে। তার হঠাৎ চলে যাওয়ায় বলিউড মহলে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

১৯৬৩ সালের ১৩ অগাস্ট তামিলনাড়ুতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী শ্রীদেবী। তার ডাক নাম শ্রী আম্মা ইয়াঙ্গার আয়াপ্পান। ১৯৬৯ সালে মাত্র ৪ বছর বয়সে তামিল ছবি ‘থুনাইভান’তে শিশুশিল্পী হিসেবে তিনি অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ খ্যাত এই সুপারস্টারকে। প্রথম ছবিতেই দর্শকদের মন জয় করে নেন শ্রীদেবী।

১৯৬৯ সালে মালায়াম ছবি ‘পুমপাত্তা’তে অভিনয় করে সেরা শিশুশিল্পী হিসেবে কেরালার রাজ্যপুরস্কার জয় করেন। এরপর অনেক তামিল, তেলেগু, কান্নাড়া ও মালায়ালাম ছবিতে দেখা গেছে তাকে। শিশুশিল্পী হিসেবেই ১৯৭৫ সালে সুপারহিট হিন্দি ছবি ‘জুলি’র মধ্য দিয়ে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন এক সময়ে পর্দা কাঁপানো এই নায়িকা। তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ১৩ বছর।  

শ্রীদেবী (ছবি: সংগৃহীত)১৯৭৬ সাল থেকে তামিল ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় শুরু করেন শ্রীদেবী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘মনড্রু মুদিচু’ (১৯৭৬), ‘সিগাপ্পু রোজাক্কাল’ (১৯৭৮), ‘মিনদাম কোকিলা’ (১৯৮১), ‘মুনদ্রাম পিলাই’ (১৯৮২), ‘আখেরি পরাটাম’(১৯৮৮) ও ‘কৃষ্ণানা কৃষ্ণানাম’ (১৯৯১) ছবিগুলোতে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তাও পান। কমল হাসান ও রজনীকান্তের মতো কিংবদন্তি নায়কদের সঙ্গে তার জুটি দর্শকপ্রিয়তা পায়।

১৯৮১ সালে তামিল ছবি ‘মিনদাম কোকিলা’তে অভিনয় করে ফিল্মফেয়ার আসরে তামিল ছবির সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জয় করে নেন তিনি। তেলেগু ছবির জন্যও পুরস্কার পান তিনি। ১৯৮২ সালে ‘মুনদ্রাম পিলাই’ ছবিতে স্মৃতি হারানো এক তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে তামিলনাড়ু রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেন শ্রীদেবী।

অন্যদিকে ‘সোলভা সাওয়ান’ ছবির মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে হিন্দি ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিষেক ঘটে তার। তবে ১৯৮৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হিম্মাতওয়ালা’র মাধ্যমে বলিউডে শ্রীদেবীর জয়যাত্রা শুরু হয়। জিতেন্দ্রর বিপরীতে অভিনয় এবং বিশেষ করে নাচ ঝড় তোলে দর্শক-হৃদয়ে। এই ছবিতে ‘ন্যায়নে সে স্বপনা’ গানের সঙ্গে শ্রীদেবীর নাচ এখনও স্মরণ করেন পুরানো দিনের হিন্দি ছবির দর্শকরা।

পরের বছর অর্থাৎ ১৯৮৪ মুক্তি পায় ‘তোফা’। এ ছবিতেও জিতেন্দ্রর বিপরীতে শ্রীদেবী। ত্রিভুজ প্রেমের ছবিটিতে সহনায়িকা ছিলেন আরেক দক্ষিণী সুন্দরী জয়াপ্রদা। তবে জয়াপ্রদার তুলনায় অনেক বেশি আকর্ষণীয় ছিলেন শ্রীদেবী। ছবিটি ছিলো সে বছরের সেরা হিট।

একের পর এক মুক্তি পায় শ্রীদেবী অভিনীত ‘মাওয়ালি’, ‘মাকসুদ’, ‘জাস্টিস চৌধুরি’,  ‘নয়া কদম’, ‘মাস্টারজি’, ‘নজরানা’, ‘গুমরাহ’, ‘খুদা গাওয়াহ’, ‘জুদাই’ ও ‘লাডলা’। প্রতিটি ছবিই বাণিজ্যিকভাবে সাফল্য পায়।

১৯৮৬ সালে মুক্তি পায় ‘নাগিনা’। ছবিটিতে নায়ক ছিলেন ঋষি কাপুর। এ ছবিতে শ্রীদেবীর অসামান্য সৌন্দর্য, তার নাচ ও অভিনয় দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে। ছবিটি ছিল ব্লকবাস্টর হিট। ছবির সিকুয়েল ‘নিগাহে নাগিন’ও বাণিজ্যিক সফলতা পায়।

শ্রীদেবী (ছবি: সংগৃহীত)আশির দশকে হিন্দি ছবির জগতে নারী সুপারস্টার হয়ে ওঠেন শ্রীদেবী। রোমান্স, অ্যাকশন, কমেডি তিন ধরনের অভিনয়েই তিনি ছিলেন সেরা। নাচেও বেশ পারদর্শী ছিলেন বলিউডের এই অভিনেত্রী। এমনকি সেসময় সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক অভিনেত্রীদের মধ্যে ছিলেন তিনি একজন।

‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ ছবিতে অনিল কাপুরের বিপরীতে অসাধারণ কমেডি উপহার দেন শ্রীদেবী। জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অনিল-শ্রীদেবী জুটি। ‘চালবাজ’ ছবিতে অঞ্জু-মঞ্জু দুই যমজ বোনের চরিত্রে শ্রীদেবী দুর্দান্ত অভিনয় করেন। ছবিটি ছিলো ‘সীতা অউর গীতা’ ছবির রিমেক। রজনীকান্ত ও সানি দেওলের বিপরীতে পুরো ছবিতে প্রধান হয়ে ওঠেন শ্রী। এ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে প্রথমবারের মতো হিন্দি ছবিতে সেরা অভিনেত্রীর ফিল্মফেয়ার পুরস্কার ঘরে তোলেন শ্রী।

যশ চোপড়া প্রযোজিত রোমান্টিক ছবিতেও শ্রীদেবী ছিলেন অসামান্য। ‘চাঁদনি’তে শ্রীদেবী হয়ে ওঠেন দর্শকের স্বপ্নের প্রেমিকা। একই প্রযোজকের ‘লামহে’ শ্রীদেবীর ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ছবি।

শ্রীদেবী ২০১৩ সালে পদ্মশ্রী সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। অভিনয়ের জন্য ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন পাঁচবার। ২০১৫ সালে পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার গ্ল্যামার অ্যান্ড ফ্যাশন অ্যাওয়ার্ড। অন্যান্য অনেক পুরস্কারও জমা করেছেন ঘরে।

১৯৯৬ সালে পরিচালক বণি কাপুরের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন শ্রীদেবী। এরপর প্রায় ১৫ বছর রূপালি পর্দার আড়ালে ছিলেন তিনি। তবে ছোট পর্দায় প্রায় দেখা যেতো তাকে। পরে ২০১২ সালে ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ছবির মধ্য দিয়ে আবার বলিউডে পা রাখেন শ্রীবেদী। সবশেষ ২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মম’ ছবিতে দেখা গিয়েছিলো ৫৪ বছর বয়সী এই তারকাকে।

শ্রীদেবী (ছবি: সংগৃহীত)অভিনয় জগতে ৪৯ বছর রাজত্ব করেছেন শ্রীদেবী। তাকে বলা হয় বলিউডের প্রথম নারী সুপারস্টার। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে হিন্দি, তামিল, তেলেগু, মালায়াম ভাষার কয়েকশ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন শ্রীদেবী। তার অসাধারণ সৌন্দর্য ও অসামান্য প্রতিভা তাকে বলিউডের সর্বকালের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
বিএসকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।