সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে।
সকালে শিল্পীর মরদেহ শহীদ মিনারে আনার পর প্রথমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রুপালি গিটারের শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছেন শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে হাজারো জনতা। অগণিত ভক্ত, অনুরাগী ফুল হাতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন প্রিয় শিল্পীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।
শ্রদ্ধা জানানো শেষে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুর হক মিলন বলেন, এ শিল্পীকে আমরা হয়তো শারীরিকভাবে আর পাব না, কিন্তু তার সৃষ্টিগুলো আমাদের মাঝে অমর হয়ে থাকবে।
শিল্পী ফকির আলমগীর বলেন, আইয়ুব বাচ্চু এমন একটা সময়ের শিল্পী, যে সময়ে সংগীতে একটা খরা চলছিলো। এ শিল্পী তা দূর করেছেন।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা শিল্পীর ভক্ত ও সাভার থেকে আসা মধ্যবয়সী ফাহমিদা আক্তার জানান, ছোটবেলা থেকেই আইয়ুব বাচ্চুর বিভিন্ন গানের মুগ্ধতায় বড় হয়েছি। অথচ তাকে আর পাব না, এটা ভাবতেই কষ্ট হয়!
সর্বস্তরের মানুষের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের পর দুপুর ১টার দিকে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ নিয়েও যাওয়া হবে হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠে। সেখানে বাদ জুমা তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
পরে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে মগবাজারে তার নিজের স্টুডিও এবি কিচেনে। আইয়ুব বাচ্চুর দ্বিতীয় জানাজা হবে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। দ্বিতীয় জানাজা শেষে শিল্পীর মরদেহ হিমঘরে রাখা হবে।
অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে আইয়ুব বাচ্চুর মেয়ে ফাইরুজ সাফরা আইয়ুব ও ছেলে আহনাফ তাজোয়ার আইয়ুব দেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তারা এলে চট্টগ্রামে শনিবার মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন আইয়ুব বাচ্চু।
বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) মাত্র ৫৬ বছর বয়সে আইয়ুব বাচ্চু শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জনপ্রিয় এই শিল্পীর মৃত্যুতে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড এলআরবির দলনেতা আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন একাধারে গায়ক, গিটারবাদক, গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক।
আইয়ুব বাচ্চু ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের এনায়েতবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ ইসহাক ও মা নূরজাহান বেগম। ১৯৭৮ সালে ফিলিংস ব্যান্ডের মাধ্যমে তাঁর পথচলা শুরু। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছিলেন সোলস ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট।
আইয়ুব বাচ্চুর অ্যালবাম এলআরবি বাজারে আসে ১৯৯২ সালে। এলআরবিই দেশের প্রথম ডাবল ও আনপ্লাগড অ্যালবাম প্রকাশ করে। সুখ, তবুও, ঘুমন্ত শহরে, ফেরারি মন, আমাদের বিস্ময়, মন চাইলে মন পাবে, অচেনা জীবন, মনে আছে নাকি নাই, স্পর্শ, যুদ্ধ এলআরবির জনপ্রিয় অ্যালবাম।
একক অ্যালবামেও ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছেন ক্ষণজন্মা এই শিল্পী। তার একক অ্যালবামের মধ্যে কষ্ট, সময়, একা, প্রেম তুমি কি, দুটি মন, কাফেলা, জীবনের গল্প উল্লেখযোগ্য। কিছু চলচ্চিত্রেও প্লেব্যাক করেছেন আইয়ুব বাচ্চু।
শহীদ মিনারে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা
বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৮
এইচএমএস/এমজেএফ