১৯৫৭ সালে যাত্রা শুরু হয় বিএফডিসির (তৎকালীন সময়ে যা ছিলো ইপিএফডিসি), যা জনসাধারণের কাছে এফডিসি নামেই বেশি পরিচিত। দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নে দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এ প্রতিষ্ঠান।
বাংলা চলচ্চিত্র এখন পর্যন্ত ৫ দশক অতিক্রম করেছে। এই ৫ দশকের মাঝে দীর্ঘ ৪ দশকই ছিল অতি জমকালো। বেশ কিছু অসাধারণ চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে এ সময়ে। সময়ের পরিক্রমায় গত এক দশকে বাংলা চলচ্চিত্র তার জৌলুস হারিয়ে আজ জীর্ণ শীর্ণভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক তেমনি একসময় যে এফডিসি প্রতিনিয়ত কর্মচঞ্চল থাকতো, তা এখন প্রায় বিরল আকার ধারণ করেছে।
এফডিসির বর্তমান এই জৌলুসহীনতার পেছনে অযত্ন আর সময়োপযোগী উদ্যোগ না নেওয়াই অন্যতম ব্যর্থতা বলে মনে করছেন বিভিন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতার। এ প্রসঙ্গে চিত্র পরিচালক দেবাশিষ বিশ্বাস বলেন, এফডিসিতে বর্তমানে কাঠামোগত ও গঠনতান্ত্রিক বেশ কিছু সমস্যা আছে। এই সমস্যাগুলো বর্তমানে খুব বড় আকার ধারণ করেছে।
আবার এফডিসিতে চলচ্চিত্র নির্মানে ব্যয় অনেক বেশি বলেও মনে করেন অনেক নির্মাতারা। এ নিয়ে চিত্র পরিচালক ইস্পাহানি আরিফ জাহান বলেন, এফডিসিতে ছবি নির্মাণ করতে গেলে ব্যয় একটু বেশি হয়। এফডিসিতে যে খরচ হয়, তার থেকে অনেক কমে বাইরে করা সম্ভব।
এদিকে চলচ্চিত্র নির্মাণ কমে যাওয়ায় কলা-কুশলীদের কাজও কমে গেছে। বিকেলের আলো কমে এলে মায়ার টানে এখনো সমিতিগুলোতে আড্ডা জমে। তবে কাজ না করতে করতে এফডিসিতে যেন একটা ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে গেছে। প্রশাসনিক জটিলতার কারণেরও অনেক পার্টি কিছুদিন কাজ করার পর আর কাজ করতে চায় না বলেও মনে করেন অনেকে।
এফডিসি ঘুরে দেখা গেছে, চলচ্চিত্র নির্মাণের এ জায়গাটির বেশিরভাগ শুটিং ফ্লোরই এখন খালি পড়ে থাকে। যেখানে নিয়মিত চলচ্চিত্রের শুটিং হতো, সেখানে এখন আলো জ্বলে শুধু টেলিভিশন চ্যানেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আর বিজ্ঞাপন তৈরিকে কেন্দ্র করে। দুর্নীতি, প্রশাসনিক অসহযোগিতা আর কারিগরি অদক্ষতার কারণে এফডিসি থেকে নির্মাতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন এ ক্ষেত্রের অনেক বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে এফডিসির কোন সাপোর্টই দেয় না। অনেক সময় দেখা যায় কিছু অযৌক্তিক বিল চাপিয়ে দেয়। কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এখানে আছেন, তারা কখনোই সহযোগিতা করতে চান না। এমনও হয়েছে যে, একসময় পিয়নের কাজ করতো, সে এখন একটি বড় টেকনিশিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এতে কি হয়, সে ক্যামেরা চালাতে পারে না, তবু তাকে দিয়েই কাজ করাতে হয়।
চিত্রনায়ক আলমগীর বলেন, এফডিসিতে অনেক ভালো ভালো মেশিন এসেছে কিন্তু সেগুলো চালাবার লোক নেই। আমরা কালার কালেকশন করি একটি ২৪ ইঞ্চির মনিটরে, কিন্তু এটা হওয়া উচিত ছিল বড় স্ক্রিনে। আমাদের ওখানে যে বড় প্রজেক্টর আছে সেটা নষ্ট হয়ে গেছে অনেকদিন, কিন্তু তা সারাবার লোক নেই। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।
এদিকে গত অর্থবছরে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিলো এফডিসির উন্নয়নে। এর মধ্যে ৫৯ কোটি টাকা দিয়েই কেনা হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি, ক্যামেরা আর লাইট। সেইসাথে এফডিসির ৯৪ কাঠা জমি ব্যবহার করে আধুনিক কমপ্লেক্স তৈরির পরিকল্পনা হচ্ছে বলে জানালেন বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমির হোসেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটির প্রথম পর্যায়ের কাজটা শেষ হয়েছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিগুলো আমদানি হচ্ছে। এখানে দক্ষ জনবলের কিছু অভাব রয়েছে। দক্ষ যারা ছিলেন, অনেকেই অবসর নিয়েছেন। আর আগে ছিলো এনালগ সিস্টেম, কিন্তু এখন তো সব ডিজিটাল। সেদিক থেকেও উন্নয়নের কাজ চলছে।
এছাড়া চলচ্চিত্র শিল্পে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ এখন অন্যদিকে ঝুঁকে পড়েছেন বলেও মন্তব্য করেন আমির হোসেন। তিনি বলেন, বিএফডিসিতে শুটিংয়ের মাত্রাটা আগের থেকে অনেক কমে গেছে। সেক্ষেত্রে প্রযোজক যারা আছেন তাদের আরো বেশি এগিয়ে আসতে হবে।
এতকিছুর মধ্যেও দেশে বেশকিছু ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণের চেষ্টা চলছে। আর সেটাই অনেককে সুদিনের স্বপ্ন দেখায়। এ প্রসঙ্গে চিত্রনায়িকা সোহানা সাবা বলেন, আপসেট হওয়ার কিছু নেই। কাজ যে হচ্ছে না তা না। কাজ হচ্ছে এবং কেউ এখনো আশা ছাড়েনি। একটা বিশ্বাস আছে, অবশ্যই একটা পরিবর্তন আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৮
এইচএমএস/এমজেএফ