ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

মা দিবস

সেলুলয়েডে মা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৮ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৯
সেলুলয়েডে মা সেলুলয়েডে মা

পৃথিবীতে মা’র চেয়ে আপন কেউ নেই। আত্মার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মা’কে নিয়ে যুগে যুগে রচিত হয়েছে অসংখ্য সাহিত্য এবং নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র। সেলুলয়েডে নির্মাতারা বারবারই তুলে ধরেছেন মায়ের মহত্ত্ব, সন্তানের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা ও ত্যাগের চিত্র।

মা দিবসের এ প্রহরে বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য মা’কে নিয়ে বিভিন্ন ভাষায় নির্মিত দর্শক নন্দিত কয়েকটি চলচ্চিত্র তুলে ধরা হলো।

টু উইমেন (১৯৬০)
কিংবদন্তি অভিনেত্রী সোফিয়া লরেন অভিনীত পাঁচটি সেরা চলচ্চিত্রের তালিকা করলে সেখানে নি:সন্দেহে জায়গা করে নেবে ‘টু উইমেন’।

‘বাইসাইকেল থিফস’খ্যাত ইতালিয়ান পরিচালক ভিত্তোরিও দে সিকা পরিচালিত চলচ্চিত্রটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দেখানো হয়েছে মানবতার করুণ উপাখ্যান। আলবার্তো মোরাভিয়ার লেখা একই নামের উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে যেখানে বিশ্বযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া এক মা-মেয়ের করুন গল্প দেখানো হয়েছে।

জার্মান নাৎসি বাহিনীর আক্রমণে রোমের লোকজনদের সঙ্গে লাতসিওতে পালিয়ে আসে সেসিরা (সোফিয়া লরেন) ও তার ১২ বছর বয়সী মেয়ে রোসেত্তা (ইলিউনোরা ব্রাউন)। শত্রুদের থেকে নিজের এবং মেয়ের জান ও সম্ভ্রম বাঁচানোর জন্য এক মায়ের সংগ্রাম নান্দনিকভাবে ফুটে উঠেছে ‘টু উইমেন’ চলচ্চিত্রে। গির্জার ভেতরে ধর্ষিত হবার পর মেয়েকে জড়িয়ে ধরে মাই সুইট অ্যাঞ্জেল বলতে বলতে মায়ের কান্না আজও হৃদয়কে নাড়া দেয়। সেসিরার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সোফিয়া লরেন জিতেছিলেন অস্কারসহ মোট ২২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

ইংলিশ ভিংলিশ (২০১২)
২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউড চলচ্চিত্র ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ সংসারের যাঁতাকলে পিষ্ট উপমহাদেশের এক সাধারণ মায়ের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার গল্প। শশী গোডবোলে নামের এক উচ্চ মধ্যবিত্তের গৃহিণীর জীবন কাহিনীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে চলচ্চিত্রটি। তিনি দুই সন্তানের মা, স্বামী সন্তানের ঘর সামলে তার বাইরের জগত সম্পর্কে খুব একটা জানা হয়ে ওঠে না।

ইংরেজি ভাষায় বিশেষ দুর্বলতার কারণে স্বামী এমন কী সন্তানদের কাছেও দু’কথা শুনতে হয় তার। এক আত্মীয়ের বিয়ের দাওয়াতে অংশ নিতে আমেরিকা যেতে হয় তাকে। শেখানে গিয়ে তিনি ভর্তি হন ইংরেজি ভাষা শেখার স্কুলে। মজার ঘটনাসমূহের মাধ্যমে আস্তে আস্তে বদলে যেতে থাকে তার জীবন। গৌরি সিন্ধে পরিচালিত চলচ্চিত্রটি ফিল্মফেয়ারে সেরা নবাগত পরিচালকসহ অন্যান্য বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে পুরস্কার জিতে নেয়।

এরিন ব্রকোভিচ (২০০০)
মার্কিন চলচ্চিত্র এরিন ব্রকোভিচ অভিনেত্রী জুলিয়া রবার্টের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলের বৈদ্যুতিক শক্তির এক বৃহৎ কোম্পানির বিরুদ্ধে সংগ্রামী নারী এরিন ব্রকোভিচের আইনি লড়াইয়ের সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্রটি তৈরি করা হয়েছে যেখানে ব্রকোভিচ চরিত্রে অভিনয় করেছেন জুলিয়া রবার্টস। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য জুলিয়া রবার্টস সেরা অভিনেত্রীর অস্কার পুরস্কার অর্জন করেন। এতে সত্যিকারের এরিন ব্রকোভিচ ক্যামিও চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

 ব্রকোভিচের মতে চলচ্চিত্রের সাথে বাস্তবের মিল প্রায় ৯৮ ভাগ যার মানে সত্য ঘটনা থেকে খুব সামান্যই পরিবর্তন করা হয়েছে এতে। এক সিঙ্গেল মাদারের তিন সন্তান নিয়ে সংগ্রামের গল্প ফুটে উঠেছে চলচ্চিত্রটিতে।

অল অ্যাবাউট মাই মাদার (১৯৯৯)
এ যুগের সেরা চলচ্চিত্রকারদের কাতারে নি:সন্দেহে অবস্থান করছেন স্প্যানিশ চলচ্চিত্র পরিচালক পেদ্রো আলমোদোভার। তার পরিচালিত অল অ্যাবাউট মাই মাদারে তিনি দেখিয়েছেন ম্যানুলা নামের হাসপাতালের এক সেবিকাকে, যার একমাত্র আদরের ছেলে ইস্তাবান। কিন্তু এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ইস্তাবান মারা যায় ও তার হৃৎপিণ্ডকে স্থানান্তর করা হয় আরেকটি ছেলেকে। এই স্থানান্তরের দায়িত্ব পালন করেন ম্যানুলা নিজেই। এরপরই তিনি সেবিকার কাজ ছেড়ে ফিরে যান ইস্তাবানের বাবা ও তার স্বজনদের কাছে। সেখানে গিয়ে এক এইডস রোগীর শিশুকে দত্তক নেন। এই শিশুকে পেয়ে নতুন রূপে মা হয়ে আবর্তিত হয় ম্যানুলার জীবন।

স্প্যানিশ ভাষায় নির্মিত অল অ্যাবাউট মাই মাদার স্পেনে মুক্তি পায় ১৯৯৯ সালের ১৬ এপ্রিল। সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে এটি অস্কারও জিতেছে।

মাদার (২০০৯)
দক্ষিণ কোরিয়ার ড্রামা নির্ভর চলচ্চিত্র মাদার মুক্তি পায় ২০০৯ সালে। এটি পরিচালনা করেন বং জুন হো। দক্ষিণ কোরিয়ার এক ছোট শহরে ছেলেকে নিয়ে বাস করেন এক বিধবা। আশ্চর্যজনকভাবে সেখানে খুন হন একটি মেয়ে এবং তার খুনের দায়ে ফেঁসে যান বিধবার ছেলেটি। চলচ্চিত্রটিতে দেখানো হয় ছেলেকে বাঁচানোর জন্য এ মা’র সত্যিকার খুনিকে খুঁজে বেড়ানোর গল্প। কোরিয়ান ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছিল।

মাদার ইন্ডিয়া (১৯৬৭)
অস্কারের মূল আসরে ভারত থেকে সর্বপ্রথম যে চলচ্চিত্রটি বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে লড়েছিল তার নাম ‘মাদার ইন্ডিয়া’। চলচ্চিত্রটির পরিচালক ছিলেন মেহবুব খান এবং মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নার্গিস, সুনীল দত্ত, রাজেন্দ্র কুমার এবং রাজ কুমার। সত্যিকারের জীবনের স্বামী-স্ত্রী নার্গিস ও সুনীল দত্ত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন মা-ছেলে হিসেবে। তবে তখনও এদের দু’জনের বিয়ে হয়নি। জানা যায় শুটিং চলাকালীন আগুনের হাত থেকে নার্গিসকে বাঁচানোর ফলশ্রুতিতে সুনীলের সঙ্গে তার সম্পর্ক শুরু হয়েছিল।

‘মাদার ইন্ডিয়া’ চলচ্চিত্রের গল্প আবর্তিত হয় রাধা নামে এক দরিদ্র ভারতীয় গ্রামীণ গৃহবধূর জীবনকে ঘিরে। স্বামী শামু (রাজকুমার) ও চার সন্তানকে নিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু কৃষক শামু দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে পড়লে তাদের জীবনে নেমে আশে ঘোর অন্ধকার। নিজেকে সংসারের বোঝা মনে করে গৃহত্যাগ করে শামু। স্বামী পরিত্যক্তা রাধা নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে গ্রামের ধনী মহাজন থেকে। অভাব অনটনে ছোট দুটি সন্তানের অকাল মৃত্যু ঘটে। তবে দুই ছেলে রামা ও বিরজুকে নিয়ে কৃষিকাজ করে রাধা চালিয়ে যায় তাদের জীবন সংগ্রাম।

লেডি বার্ড (২০১৭)
২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লেডি বার্ড’ চলচ্চিত্রতে বয়ঃসন্ধিকালের অস্থির সময়কে দারুণ দক্ষতার সঙ্গে সেলুলয়েডের পর্দায় দেখিয়েছেন চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক গ্রিটা গেরভিগ। চলচ্চিত্রের জনরা হিসেবে ‘লেডি বার্ড’ একটি কামিং অব এইজের গল্প। চলচ্চিত্রে উল্লেখিত ‘লেডি বার্ড’র আসল নাম ক্রিস্টিন যে ক্যাথলিক হাই স্কুলের সিনিয়র ইয়ারে পড়াশোনা করছে। মেয়েটি ক্যাথলিক কালচার থেকে বের হয়ে কিছু একটা করতে, কিন্তু আসলে সে নিজেও জানে না যে সে কী চায়। চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে একজন ১৭ বছরের মেয়ের গল্প। যে সব সময় তার মায়ের বিরোধিতা করে। মা ও মেয়ের মধুর খুনসুটি দিয়ে এগিয়ে যায় চলচ্চিত্রটির কাহিনী। এতে লেডি বার্ড চরিত্রে অভিনয় করেছেন সার্শা রোনান ও মায়ের চরিত্রে ছিলেন লরি মেটক্যালফ।

মাদারস ডে (২০১৬)
তারকা সম্বলিত হলিউড চলচ্চিত্র মাদারস ডে মুক্তি পায় ২০১৬ সালে। মা দিবসকে ঘিরেই চলচ্চিত্রটির কাহিনী আবর্তিত। যেখানে দিবসটি পালন করতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একটি পরিবারের সদ্যসরা একত্র হয়। এর পরিচালক গ্রে মার্শালের অবশ্য ভ্যালেন্টাইন্স ডে ও নিউ ইয়ার্স ইভ নামে দিবস ভিত্তিক আরও দুটি চলচ্চিত্র রয়েছে।   চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন জেনিফার অ্যানিষ্টন, জুলিয়া রবার্টস, কেট হাডসনসহ আরও অনেকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৯
জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।