ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর জাম্বারার দিঘী 

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২৩
অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর জাম্বারার দিঘী 

ফেনী: পৌষের কনকনে শীতে প্রকৃতির মুখ ভার। সকাল গড়িয়ে মধ্য দুপুরে সূর্য কিছুটা উঁকি দিচ্ছিলো।

সেই মিষ্টি রোদে ফেনী শহরতলী শর্শদি ইউনিয়নের মধ্য জাহানপুরের জাম্বারা দিঘীতে জলকেলি করছে বরফ দেশের পাখিরা। তাদের উড়োউড়িতে চার পাশটা যেন মুখর হয়ে উঠছিলো।  

দিঘীর এক পাশে গ্রামের বাসিন্দারা গোসলসহ দৈনন্দিন সব কাজ করলেও অন্য প্রান্তে পাখিরা নিজেদের রাজ্য গড়ে তুলেছেন। প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছেন তাদের দেখতে এতে তাদের কোনো হেলদোল নেই।  

স্থানীয় ইউপি সদস্য জিয়া উদ্দিন মোল্লাও পাখিদের বিষয়ে বেশ কড়া, কোনোভাবেই পাখিদের বিরক্ত করা যাবে না। গ্রামের সবাই মিলে এই দিঘীকে পাখিদের জন্য অভয় আশ্রম করে তুলেছেন।

হাজারো অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের এই দিঘীটি। দিনভর জলকেলি, খুনসুটি সে সঙ্গে কিচির-মিচির শব্দ, কখনো ঝাঁক বেঁধে নান্দনিক কসরতে ডানা মেলে নীল আকাশে ওড়োউড়ি। পাখির কিচির-মিচির শব্দে ঘুম ভাঙছে এলাকাবাসীর। পাখির এ কলতান উপভোগ করতে সকাল-বিকেল ভিড় করছেন পাখিপ্রেমীরা। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, অতিথি পাখিদের সুরক্ষা দিতে কাজ করছে প্রশাসন।

শত শত অতিথি পাখির মিলনমেলা। মনের আনন্দে পানিতে দাপাদাপি, সে সঙ্গে চলে দিনভর খুনসুটি, আবার কখনো ডানা মেলে নীল আকাশে ওড়াউড়ি। এভাবেই দিনভর নানা কসরতে মেতে ওঠা, পরিযায়ী পাখিরা।

পানকৌড়ি, বালি হাস, রাঙ্গা ময়ূরী, ছোট স্বরালী পরিযায়ী পাখির এ বিচরণ ক্ষেত্রটি ডিসেম্বরের শেষের দিক থেকেই শুরু হয়। শীতপ্রধান এলাকা থেকে আসা এসব অতিথি পাখি অনুকূল পরিবেশ আর প্রয়োজনীয় খাবার নিশ্চিত হওয়ায় আস্তানা গড়ে দিঘতে ।

গত বছরের চেয়ে এবার বিপুল পরিমাণ পাখির আগমনে তৈরি হয়েছে অন্য এক পরিবেশ। স্থানীয়রা বলছেন, এ সব অতিথি পাখির কিচির-মিচির শব্দে ঘুম ভাঙছে তাদের।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও এখানে অতিথি পাখি দেখতে এসেছি। এখানে আসলে খুবই ভালো লাগে। পাখির ডানা ঝাপটানো মুগ্ধ করছে আগত দর্শনার্থীদের। অনেকেই আবার মোবাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঁইয়া বলেন, কেউ যাতে পাখি ধরতে না পারে তাই আমরা এখানে স্থানীয়রা সজাগ রয়েছি। আমরা সব সময় পাহারা দিয়ে পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি যাতে কেউ পাখিদের বিরক্ত না করে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জিয়া উদ্দিন মোল্লা বলেন, এখানে এসে মানুষ অতিথি পাখি দেখে যেতে পারবেন কিন্তু কোনো ভাবেই যেন পাখিদের বিরক্ত না করেন সে বিষয়ে আমরা সচেষ্ট আছি। আমরা দিঘীটিকে অতিথি পাখির অভয় আশ্রম করতে চাই।  

এ সব অতিথি পাখিদের নিরাপত্তা বিষয়ে ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান বলেন, শীতে ফেনীতে অতিথি পাখি আসে এটি ভাল খবর। এখানে অতিথি পাখিদের নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ পাখিদের পরিবেশ বিনষ্ট করতে চাইলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিবো। পাখিরা পরিবেশ রক্ষায় ইতিবাচক ভুমিকা পালন করে।  

পাখিপ্রেমীদের মতে, এ দিঘতে প্রায় ১০ প্রজাতির অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে এবার। ডিসেম্বরের শেষ থেকে মার্চ পর্যন্ত এ সব পাখি অবস্থান করে।

ফেনী জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, শীত প্রধান দেশ সাইবেরিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি অতিথি হয়ে আসে। এরা ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও দিঘীতে অবস্থান নেয়। শীত কমার সঙ্গে সঙ্গে এসব পাখি আবার আপন নীড়ে ফিরে যায়। দেশে আগত অতিথি পাখি নিধন না করতে আইন করা হয়েছে। এ আইনের আওতায় বিভিন্ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি ও পাখির আবাসস্থলের আশপাশের ব্যক্তিদের সচেতন করতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমাদের সকলের উচিত সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় এ সব পাখিকে রক্ষা করা।  

বাংলাদেশ সময়: ১২১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।