ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বাগেরহাটে রিমালের প্রভাবে ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৯ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৪
বাগেরহাটে রিমালের প্রভাবে ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত

বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বাগেরহাটের শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও বাগেরহাট সদরের বিভিন্ন এলাকার ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  

ধসে গেছে ৩৫/১ ফোল্ডারের টেকসই বেড়িবাঁধের দুই কিলোমিটার ব্লক।

মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কারণে ব্লক ধসে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো মেরামত শুরু হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে শরণখোলায় ৩৫/১ ফোল্ডারের টেকসই বেড়িবাঁধের দুই কিলোমিটারের ব্লক সরে গেছে। মোরেলগঞ্জের শ্রেণিখালী এলাকায়ও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নেয় গোপাল কাঠি এলাকার দুটি স্থানে। বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন জায়গায় মোট ১২ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে বাঁধ ধসে এবং উপচে পড়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় বিপুল পরিমাণ মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ।

রিমালের প্রভাবে ২৬ ও ২৭ মে বিভিন্ন জেলায় ঝড়-বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।  

বুধবার (২৯ মে) দুপুরে গোপালকাঠি এলাকায় দেখা যায়, বেড়িবাঁধটির কয়েকশ’ ফুট জায়গা পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে ভৈরব নদীর গর্ভে। ওই স্থান থেকে কিছুদূর সামনে এগিয়ে আরও একটি জায়গায় আরও কয়েকশ’ ফুট বাঁধ বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। এতে ওই এলাকার অনেকগুলো ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। প্লাবিত হয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর।

ওই এলাকার রুহুল আমিন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ঝড়ে যেমন ক্ষতি হয়েছে, বাঁধ ভেঙে আরও বেশি বিপাকে পড়েছি আমরা। বাড়িঘর সব জায়গায় পানি উঠে গেছে। ঘেরের মাছ ভেসে গেছে সবার।

ঘটনাস্থল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কুমার স্বস্তিক বলেন, আমরা সব বাঁধের খোঁজ নিচ্ছি। দ্রুত মেরামতের চেষ্টা করছি। মানুষের যাতে ভোগান্তি কম হয়, সেজন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।

শরণখোলার গাবতলা, তাফালবাড়িসহ কয়েকটি এলাকায় ব্লক সরে সম্পূর্ণ বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

গাবতলা এলাকার ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, মূলত যখন বাঁধটি নির্মাণ করা হয়, তখন মাটির পরিবর্তে বালু দেওয়া হয়েছিল। বালুর কারণেই ব্লক সরে গেছে। এখন তো পুরো বাঁধ ধসে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

একই এলাকার জাফর তালুকদার বলেন, যখন বাঁধ হয়েছিল, তখন খুব খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে, বাঁধ না হওয়াই ভালো ছিল।

নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, শরণখোলার মানুষের দীর্ঘদিনের চাওয়া এ বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। ফলে এখনই বাঁধে ফাটল দেখা দিচ্ছে, ব্লক ধসে যাচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের ‍বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মো. আল বিরুনী বলেন, বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন পোল্ডার ও উপ প্রকল্পে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১২ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উপচে পড়ায় এ ক্ষতি হয়েছে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করেছি, যাতে জনবসতিতে আর পানি না ঢুকতে পারে। শরণখোলায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত বাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গার ব্লক ধসে গেছে। সেখানে আমার প্রাক্কালন করেছি, অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করতে পারব। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাইরে কিছু রিং বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পেয়েছি।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে থাকা পোল্ডার ও বাঁধ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট রিং বেড়িবাঁধ এবং গ্রাম্য সড়ক ধসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফলে স্থানীয়রা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।  

বাঁধ ধসের বিষয়ে বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা আসলে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা। রিমালে এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, সেটিতে নির্মাণ ত্রুটি থাকায় ওই বাঁধের ব্লক ধসে গেছে। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পুনরায় সঠিক পদ্ধতিতে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৪
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।