শাবিপ্রবি, (সিলেট): প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে অন্যতম একটি দুর্যোগ হলো ‘খরা’। বৃষ্টির অভাব, পানির অপ্রতুলতা দেখা দিলে এটি তীব্র আকারও ধারণ করতে পারে।
গবেষকরা জানান, বর্তমানে পৃথিবী উষ্ণ হয়ে দিন দিন গরম বাড়ছে। তাতে পরিবেশের ওপর একটি বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন তারা। এ ছাড়া পৃথিবী উষ্ণ হওয়া ঠেকাতে বর্তমানে যে সব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, খরায় মারা যাবে গাছ। সেই সংকট মোকাবিলাকে আরও কঠিন করে তুলবে। ফলে জনজীবনে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গাছের ওপর খরার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা এমন এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত ৩১ জুলাই বিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী সায়েন্স এ ‘উষ্ণমণ্ডলীয় গাছের কাণ্ডের বৃদ্ধিতে খরার প্রভাব সামান্য’ শীর্ষক এই গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে বলে জানান শাবিপ্রবির বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গবেষক মিজানুর রহমান।
এ গবেষণায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গবেষকরাও রয়েছেন। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিংগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার জুইডেমা, ব্রাজিলের ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্পিনাসের অধ্যাপক পিটার গ্রোয়েনেন্ডি, শাবিপ্রবির বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার অধ্যাপক ভেলেরি ট্রাউট ও অধ্যাপক ফ্লোরিন বাবস্ট।
গবেষকরা জানান, এই গবেষণায় ১৯৩০ সালের পর থেকে সবচেয়ে শুষ্ক মৌসুমের (খরা) বছরগুলোকে বাছাই করেন তারা। এ বছরগুলোতে গাছের বর্ষবলয় স্বাভাবিক বছরের তুলনায় কতটা সংকুচিত ছিল, তা উঠে গবেষণায়। পাশাপাশি খরার পরের দুই বছর গাছের বর্ষবলয়ের প্রস্থ পরিমাপ করেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন গবেষক দল।
গবেষকরা জানান, ১৯৩০ সাল থেকে প্রায় ১শ বছর সময়কালে ৩৬টি দেশের ৫শ’টি স্থানের ২০ হাজারের বেশি গাছের বর্ষবলয়ের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছেন তারা। আমাজন বন থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের গাছের তথ্য–উপাত্ত নিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে।
গবেষকদের দাবি, এর আগে এত গাছের বর্ষবলয় নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে খরার বছরে গাছের বৃদ্ধি ছিল স্বাভাবিক বছরের তুলনায় দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ কম। এতে বাংলাদেশে খরায় গাছের বৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৯ সালের খরার বছরে, বাংলাদেশের রেমা-কালেঙ্গা বনে চিক্রাশিগাছের বৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫৫ শতাংশ কমেছে এমন তথ্য গবেষণায় উঠে আসে।
গবেষণার বিষয়ে অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, খরার পরও বেশির ভাগ স্থানে গাছের বৃদ্ধিতে তার প্রভাব পড়েছে। এর অন্যতম কারণ, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন কার্বন শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে খরার পরও প্রকৃতিতে তার প্রভাব পড়ে খুব কম। কিন্তু পরিস্থিতি আর তেমনটা থাকবে না। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী ক্রমেই উষ্ণ হয়ে উঠছে। পাশাপাশি খরাও বাড়ছে। এতে গাছের কার্বন শোষণের স্বাভাবিক যে প্রক্রিয়া, তা ধীরে ধীরে কমছে, ফলে পৃথিবী আরও উষ্ণ হবে।
গবেষণার ফলাফল নিয়ে এ অধ্যাপক বলেন, বৈশ্বিক এ খরার প্রভাবে প্রতিবছর প্রায় দশমিক এক শতাংশ অতিরিক্ত গাছ মারা যেতে পারে। এতে গাছ কমে যাওয়ায় সেসব গাছ কার্বন শোষণ করত, সেই পরিমাণ কার্বন প্রকৃতিতেই থেকে যাবে। আবার গাছ মরার পর পচে যাওয়া এসব গাছ থেকে অতিরিক্ত কার্বন নির্গত হবে। গাছের কাণ্ড বৃদ্ধি ও গাছের কার্বন শোষণে খরার প্রভাব এখনো সীমিত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন এ গবেষক।
জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এই স্থিতিশীলতা থাকবে না বলেও জানান গবেষক দল।
এএটি