কিছুক্ষণ আগেই আলো ফুটেছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। মেঘলা আকাশের হালকা আবরণ ভেদ করে মাঝে মাঝেই সূর্যের উঁকি।
সম্প্রতি এখানে এসেই দেখা হয়ে গেল আন্তর্জাতিক এবং জাতীয়ভাবে ‘মহাবিপন্ন’ একটি বিশেষ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর সাথে। বন এবং বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ নানানভাবে ধ্বংসের কারণে এই অস্তিত্ব আজ ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে।
সারারাতের ক্ষুধা দূর করতে সম্মিলিতভাবে গাছে গাছে ছড়িয়ে পড়েছে ‘চশমাপড়া হনুমান’র দল। গাছের ডালে বসে পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়ার সময় ওর লম্বা লেজটা ডালের ওপর দিয়ে ঝুলে থাকে। এ দৃশ্য বেশ মনোমুগ্ধকর!
একেকটা দলে অবস্থান করে থাকে এক ডজনের বেশি হনুমান। বাচ্চাকাচ্চার সংখ্যা হিসাবে ধরলে তাদের এ যোগফল প্রায় দুই ডজনের ধারেকাছে হয়তো চলে যাবে। একটি বিশাল বর্গক্ষেত্র জায়গাজুড়ে তখন চলছিল তাদের নিজস্ব প্রাতঃরাশ। অর্থাৎ সকালের নাস্তাপর্ব!
অপূর্ব ভঙ্গিমায় যে যেভাবে পারছে পাহাড়ি বনের পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে আপন মনে খাচ্ছিল হনুমানের দল। আরেকটিকে দেখা গেল এক লাফে এ গাছের ডাল থেকে অপর এক গাছের ডালে পৌঁছে গেল নিমেষেই।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন), বাংলাদেশের লাল-তালিকা অনুযায়ী চশমাপড়া হনুমান দেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতি। এদের ইংরেজি নাম Phayre's Leaf Monkey (ফায়ারর্স লিফ মাংকি)।
এরা দিবাচর এবং বৃক্ষবাসী। প্রধানত ওরা দলভুক্ত হয়েই থাকে। তবে কখনো জোড়ায় দেখা যায়। মোটা-সোটা আকৃতির একটি পুরুষ হনুমান পুরো দলের নেতৃত্বে থাকে।
গোলাকার চোখ এবং মুখের ওপরের অংশে বিস্তৃত সাদা রঙের সুস্পষ্ট বলয়ের জন্য এদের চশমাপড়া হনুমান বলা হয়। এদের পুরো শরীর ধূসরাভ এবং কালচে আবরণে আবৃত। প্রাপ্তবয়স্কদের মাথায় লম্বা চুলের টুপির মতো অংশ থাকে। এদের রয়েছে লম্বা আকৃতির লেজ। মাথাসহ দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৫ সেন্টিমিটার। প্রাপ্তবয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের দেহের রং একই রকম দেখতে। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে পাতা, ফুল, ফল, অঙ্কুর, কচি কাণ্ড প্রভৃতি।
বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের কয়েকটি চির সবুজ বনে ‘চশমাপড়া হনুমান’দের মাঝে মাঝে দেখা যায়। এরা সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের প্রজননকার্য সম্পন্ন করে।
বিবিবি/এএটি