আজ রাতের আকাশে অপেক্ষা করছে এক বিরল ও মনোমুগ্ধকর মহাজাগতিক দৃশ্য। পূর্ণিমার আলোয় ভেসে আসবে এক অনন্য রাত।
উপচ্ছায়া গ্রহণও থাকবে একই সঙ্গে। চাঁদের কাছাকাছি দেখা যাবে উজ্জ্বল দুই গ্রহ—শনি ও নেপচুন। এক রাতে এতগুলো মহাজাগতিক ঘটনা একসঙ্গে দেখা সত্যিই এক দুর্লভ সুযোগ, যা কেবল বছরে একবার কিংবা কখনো কখনো দশকেও একবার ঘটে।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন—এ দৃশ্য কি খালি চোখে দেখা যাবে? চোখের কোনো ক্ষতি হবে না তো? নাসা এবং অন্যান্য মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এসব প্রশ্নের উত্তর পরিষ্কারভাবেই দিয়েছেন।
নাসা বলছে, চন্দ্রগ্রহণের সময় সূর্যগ্রহণের মতো তীব্র ও ক্ষতিকর আলোর রশ্মি তৈরি হয় না। সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ও তীব্র আলো চোখে সরাসরি পড়লে তা চোখের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের আলো সূর্যালোক প্রতিফলিত হয়েই আমাদের চোখে পৌঁছে, যা একেবারেই কোমল ও ক্ষতি-রহিত। ফলে এই চন্দ্রগ্রহণ সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং এটি খালি চোখেই দেখা যাবে।
এই চন্দ্রগ্রহণটি আরো বিশেষ কারণ এটি হবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ, যেখানে চাঁদ পুরোপুরি পৃথিবীর ছায়ায় ঢেকে যাবে। এই সময় চাঁদের রং ধারণ করবে লালচে আভা, যাকে বলা হয় ‘ব্লাড মুন’ বা রক্তিম চাঁদ। এই রক্তিম চাঁদের পাশেই থাকবে সৌরজগতের দুটি রহস্যময় গ্রহ—শনি ও নেপচুন। শনি তার বিখ্যাত বলয়ের জন্য পরিচিত আর নেপচুন এক দূরবর্তী ও সৌন্দর্যময় গ্রহ, যাকে সাধারণত খালি চোখে দেখা যায় না। তবে আজ রাতের মায়াবী আলো ও আকাশের স্বচ্ছতা যদি সহায়ক হয়, তবে অনেকেই টেলিস্কোপ বা বাইনোকুলার দিয়ে এই গ্রহ দুটিকে খুঁজে পেতে পারেন।
এমন দৃশ্য আরও পরিষ্কার ও হৃদয়গ্রাহীভাবে দেখতে চাইলে খালি চোখের পাশাপাশি সহায়তা নিতে পারেন চশমা, বাইনোকুলার, ছোট টেলিস্কোপ কিংবা স্মার্টফোন ও ডিজিটাল ক্যামেরার। তবে প্রযুক্তি না থাকলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই—আজ রাতের প্রকৃতি নিজেই হয়ে উঠবে এক বিশাল প্রেক্ষাগৃহ, যেখানে চোখ রাখলেই মিলবে সৌন্দর্যের চূড়ান্ত রূপ।
সাধারণত এ ধরনের মহাজাগতিক দৃশ্য দেখা যায় নির্জন জায়গায়, যেখানে কৃত্রিম আলো কম। শহরের কোলাহল বা আলোর দূষণ না থাকলে আজ রাতের চাঁদ আরও রক্তিম, আরও প্রাণবন্ত লাগবে। খোলা ছাদ, মাঠ বা নদীর পাড়ে বসে রাতের আকাশে চোখ রাখলেই আপনি অনুভব করবেন—এই মহাবিশ্ব কত বিস্ময়কর, কত নীরব অথচ প্রাণময়।
তাই দেরি না করে এখনই প্রস্তুতি নিন। রাতের আকাশে চোখ রাখুন এবং ইতিহাসের অংশ হয়ে যান। এই দুর্লভ মহাজাগতিক দৃশ্য হয়তো আপনাকে চিরকাল মনে রাখার মতো একটি মুহূর্ত উপহার দেবে।
এএটি