ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য মানুষই দায়ী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৩
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য মানুষই দায়ী

ঢাকা: চরম মাত্রায় বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে দিনে দিনে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে পৃথিবী। পৃথিবীর এই নেতিবাচক পরিবর্তনের জন্য খোদ মানুষই দায়ী বলে নিশ্চিত হয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা।



বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির পেছনে মনুষ্যসৃষ্ট কারণই দায়ী বলে বিজ্ঞানীদের এ নিশ্চয়তার তথ্য জানিয়ে শুক্রবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ বিষয়ক আন্তঃসরকার সংস্থা ‘ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি)।

সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৫টি দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও পরিবেশ বিজ্ঞানীদের সপ্তাহব্যাপী সম্মেলনের পর শুক্রবার এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।

এর আগে, ২০০৭ সালে আইপিসিসির প্রতিবেদনে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মনুষ্যসৃষ্ট কারণই ‘খুব সম্ভবত দায়ী’ বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ক্রমেই পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি পাওয়ায় মাত্র ছ’বছরের মাথায় মনুষ্যসৃষ্ট কারণকে ‘অত্যধিক সম্ভবত দায়ী’ বলে নিশ্চিত করলেন আইপিসিসির বিজ্ঞানীরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৫০ সালের পর বিশ্বের পরিবেশের আচরণে যে নেতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে সেটা যে মনুষ্যসৃষ্ট কারণেই- এ ব্যাপারে ৯৫ ভাগ নিশ্চিত পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। পাশাপাশি উষ্ণতা বৃদ্ধির ব্যাপারে ভৌত প্রমাণাদিও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা জানান, ভূখণ্ডে, বাতাসে এবং সাগরে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রমাণ ‘স্পষ্টতর’ বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

এছাড়া, উষ্ণতা বৃদ্ধি ঠেকাতে গত ১৫ বছর ধরে কার্বন গ্যাস নিঃসরণ যে মাত্রায় কমানো গেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলেও জানানো হয় পরিবেশ বিজ্ঞানীদের এই প্রতিবেদনে।

২০০৭ সালের প্রতিবেদনে এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ৭ থেকে ২৩ ইঞ্চি পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবারের প্রতিবেদনে সমৃদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১০ থেকে ৩২ ইঞ্চি পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হল।

আইপিসিসির প্রতিবেদনে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, প্রয়োজন অনুযায়ী গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ  কমানো না গেলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়তেই থাকবে এবং পরিবেশের নিয়মকে পুরো পরিবর্তন করে দেবে।

আইপিসিসির ২০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের ৩৬ পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপে বলা হয়, গত ৬০ বছরে পৃথিবীর পরিবেশের যে নেতিবাচক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছে সেটা গত সহস্রাব্দের চেয়েও নজিরবিহীন।

এ ব্যাপারে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ বিষয়ক সংস্থা আইপিসিসির কার্য নিবার্হী দলের সহ-সভাপতি কিন দাহে বলেন, আমাদের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বায়ুমণ্ডল ও সমুদ্রপৃষ্ঠ উষ্ণ হয়ে উঠছে। দ্রুত বরফ গলে যাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতাও। একই সঙ্গে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে উদ্বেগজনক হারে।

স্টকহোমে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আরেক সহ-সভাপতি প্রফেসর থমাস স্টকার বলেন, ১৯৫০ সালের পর থেকে যে হারে উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তার অর্ধেকেরও বেশি কারণের জন্য সরাসরি মানুষই দায়ী।

উল্লেখ্য, পরিবেশ বিজ্ঞানীদের হুঁশিয়ারির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতার বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। তুলনামূলকভাবে সে লক্ষ্যে কিছুটা কার্বন গ্যাস নিঃসরণ কমানোও গেছে।

কিন্তু আইপিসিসির প্রতিবেদন বলছে, গত ১৫ বছরে যে মাত্রায় গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানো গেছে সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ কারণে বিশ্বকে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নতুবা শিগগির এই বিশ্ব বসবাস অনুপযোগী হয়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৩
এইচএ/আরকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।