ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

‘পানিপ্রিয়’ ইউরেশীয় কণ্ঠীঘুঘু 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২১
‘পানিপ্রিয়’ ইউরেশীয় কণ্ঠীঘুঘু  নির্জন জলাধারে গোসলে ব্যস্ত ইউরেশীয় কণ্ঠীঘুঘু। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

মৌলভীবাজার: পানি এবং বালু দুটোই ক্ষেত্রবিশেষে পাখিদের জন্য প্রিয়। এ দুটোতেই তারা গোসলে নেমে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

দূর করে পালকের কোণায় কোণায় জমে থাকা ক্লান্তি। মানুষ যেমন পানিতে গোসল করতে অভ্যস্থ, স্বস্তিবোধ করে-পাখিরাও তেমনি পানি এবং বালুতে মাখামাখি হয়ে সতেজতা লাভ করে।

চলতি পথে আমাদের চোখ হঠাৎই চলে যায় পাখিদের এমন আশ্চর্য গোসলের দিকে। নিজের মতো করে নির্জনতাটুকু পেলেই ওরা গোসলে নেমে পড়ে জলে।  

আমাদের প্রতিবেশী পাখি ‘ঘুঘু’র রয়েছে কয়েকটি প্রজাতি। এর মধ্যে ইউরেশীয় কণ্ঠীঘুঘু অন্যতম। অল্প জলে ছোট স্রোতে তারা চমৎকার ডানা ঝাপটানো ভঙ্গির মাধ্যমে নিজেদের পালক পরিষ্কারে ব্যস্ত থাকে বলে গবেষক জানান।

এ পাখিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক বলেন, পাখিবিজ্ঞানের পরিভাষায় Streptopelia Bonaparte ‘গণ’ হিসেবে ধরা হয় ঘুঘু’র প্রজাতিরগুলোকে। পৃথিবীতে এ গণের অর্ন্তভুক্ত ১৭ প্রজাতি ঘুঘু পাখি রয়েছে। তবে আমাদের দেশে মাত্র ৫ প্রজাতি ঘুঘু পাখির বিচরণ রেকর্ড করা রয়েছে।  তিনি আরো বলেন, ইউরোশীয় কণ্ঠঘুঘু বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। এদের ইংরেজি নাম Eurasian Collared Dove এবং Streptopelia decaocto পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম। পাখিটি অনেকটা কবুতরের মতো দেখতে। দৈর্ঘ্য ৩২ সেন্টিমিটার এবং ওজন ১৩৫ গ্রাম। পাখিটির ঘাড়ে কালো কণ্ঠী পড়া বলে এর ইংরেজি নামকরণ তা-ই হয়েছে।  

পাখিটির শারীরিক রঙের বৈচিত্র্য সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, ছেলে এবং মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন। এর পিঠের দিক সাদাটে ও দেহের নিচ দিক ফিকে বেগুনি-ধূসর। ডানাতলের ঢাকনি সাদা। ডানার প্রান্ত পালক কালচে এবং লেজের দুইপাশ সাদা ও লেজে উপপ্রান্তীয় দাগ থাকে। এদের চোখ গাঢ় লাল, চোখের পাতার কিনারা লাল ও চোখের গোলাকের ত্বক ধূসরাভ-বেগুনি। ঠোঁট বাদামি ও কালোয় মেখানো। পা এবং পায়ের পাতা নীল-লালে মেশানো এবং নখ কালো। তবে অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ঘাড়ে কণ্ঠী নেই।   

প্রাপ্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্যারাবন, উপকূলীয় এলাকা, আবাদি জমি, বনের প্রান্ত, বাগানের পথে প্রায়ই বিচরণ করে থাকে। কখনো কখনো লোকালয় অর্থাৎ গ্রামের নির্জন বিচরণ করতে দেখা যায়। আরো মজার ব্যাপার হলো, ইউরোশীয় কণ্ঠঘুঘু অন্যান্য প্রজাতির ঘুঘুদের দলে এসে যোগ দেয় এবং মাটি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে।  

এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে নানা ধরনের বীজ ও শস্যদানা। এরা সারাদেশেই আছে। সব বিভাগে সব জেলায় পাওয়া যায়। ভারত, শ্রীলংকা, নেপালসহ দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে বলে জানান পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।   

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২১
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।