ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

পেয়ারা বেচে সংসার চালায় ৮ বছরের তাইয়্যেবা

জিএম মুজিবুর, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০২২
পেয়ারা বেচে সংসার চালায় ৮ বছরের তাইয়্যেবা পেয়ারা বিক্রি করছে তাইয়্যেবা। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: যে বয়সে স্কুলে যাওয়ার কথা, খেলাধুলায় মেতে থেকে রঙিন স্বপ্নে বিভোর থাকার কথা, সেই বয়সে মাথায় তার চেপে বসেছে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের নিদারুণ যন্ত্রণা। কিশোরগঞ্জের বলাই চরপাড়ার নুর মিয়ার ৮ বছর বয়সী মেয়ে তাইয়্যেবা।

এই বয়সেই দিনমজুরের কাজ করছে শিশুটি।

তাইয়্যেবার ফ্যাকাসে মুখখানা যেন বলছে, ‘আমিও স্কুলে যেতে চাই’।

গত দুই মাস আগে কিশোরগঞ্জ থেকে মায়ের সঙ্গে ঢাকায় এসেছে তাইয়্যেবা। মিরপুরে নিজের মামার সঙ্গে শুরু করে দিনমজুরির কাজ। তাইয়্যেবা দিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা মামার ঠেলাভ্যানে করে পেয়ারা বিক্রির শুরু করে। প্রতিদিনই মিরপুর ১৪ নাম্বার এলাকার পেয়ারাভ্যানের সঙ্গে আসে তাইয়্যেবা।

ক’দিন আগেও যে নিজেই একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতো, সেই শিশুই এখন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার সামনে বসে অসহায়ের মতো পেয়ারা বিক্রি করে। ভ্যানের নিচ থেকে দাঁড়িয়ে এখনও ঠিকঠাক অনেক কিছুই ধরতে পারে। দাঁড়াতে হয় আলাদা টুল দিয়ে, সেই শিশুই কিনা নেমেছে জীবন সংগ্রামে।

তাইয়্যেবার হাসির কাছে শুধু তার শৈশবই হারিয়ে যায়নি, হারিয়ে গেছে তার হৃদয়ের যন্ত্রণা। শৈশবের নির্মমতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে জীবনের আঘাত থেকে নিজেকে সেরে তোলার যে চেষ্টা হয়তো অব্যাহত থাকবে। কিন্তু তার হৃদয়ের ক্ষত কে সারাবে? 
শৈশবের সব স্বপ্নকে ধারন করে রাখা দরিদ্রের কষাঘাতে পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তাআলোর মুখ দেখবে কিনা কে জানে!

মোহাম্মদ মহাসিন নামের একজন ফলবিক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, কিছু দিন ধরে দেখেছি এখানে মামার সঙ্গে পেয়ারা বিক্রি করে মেয়েটি। দেখে কষ্ট লাগে। এই বয়সে পড়াশোনা করার কথা ছিল তার। কিন্তু পারিবারিক কারণে হয়তো তাকে এই কাজ করতে হচ্ছে।

তাইয়্যেবার মামা তোফাজ্জলের বয়সও খুব বেশি নয়, বয়স হয়তো ২০ কি ২২।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তাইয়্যেবা আমার বোনের সঙ্গে গ্রামেই থাকত। সেখানে একটা স্থানীয় মাদ্রাসায় পড়ত। তার বাবা ঢাকাতে কনস্ট্রাকশনের কাজ করত। কিছুদিন আগে পড়ে গিয়ে তার হাত ভেঙে যায়। পরে বাধ্য হয়ে পরিবারের সবাই জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় চলে আসে। আমার মা-বাবা ও ওদের নিয়ে এখন ৫/৬ জনের সংসার। এখন আমাকেই দেখতে হচ্ছে সংসারটা।

তোফাজ্জল আরও বলেন, আমার নিজের দোকান নেই। বন্ধুর ভ্যানের ওপর আমি মাল বিক্রি করি। এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে খুব কষ্ট করেই সংসার চালাতে হচ্ছে। সকালে আমার বন্ধু ওর ভ্যানের ওপর মাল বিক্রি করে। তার শেষ হলে আমি ভ্যানটি ব্যবহার করি।  

আপনার সঙ্গে তাইয়্যেবা কেন? প্রশ্নে তোফাজ্জল বলেন, আমি যখন বাসা বা এদিক-ওদিক যাই তখন আমার ভাগ্নিকে (তাইয়্যেবা) রেখে যাই, কি আর করব বলেন?

তাইয়্যেবার অর্থাভাবে স্কুলে যেতে পারে না, যেখানে জীবন বাঁচাতে খাদ্যের যোগান পাওয়াই অনিশ্চিত সেখানে শিক্ষা কেবলই বিলাসী স্বপ্ন মাত্র তাইয়্যেবার কাছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০২২
এসএএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।