ঢাকা: ফিলিস্তিনের প্রয়াত নেতা ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যু নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে। মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের এক ল্যাবরেটরি দাবি করেছে, তারা ইয়াসির আরাফাতের পরিধেয় কাপড়ে অতিমাত্রায় প্রাণঘাতী তেজস্ক্রিয় পদার্থের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছেন।
সর্বশেষ পরীক্ষার ফলাফল এই ধারণাকেই প্রতিষ্ঠিত করছে, শরীরে উচ্চ মাত্রার তেজস্ক্রিয় পদার্ প্রবেশ করানোর কারণেই মৃত্যু হয়েছে ইয়াসির আরাফাতের ।
এদিকে ইয়াসির আরাফাতের স্ত্রী কবর থেকে আরাফাতের মৃতদেহ তুলে তদন্ত করার জন্য ফিলিস্তিনি কর্পক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
সুইজারল্যান্ডের লাসানেতে অবস্থিত রেডিওফিজিক্স ইন্সটিটিউটের বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রয়াত ফিলিস্তিনি নেতার পরিধেয় কাপড়ে প্রাণঘাতী তেজস্ক্রিয় পদার্থ পোলোনিয়াম ২১০’র উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েছেন তারা। তবে তারা উল্লেখ করেন, আরাফাতের দেহাবশেষের নমুনা পরীক্ষা করলেই কেবল বোঝা যাবে আসলে কি ঘটেছিলো।
উল্লেখ্য, আরাফাতের দেহের অবশিষ্টাংশের হাড়ের নমুনা পরীক্ষা করলেই কেবল তার শরীরে তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতি ও এর মাত্রার ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আকস্মিকভাবে অসুস্থ হয়ে প্যারিসের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর মারা যান ইয়াসির আরাফাত। আরাফাতের মৃত্যুর পর থেকেই তার অনুরাগীরা দাবি করে আসছিলো, তার মৃত্যু স্বাভাবিক উপায়ে হয়নি। ইসরায়েলিরাই আরাফাতকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করে বলে দাবি করে আসছেন তারা।
এর আগে একই রকমভাবে পোলোনিয়াম ২১০ প্রয়োগ করে স্বপক্ষত্যাগী রাশিয়ার সাবেক গুপ্তচর আলেক্সান্ডার লিতভিনেনকোকে লন্ডনে হত্যা করা হয়েছিলো। ধারণা করা হয় রুশ এসপিওনাজ এজেন্টরা সুপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
লাসানের ল্যাবরেটরিতে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য, ‘ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদই আরাফাতের মৃত্যুর জন্য দায়ী’ এ ধারণাকে আরো দৃঢ় করলো বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
ইয়াসির আরাফাতের পরিধেয় কাপড় নয় মাস আগে সুইজারল্যান্ডের লাসানের ওই ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করে কাতার ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। আরাফাতের বিধবা স্ত্রী সুহা আরাফাত কাপড়ের এ নমুনা আল জাজিরাকে সরবরাহ করেন।
ল্যাবরেটরির সর্বশেষ তথ্যের প্রেক্ষিতে পশ্চিমতীরের রামাল্লায় শায়িত ইয়াসির আরাফাতের মরদেহ কবর থেকে তুলে নতুন করে পরীক্ষা নীরিক্ষার জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান তার বিধবা স্ত্রী সুহা আরাফাত।
কবর থেকে মৃতদেহ তুলে এনে যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা করলেই তার স্বামীর মৃত্যু রহস্য উদঘাটন হবে বলে দাবি করেন সুহা আরাফাত।
এ প্রসঙ্গে সুহা আরাফাত বলেন , পরীক্ষার ফলাফল যাই আসুক না কেন, এর ফলে তার মৃত্যুতে সৃষ্টি হওয়া রহস্যের অবসান ঘটবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘আমি বিশ্বাস করিনা আমার স্বামীর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। ফিলিস্তিনি জনগণ, আরববিশ্বের সাধারণ জনগণ এবং সারা বিশ্বের আরাফাত অনুরাগীদের প্রতি অন্তত আমার পক্ষ থেকে বলার কিছু আছে। তার মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়নি ,তাকে হত্যা করা হয়েছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। ’
সুহা আরাফাতের আবেদন সত্ত্বেও ইয়াসির আরাফাতের মৃতদেহ কবর থেকে তোলার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। তাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখনও কিছু বলা হয়নি।
তবে কবর থেকে তোলা হলেও মৃতদেহের অবশিষ্টাংশ পশ্চিম তীরের বাইরে নিতে হলে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। যা পাওয়া সহজসাধ্য হবে না বলেই ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১২
সম্পাদনা:রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর