নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): চারদিকের দুনিয়া এখন সদাব্যস্ত। মোবাইল-ইন্টারনেটনেটের সন্তরণশীল জাল ক্রমশ সমগ্র বিশ্বকে গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত করে চলেছে।
এসব সমস্যার চটজলদি এবং একটিমাত্র ডিভাইসে সমাধান করেছেন ময়মনসিংহের তরুণ গবেষক রায়হান উদ্দিন সরকার। একসাথে একাধিক অপারেটরের মোবাইল ফোনের একাউন্ট রিচার্জের আধুনিক এক প্রযুক্তিগত নকশা উদ্ভাবন করেছেন তিনি। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহক ইচ্ছে করলে নিজেই তার ফোনের একাউন্ট রিচার্জ করে নিতে পারবেন বলে জানান তিনি।
গবেষক রায়হান উদ্দিন সরকার বাংলানিউজকে জানান, রিচার্জ সেন্টারগুলোর ব্যস্ততা কমানোর জন্যে সহায়ক এ প্রযুক্তিতে গ্রাহকরা সরাসরি যুক্ত হতে পারবেন। এখন যেমন মোবাইল ফোনে টাকা রিচার্জ করতে হলে নির্দিষ্ট দোকানে রক্ষিত টালি খাতায় ফোন নাম্বার ও টাকার পরিমাণ লিখে দিতে হয়। এরপর দোকানদার ফোনের সেই নাম্বার ও টাকার পরিমাণ অন্তর্ভুক্ত করে রিচার্জের জন্য এসএমএস পাঠান। কিন্তু রায়হানের উদ্ভাবন করা প্রযুক্তিতে গ্রাহক সরসরি দোকানে রক্ষিত কি-বোর্ডের মাধ্যমে নিজের সেল নাম্বার ও টাকার পরিমাণ টাইপ করে দেবেন। আর দোকানদার শুধু তা সেন্ড করে দেবেন। এতে একটি মেশিনেই সবগুলো অপারেটরের রিচার্জ সেবা দেওয়া যাবে।
রায়হান জানান, বিভিন্ন ফোন কোম্পানির সিম কার্ড একত্রে এক মেশিনে ব্যবহার করে রিচার্জ (মোবাইল একাউন্টে টাকা লোড করার পদ্ধতি) সেবা প্রদান করার পদ্ধতি এখনও সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি। উন্নত দেশগুলোতে মোবাইল ফোন একাউন্ট রিচার্জ করার অগ্রসর প্রযুক্তি থাকলেও তৃতীয় বিশ্ব তথা বাংলাদেশে মোবাইল ফোন রিচার্জ করার একক প্রযুক্তি ব্যবহারের কোনও পদ্ধতি নেই বললেই চলে।
তিনি উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মডেলটি নিয়ে ময়মনসিংহের নান্দাইল, ঈশ্বরগঞ্জ ও গৌরীপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানের কমপক্ষে শতাধিক মোবাইল রিচার্জ সেন্টারে গিয়ে প্রায়োগিক পরীক্ষা চালিয়েছেন। সেবক ও গ্রাহকদের মধ্যে বর্তমান রিচার্জ পদ্ধতি ও তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তির রিচার্জ বিষয়ে মতামত জরিপ করেছেন।
রির্চাজ মেশিনটির বৈশিষ্ট্য: সহজে মেশিনটি ব্যবহারের জন্যে রয়েছে চমৎকার অপারেটিং ব্যবস্থা। কম্পিউটারের মনিটরের মতো এ মেশিনে রয়েছে একটি চমৎকার ডিসপ্লে। পরিচালনার জন্যে রয়েছে একটি কী-বোর্ড।
রায়হান জানান, প্রত্যেক ফোন অপারেটরের নাম ও লোগো মেশিনটির ডিসপ্লেতে দেখা যাবে। এমনকি টাকার পরিমাণও দেখা যাবে। গ্রাহক তার মোবাইল নম্বর ও রিচার্জের পরিমাণ কী-বোর্ডের বোতাম টিপে প্রবেশ করিয়ে সেবা প্রদানকারীকে জানিয়ে দিবে। সেবা প্রদানকারী গোপন কোড নম্বর দিয়ে একাউন্ট রিচার্জ সম্পন্ন করে দেবে। নিয়মিত গ্রাহক ইচ্ছে করলে মেশিনটিতে নিজের মোবাইল নম্বর ও ছবি সংরক্ষণ (সেভ) করে রাখতে পারবে। মেশিনটি ব্যাটারিতেও চালানো যাবে। এতে আছে একত্রে বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানির সিম রাখার জন্যে একটি সিম বক্স বা মাল্টি মডেম।
কথা বলার ক্ষেত্রেও যন্ত্রটি ব্যবহার করা যাবে। এর দরকারি সফটওয়্যার কম্পিউটারে ইনস্টলেশন করে কম্পিউটারেও মোবাইল রিচার্জ করা যাবে।
মেশিন ব্যবহারে সুবিধা: এই ধরনের একটি মেশিনে যে সব সুবিধা পাওয়া যাবে তাতে রিচার্জ সেবাদানকারী দোকানে একাধিক মোবাইল ফোন সেটের প্রয়োজন নেই। রেজিস্টার খাতা ব্যবহার ও হিসাব মিলানোরও প্রয়োজন নেই।
এ রিচার্জ মেশিন ব্যবহারে গ্রাহক ও সেবাদানকারীদের মধ্যে কোনো বিড়ম্বনা থাকবে না। কোন অভিযোগ থাকলে সাথে সাথে ফলাফলও দেখা যাবে। মোবাইল মেশিনে ১০টি সিমের সংযোগ থাকলে ১০টি সীমের টাকার পরিমাণ আলাদা আলাদা অথবা একত্রেও দেখানো সম্ভব। কতজনকে কী পরিমাণ রিচার্জ দেওয়া হয়েছে তাও দেখানো সম্ভব।
এ মেশিনের মাধ্যমে নিয়মিত গ্রাহকের ছবি, নম্বর, নাম সেভ করে রাখলেও অল্প টাইপ করলে ডিসপ্লেতে ছবি, নম্বর, নাম ভেসে উঠবে। তাছাড়া এফএম রেডিও, ইন্টারনেট সংযোগ, একাধিক ফোন কেবিন তৈরি করে তারবিহীন হেডফোন সংযোগ, ভিডিও কনফারেন্স, কমপক্ষে এক মাসের তথ্য ও রেজিস্টার ডকুমেন্ট, আর্কাইভে সংরক্ষিত করে রাখা, ডেবিট কার্ড বা মাস্টার কার্ড দ্বারাও মোবাইল রিচার্জ করা, ড্রাফ্ট অপশনে অটো মোবাইল রিচার্জ করা, এক সাথে একাধিক ফোনের রিচার্জ করে মনিটরে সাথে সাথে হিসেব দেখা অথবা হিসেব প্রিন্ট করে দেখা ইত্যাদি যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব।
এ বিষয়ে গবেষক রায়হান উদ্দিন সরকার আরও বলেন, মোবাইল রিচার্জ সার্ভিস সেন্টারে এ ধরনের মেশিন থাকলে তুলনামূলক ভাবে সময়ের অপচয় ও পরিশ্রম কম হবে। কাজের শৃঙ্খলা থাকবে। সঠিক হিসেব থাকবে এবং পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করার সুযোগ বাড়বে ।
গ্রামীণ ফোন, বাংলালিংক, রবি, সিটিসেল, টেলিটক, এয়ারটেল ইত্যাদি কোম্পানি এগিয়ে এলে মোবাইল ফোন রিচার্জ মেশিনটি দ্রুত বাজারজাত সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সন্তান রায়হান উদ্দিন সরকার একটি ইংরেজি দৈনিকের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। তার উদ্ভাবিত এ মেশিন তৈরিতে ল্যাব সহায়তা দিয়েছে ক্রিয়েটিভ অ্যাসোসিয়েশন ও এসিক অ্যাসোসিয়েশন নামে দুটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
এছাড়াও ভোটার তালিকার ওপর গবেষণা করে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার মডেল তিনিই প্রথম এদেশে তৈরি করেছিলেন বলে দাবি করেন। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটময় সময়ে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকার বিষয়ে তার গবেষণার বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন ইংরেজি দৈনিক নিউ নেশন-এ প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ সময় : ১৬৩৬ ঘণ্টা, ০৮ জুলাই, ২০১২
সম্পাদনা : আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর