বাংলাদেশের অনেক তরুণই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিজেদের কর্মদক্ষতায় সফল হচ্ছেন। এদেরই একজন সাদিয়া জাফরিন।
এবারে জাফরিন আলোচনায় এসেছেন বলিউড নির্মিত ছবি ‘এক থা টাইগার’ ছবির পোস্টার ডিজাইন করে। তাদের নিজেদের তৈরি প্রতিষ্ঠান ‘লন্ডন ডিজাইন হাউজ’-এর ক্রিয়েটিভ বিভাগের প্রধান হিসেবে এ ছবির যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রচারণার জন্য পোস্টার ডিজাইন করেন। ভবিষ্যতে প্রযোজক হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
এতে করে বাঙালিদের আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছেন সাদিয়া জাফরিন। শুধু গ্রাফিকই নয়, এ সময়ে তিনি নাট্যনির্দেশক হিসেবেও বাংলাদেশ গণমাধ্যমে বেশ জনপ্রিয়।
সম্প্রতি জাফরিন বাংলাদেশে বেড়াতে এসেছেন। উত্তরায় তার নিজস্ব বাসভবনে দীর্ঘক্ষণ আলাপ হয় তার সঙ্গে। এতে উঠে এসেছে তার কাজের আগ্রহ, গ্রাফিক ডিজাইনের বর্তমান সমস্যা এবং বলিউডের কাজ পাওয়ার প্রসঙ্গও। সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
গ্রাফিক ডিজাইনিং বিষয়ে আগ্রহ কীভাবে তৈরি হলো?
আমি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছি। কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ার সময় এ আগ্রহটা তৈরি হয়। আমাদের একটা সাবজেক্ট ছিল কম্পিউটার গ্রাফিকের ওপর। ‘সি প্রোগ্রামিং’ দিয়ে গ্রাফিকের কাজ করতে হতো। ক্লাস নিতেন আমাদের একজন শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার স্যার। প্রশিক্ষণটা একটু কঠিন হলেও কোড করে গ্রাফিক করতে ভালোই লাগতো।
তখনই অ্যানিমেশন দেখে নিজেরাই বিস্মিত হতাম। চিত্রকৌশল (ফর্মুলা) ব্যবহার করে যে গ্রাফিক তৈরি হতো সেটা নিজে তৈরি করার পর তা দেখে মুগ্ধ হতাম। ভালোও লাগতো।
তবে আমি গদবাধা প্রোগ্রামিং নিয়ে কখনই আগ্রহী ছিলাম না। প্রতিদিন নিত্যনতুন কিছু করতে ভালো লাগতো। সোজা কথায় আমার খেলতে মজা লাগতো।
পরে এ আগ্রহের বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে গেলেন কীভাবে?
ইউনিভার্সিটি থেকে বের হওয়ার পর ইন্টারনি করলাম। চাকরিও পেলাম। একটা প্রতিষ্ঠানে আইটি ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করলাম। কিন্তু আগ্রহ পেতাম না। আমার আগ্রহ ছিল গ্রাফিকের দিকেই। তাই ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করতাম। বাংলাদেশে তো তখন ওয়েবসাইটের ধারণা একেবারেই নতুন। অনেকে আবার বোঝেনও না।
যেখানে কাজ শুরু করলাম সে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট আমি নিজেই বসে বসে বানিয়ে ফেললাম। অফিসের সবাই দেখে তো অবাক।
এগুলো কিন্তু নিজে নিজেই শিখেছি। ইউনিভার্সিটি তো দেখিয়েছে, কীভাবে শিখতে হয়। শেখার কাজটা তো নিজের ওপর। আমার আগ্রহ ছিল। তাই বিষয়গুলো ঘেটে ঘেটে শিখে ফেলেছি।
অফিসের ওয়েবসাইট তৈরি পর অনেকেই যোগাযোগ করা শুরু করল। তখন তাদের সাইটগুলোও তৈরি করে দিতাম। এতে একটা লাভ হলো, আমি এক্সপেরিমেন্ট করতে পারছিলাম।
এভাবেই শুরু। তারপর তো লন্ডন চলে গেলাম।
এটা কোন সময়ের ঘটনা?
এটা ২০০০ সালের আগস্ট মাসে কথা। আমার পড়াশোনা শেষ হলো ১৯৯৯ সালে।
মাস্টার্স করেই গেছেন?
না। মাস্টার্স করেছি লন্ডনে। আন্ডারগ্রেডের পর তো বিয়ে হয়ে যায়। তারপর লন্ডনে চলে যাই। সেখানে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে গ্রাফিকের ওপর মাস্টার্স করি।
ক্যারিয়ারটা গ্রাফিকের দিকেই নিয়ে যাবেন, এমন সিদ্ধান্তটা কখন নিলেন?
আসলে আমি যখন লন্ডন গেলাম তখন ইচ্ছা ছিল মাস্টার্স কম্পিউটার সায়েন্সেই করবো। বা টেলিকমিউনিকেশন। লন্ডন যখন গেলাম তখন দেখলাম আমার বাসাটা সেন্ট্রাল লন্ডনের কোপেনগার্ডেনে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে আমার বাসা ১০ মিনিটের রাস্তা।
ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে দেখি গ্রাফিক ডিজাইনিংয়ের ওপর মাস্টার্স আছে। তাই গিয়েই ভর্তি হলাম। সেটা ২০০১ সাল। তারপর তো ২০০৩ সালে শেষ হয়ে যায়।
শুনেছি লন্ডনে আপনার একটা প্রতিষ্ঠান আছে। সেটা কখন শুরু করলেন?
সেটা তো পড়াশোনা করার সময়ই শুরু করে দিয়েছিলাম। প্রথমে আমরা সার্ভার সাপোর্ট দিতাম। আমার স্বামী অনেক আগে থেকেই সেখানে সার্ভার সেটআপ দিচ্ছিল। তাদের ইচ্ছা ছিল সেখানে বাংলাদেশের জন্য একটা ডাটাসেন্টার করার।
পরে আমি যাওয়ার পর ভাবলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে হোস্ট করাতে আগ্রহী করে তুলতে হবে। আমাদের পরিচিত একজন বন্ধু বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানে ছিল। তাকে বললাম, তোমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে হোস্ট কর। কারণ বাংলাদেশের কোনো সার্ভারে হোস্ট হলে, ওয়েবসাইট অনেক ধীরগতির হয়। তাই বাংলাদেশের বাইরে করলে ওয়েবসাইট ভালো গতি পাওয়া যায়।
তারা বিষয়টি বুঝে আমাদের সার্ভারে হোস্ট হলো। তাদের মাধ্যমেই দেশে আমাদের একটা ভালো যোগাযোগ তৈরি হয়। বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান এমনকি মিডিয়াগুলোর অনেকেই আমাদের সার্ভারে হোস্ট করেছে। এভাবেই আস্তে আস্তে আমাদের ব্যবসাটা এগিয়ে যাচ্ছিল।
এর মানে শুরুতে সার্ভারে হোস্ট করানোটাই আপনাদের লক্ষ্য ছিল।
হ্যা। শুরুতে টার্গেট এটাই ছিল। পরে আস্তে আস্তে ওয়েবসাইট ডিজাইনিংয়ের দিকে ঝুঁকে যাই। কারণ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং দরকার। এজন্য তো ওয়েবসাইট গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আবার শুধু ওয়েবসাইট হলেই হবে না।
এটাকে আকর্ষণীয় করে তৈরি করতে হবে। সব তথ্য-উপাত্ত আপডেট থাকতে হবে। শুরুতে এগুলো নিয়ে খুব যুদ্ধ করতে হয়েছে। তারপরও সবাইকে বোঝাতে চাইতাম ওয়েবসাইট খুবই জরুরী।
এটা তো আপনি ২০০০ সালের দিকের কথা বলছেন। তখন তো বাংলাদেশেও ওয়েবসাইটের প্রচলন সেভাবে গড়েই ওঠেনি। খুব বড় প্রতিষ্ঠান ছাড়া তো ওয়েবসাইট নিয়ে কেউই তেমন ভাবতো না।
বাংলাদেশে তো তাও ধারণা ছিল। বিশ্বাস করবেন না লন্ডনের মতো আধুনিক শহরে বাংলাদেশি হোটেলগুলোর কাছে গিয়ে ওয়েবসাইটের কথা বলি। আশেপাশের পরিচিত হোটেলগুলোতেও গেছি।
নিজেরাই সেখানে গিয়ে বুঝিয়েছি। বোঝাতে চেয়েছি ওয়েবসাইটের গুরুত্ব। তাদের বলতাম, ওয়েবসাইট থাকলে বিক্রি বাড়বে। কিন্তু তারা কেউই তেমন আগ্রহ দেখাতো না। তারা বলত, ওয়েবসাইট দিয়ে কি হবে? অথচ দেখুন, এ সময়ে লন্ডনের যেকোনো ব্যবসার প্রধান শর্ত হচ্ছে, ওয়েবসাইট। এটা নেই তো ব্যবসা নেই।
লন্ডনে এ অবস্থা?
চিন্তা করেন! ভাবা যায় এ বিষয়টা? আমরা তো প্রেজেন্টেশন বানিয়ে নিয়ে যেতাম। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের গুরুত্ব বোঝাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে।
এখন তো প্রেক্ষাপট অনেক বদলে যাওয়ার কথা।
এখন বদলে গেছে এবং বিস্ময়কারভাবে বদলেছে। তখন তো শুধু ওয়েবসাইট তৈরি করলেই হতো। কিন্তু এখন সৌন্দর্য্যরে বিষয়টা জুড়ে গেছে। ইউজার ফ্রেন্ডলি কনসেপ্ট তৈরি হচ্ছে।
এ পরিবর্তনের সঙ্গে তো আপনাকেও আপডেট হতে হয়েছে।
নিজেকে আপডেট না করলে তো মার্কেটে টিকে থাকাই সম্ভব না। আমরা তখন ধীরে ধীরে ভাবলাম, এবার ওয়েবসাইটে অ্যানিমেশন যুক্ত করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য লোগোর গুরুত্ব দিতে হবে। এসব নিয়ে কাজ শুরু করলাম।
বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং কনসেপ্ট আমাকে বিস্মিত করতো। মানুষ কেন কোকাকোলার লোগো চেনে? কেন আরমানি এতো জনপ্রিয়? ঠিক কি পদ্ধতি ওরা অবলম্বন করে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমি পড়াশোনা করতাম।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যুগের চাহিদা কি? আপনি যে সমাজে থাকছেন সেখানে লোকজন কি চায়? এ বিষয়টা যদি আপনি ধরতে পারেন তাহলেই মার্কেটিংয়ে আপনি এগিয়ে যাবেন। আমি এখনও এ বিষয়গুলো খেয়াল করি।
বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং কনসেপ্ট নিয়ে আপনার কি মনে হয়?
সত্যিকার অর্থে এখন হয়তো অনেকেই ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করছে। তবে এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। লন্ডনে গিয়ে আমি দেখলাম, বিভিন্ন শপ বা ব্র্যান্ডের দোকানগুলো তিনমাস পরপর নিত্যনতুন ডিজাইন নিয়ে আসে। বিজ্ঞাপনের বিষয়ে তারা অত্যন্ত সোচ্চার থাকে। মানুষকে জানায়। ধরেন, গ্রীষ্মকালীন সময়ে তারা গরমের জন্য নতুন পণ্য বাজারে নিয়ে আসলো। সেটার জন্য তাদের কর্মীও থাকে। চাকরির বাজারও তৈরি হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট ডিজাইনার কিংবা ‘আইডিয়া মেকার’ থাকে। এটি তো বাংলাদেশে মনে হয় না আছে। তবে বাংলাদেশ এখন এ বিষয়গুলো বুঝতে পারছে। ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে।
আপনি তো লন্ডনে কাজ করছেন। বাংলাদেশে গ্রাফিক নিয়ে কি কখনও কাজ করেছেন?
না করিনি। তবে করবো। আপনি হয়ত জানেন, আমি বাংলাদেশের বেশ কয়েকটা নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখেছি। এটা আমার শখের একটা কাজ। এটা নিয়ে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটার কথা বলতে চাই। কারণ আমি এখন যাই করি না কেন সেই আত্মবিশ্বাসটা ইউনিভার্সিটি আমার মধ্যে তৈরি করেছে।
ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে থাকার সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমি স্ক্রিপ্ট লিখতাম। একদম শখ থেকেই লিখতাম। আমাদের সময়ে আইইউবিতে প্রবাল দা ছিলেন। দেবাশীষ বিশ্বাস ছিল। তারা তো এখন মিডিয়াতে অনেক পরিচিত মুখ। তাদের সাহায্য করতাম। যাইহোক, আমি চিন্তা করছি ভবিষ্যতে নিজের লেখা নাটকগুলোতে গ্রাফিকের কাজ করবো।
লন্ডনে বসে বাংলাদেশ মিডিয়াতে কাজ করছেন। এটা কিভাবে সম্ভব হলো?
গ্রাফিক কাজটা গণমাধ্যমের সঙ্গে জড়িত। লন্ডনে ‘সি চ্যানেল’ বলে বাংলাদেশি চ্যানেল আছে। তারা আমাকে একদিন বলল, তোমার যদি বাংলাদেশে পরিচিত কেউ থাকে, তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশি নাটক আনা যায় কি না একটু দেখো।
আমার সঙ্গে তখন বাংলাদেশ মিডিয়ার নাটক পাড়ার অনেকের সঙ্গেই বন্ধুত্ব। তখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। নাটক তখন দেখতাম না। ওই কাজটা করতে গিয়ে মনে হলো, বাংলাদেশে অনেক নাটক হচ্ছে। কিন্তু স্ক্রিপ্ট খুবই দূর্বল। তো, এগুলো নিয়ে বাংলাদেশি বন্ধুদের সঙ্গে ফেসবুকে আলোচনা হতো। তারা তখন বলতো, তুই তাহলে লিখে পাঠা। ওইভাবেই শুরু হয়ে গেল। যোগাযোগ তৈরি হলো। নাটকের স্ক্রিপ্ট লেখার কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেলাম।
বাংলাদেশেও সিনেমায় পোস্টার কিংবা বিলবোর্ড ডিজাইন করা একটা ভালো কাজের জায়গা হতে পারে...
অবশ্যই হতে পারে। বাংলাদেশে হয়ও। কিন্তু পুরোপুরি প্রফেশনাল হয় না। করতে হয় তাই করে। কিন্তু কোনো কাজের জন্য গবেষণা একেবারেই হয় না। বাংলাদেশের মানুষ আসলে কোন ডিজাইনটা পছন্দ করবে, এটা ভেবে করে না। যদি কেউ করে, তাহলে অবশ্যই এটা কাজের জন্য অত্যন্ত ক্রিয়েটিভ একটা জায়গা।
শুধু সিনেমা না। নাটকও তো হচ্ছে। নাটকগুলোর জন্যও তো পোস্টার হতে পারে। প্রচারণার বিষয়টা কেন যেন বাংলাদেশে আমলেই আসছে না। এমনকি ফেসবুক কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষ এখন বিনামূল্যে প্রচারণা করতে পারে। সেখানেও তারা করছে না। প্রচারণার অভাবে অনেক ভালো ছবি কিংবা নাটক মানুষের আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।
এজন্য কি করা যায়?
শক্ত ভীত গড়তে হবে। পড়াশোনার বিষয়টি নিয়ে আসতে হবে। ক্রিয়েটিভ দিকগুলো নিয়ে কটা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ায়? আমি তো মনে করি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে আসা উচিত। ফিল্ম নিয়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু হয়েছে। কিন্তু তারা কি পূর্ণাঙ্গভাবে ফিল্মের সব বিষয় নিয়ে পড়ায়? আবার পড়লেই তো হবে না। কাজের সঙ্গে পড়তে হবে। কারণ হাত তো পাকাতে হবে। তাই একাডেমিক ভীত মজবুত করার জন্য কাজ করতে হবে। এরপরই প্রফেশনালিজম তৈরি হবে।
দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেও বাংলাদেশে প্রফেশনালিজম তৈরি হয়নি। এটাই কি আপনি মনে করেন?
কাজ কিন্তু বাংলাদেশে ভালো হচ্ছে। তবে সেটা বিচ্ছিন্নভাবে। স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে যারা ভালো কাজ করছে তারা টিকছে ঠিকই। আবার অনেকে খারাপ কাজ করেও টিকে যাচ্ছে। এটা তো ঠিক না। সেজন্য প্রফেশনালিজম থাকা দরকার। ভালো কাজকে মার্কেটে টিকিয়ে রাখা আমাদেরই দায়িত্ব।
নির্দিষ্ট চাকরির মধ্যে থেকে ক্রিয়েটিভিটি বের করে আনা কষ্টের। আপনার অফিস ৯টা থেকে ৫টা। এরপর আপনি অফিস থেকে বের হয়ে গেলেন। গন্ডির ভেতর থেকে কখনও ক্রিয়েটিভ কাজ করা সম্ভব না। অথচ আমাদের ক্রিয়েটিভিটি দেখাতে হবে এ সময়ের মধ্যেই। এটা খুব কঠিন। আমি তো বলতে চাই, এটা সম্ভবই না। ক্রিয়েটিভ কাজের জন্য দরকার মুক্ত দুয়ার। শৃঙ্খলতার মধ্যে ক্রিয়েটিভ কাজ করা অসম্ভব। এখন এটাকে কি আপনি প্রফেশনালিজম বলবেন না? একজন ক্রিয়েটিভ মানুষকে স্পেস দেওয়াটাও ওয়ান কাইন্ড অব প্রফেশনালিজম। বাংলাদেশে যে স্পেসটা দেওয়া হয় না বলে আমার মনে হয়।
ভবিষ্যতে কি করবেন? দেশে ফেরত আসবেন?
আমার কোনো কাজই ভবিষ্যৎ চিন্তা করে হয়নি। কাজ করছি। যেভাবেই জীবনের বাঁক বদলাচ্ছে আমিও সেদিকেই যাচ্ছি। একদম চিন্তা ভাবনা করে ভবিষ্যৎ ভেবে ভেবে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে আমি কখনই না।
আর দেশে ফেরত আসার কথা কেন আসবে? আমি তো লন্ডনে বসেই দেশের কাজ করছি। আমি নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখছি। প্রযোজনা করছি। দেশের জন্য কাজ করতে হলে দেশে বসেই করতে হবে এমন তো না। বাইরে বসেও করা যায়। বরং ভালো মতই করা যায়। নিজের কাজের একটা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া যায়। এতে দেশের পরিচিতও বাড়ে।
আপনাকে কি কেউ প্রশ্ন করে, কম্পিউটার সায়েন্সে পড়েও কেন ক্রিয়েটিভ দিকে চলে গেলেন?
প্রথমত হলো, গ্রাফিক হলো কম্পিউটার সায়েন্সেরই অংশ। আর শুরুতেই বলেছি, কম্পিউটার সায়েন্সের পড়তে গিয়ে গ্রাফিকের প্রতি আগ্রহ জন্মেছে। আর শেষ কথা হলো, বিশ্বের প্রতিটা বিষয় প্রযুক্তিনির্ভর। আপনার প্রতিটি কাজ অবশেষে প্রযুক্তির কাছেই পূর্ণতা পাবে। সেখানে আমি সৌভাগ্যবান। কারণ ক্রিয়েটিভ কাজ এবং প্রযুক্তি দু জায়গাতেই আমি খেলতে পারি।
যারা গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে কাজ করতে চায়, তাদের জন্য কিছু বলবেন?
শুধু গ্রাফিকের জন্য না। যেকোনো বিষয়ের জন্যই আমি বলব, কাজ করো। কাজ করতে গেলেই শেখা যায়। বই পড়ে জ্ঞানী হওয়া যায়, দক্ষ হওয়া যায় না। দক্ষতার জন্য দরকার কাজ করা। নিজের কাজ করতে গেলেই নানান সমস্যায় পড়তে হবে। সেসব সমস্যা থেকে বের হওয়ার পদ্ধতিগুলোই দক্ষ করে তুলবে।
আগে মানুষ সুযোগের অপেক্ষায় থাকতো। অপেক্ষায় থেকে লাভ নেই। নিজের সুযোগ নিজেকেই তৈরি করে নিতে হবে। কারণ বাংলাদেশে সুযোগের অভাব নেই।
আপডেট: ২২৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১২
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১২
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর