ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ঘুড়ি যখন ভিলেন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৩৬, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১২
ঘুড়ি যখন ভিলেন

কলকাতায় আকাশে ওড়া ঘুড়ি আর মাটিতে ছোটা রেলগাড়ির মধ্যে এমনিতে তেমন সম্পর্ক থাকার কথা নয়। কিন্তু ঘুড়ির সুতোর মাঞ্জা যে ট্রেন আটকে দিচ্ছে, সেই তথ্য হতবাক করে দিয়েছে সবাইকে।



পূর্ব রেলের শিয়ালদহ বিভাগে গত এক সপ্তাহে ওভারহেড তারে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ফলে অন্তত চার বার ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা এর আগেও যে হয়নি, তা নয়। তবে ইদানীং এই সমস্যা বেড়েই চলেছে। কেন এমন হচ্ছে, জানতে নজরদারির দায়িত্ব পড়ে শিয়ালদহ বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের ওপর। আর ওই সব ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে যা জানতে পারেন, তাতে হতভম্ব হয়ে যান তারা।

রেলের ওভারহেড তারে ঘনঘন বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের নেপথ্যে রয়েছে ঘুড়ির সুতো এবং তার মাঞ্জা। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, ঘুড়ি ওড়ানোর বদলে যাওয়া কায়দাকানুনই ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে ট্রেনযাত্রায়। কাগজের ঘুড়ির জায়গা নিয়েছে প্লাস্টিকের ঘুড়ি। আর ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য সাধারণ সুতোর বদলে সেখানে এসে গিয়েছে প্লাস্টিকের সুতো। কাচগুঁড়োর মাঞ্জার জায়গায় এসেছে লোহাচুর এবং অ্যালুমিনিয়াম। সেই সঙ্গে খুব ভাল আঠা।
লোহা বিদ্যুতের ‘সুপরিবাহী’ মাধ্যম। সেই কারণে লোহাচুর মেশানো ঘুড়ির সুতো রেলের ওভারহেড তারে লেগে যাওয়ায় মাঝেমধ্যেই শর্ট সার্কিট হচ্ছে। আটকে যাচ্ছে ট্রেন। ওই সুতো এতই শক্ত যে, টানাটানি করেও সহজে ছেঁড়া যায় না। অনেক ক্ষেত্রে ঘটছে উল্টো বিপত্তি। ঘুড়ির সুতো টেনে সরাতে গেলে প্যান্টোগ্রাফে (ওপরে টানা তার থেকে ট্রেনে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়ার যন্ত্র) পেঁচিয়ে যাচ্ছে। ফলে ওভারহেড তারও যাচ্ছে ছিঁড়ে।

সম্প্রতি বিধাননগর ও শিয়ালদহের মধ্যে কাঁকুড়গাছি ও গুরুদাস হল্টের কাছে, বজবজ ও নুঙ্গির মাঝখানে এবং সোনারপুর ও বারুইপুরের মধ্যে ওভারহেড তারে ঘুড়ির সুতো আটকে গড়ে ১৫ মিনিট করে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। কারণ, কোনওভাবে একটি ট্রেন কোথাও দাঁড়িয়ে গেলেই লোকাল ট্রেন চালানোর স্বাভাবিক ছকটা ভেঙে যায়। স্বাভাবিক হতে সময় লাগে।

আগামী সোমবার বিশ্বকর্মা পুজো। ঘুড়ি ওড়ানোর দিন। রেলকর্তারা তাই উদ্বিগ্ন। রেলের পক্ষ থেকে পোস্টার, ব্যানার লাগিয়ে কিশোর ও যুবকদের প্রতি আবেদনের পালা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, ঘুড়ি ওড়ানো আনন্দের। কিন্তু কিছু মানুষের সেই আনন্দের জন্য বহু লোকের হয়রানি হচ্ছে। ক্ষতি হচ্ছে রেলেরও। রেললাইনের পাশে ঘুড়ি ওড়ানোর ক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। লোহাচুর মেশানো সুতো ওভারহেডের দুই তারে একসঙ্গে লেগে গেলে যে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে, তারও বিপদের আশঙ্কা রয়েছে। তাই ঘুড়ি ওড়ানোর ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা দরকার। তাতে সকলেরই মঙ্গল।

শিয়ালদহের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার সুচিত্রকুমার দাস শুক্রবার বলেন, “কিশোর বা যুবকদের উদ্দামতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলা কঠিন। তবে আপাতত আমরা তাদের কাছেই এই আবেদন জানাচ্ছি। ”

সৌজন্যে: দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫,  ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।