ঝগড়ার রণে স্ত্রীকে একচোট নেওয়ার পর কী জানি কেন অন্যের স্ত্রীর দূয়ারে আসফালন দেখাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরস্ত্রীর ‘কারণ’ বা ‘অকারণ’ প্রবল রোষের শিকারে পরিণত হন পশ্চিমবঙ্গের গঞ্জামের ছত্রপুরের সূর্যনারায়ণ দাস।
নিজের স্ত্রীর আক্রমণ তাও বাক্যবাণেই সীমিত ছিল। কিন্তু পরস্ত্রীর কাছ থেকে মিলেছে আঁচড়-কামড়। আপাতত, ক্ষত-বিক্ষত সূর্যনারায়ণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনাস্থল: ওড়িশার নন্দনকানন চিড়িয়াখানা। সময়: শনিবার দুপুর সোয়া একটা। নন্দনকাননের ২৯-ডি এনক্লোজারের বাসিন্দা ক্রিশ্ ও প্রিয়াঙ্কা, পশুরাজ ও তার রানি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য অনুযায়ী: সিংহের এনক্লোজারের ওই চত্ত্বরের সামনে তখন বেশ কিছু দর্শণার্থী ছিলেন। ছিলেন এক বাঙালি বয়স্ক মহিলাও। সেই মহিলার কথায়, বছর পঁয়তাল্লিশের ওই ভদ্রলোক হঠাৎই আমাকে প্রণাম করেন। তারপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি সামনের পাঁচিল বেয়ে উঠে গিয়ে ওপাশে সিংহ-সিংহীর উঠোনে লাফিয়ে পড়লেন।
আকষ্মিক এ ঘটনায় আতংকিত দশর্কদের চিৎকারে ছুটে আসেন চিড়িয়াখানার কর্মী ও রক্ষীরা। তড়িঘড়ি তারা ঢুকে পড়েন সিংহের ডেরায়।
অপর এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, লোকটি ঝাঁপিয়ে পড়তেই দেখলাম সিংহরাজ যথেষ্ট বিরক্ত হয়ে রাজসিক ভঙ্গিতে নিজের খাঁচার দিকে হাঁটা দিল। কিন্তু ‘প্রাইভেসি’ ক্ষুন্ন করায় ক্রুদ্ধ সিংহী প্রিয়াঙ্কা এগিয়ে আসে তার দিকে। থাবা বসায় সূর্যনারায়ণের মাথায়, গালে, ঘাড়ে, হাতে, পায়ে।
নন্দকাননের সহকারী অধিকর্তা কে এল পুরোহিত জানান, ঘটনার পরপর চিড়িয়াখানার কর্মীরা ঢুকে পড়েন ভেতরে। তারা প্রিয়াঙ্কার কবল থেকে উদ্ধার করে সূর্যনারায়ণকে। ততক্ষণে তিনি অবশ্য সংজ্ঞাহীন। দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে।
পরে সেখানকার চিকিৎসক শ্রীকান্ত মহাপাত্র জানান, সূর্যনারায়ণের জ্ঞান ফিরেছে। বিভিন্ন জায়গায় আঁচড়-কামড় থাকলেও তার হাত ও পায়ের ক্ষত বেশ গভীর। জ্ঞান ফিরে আসার পর চিকিৎসকদের প্রশ্নের জবাবে সূর্যনারায়ণ জানান, স্ত্রীর সঙ্গে তুমুল ঝগড়া হয়েছিল তার। ‘বাঘিনী’র সঙ্গে ঝগড়ার পরপর প্রচণ্ড ক্ষোভ নিয়ে গঞ্জামের ছত্রপুরের বাসা থেকে বেরিয়ে সোজা হাজির হন নন্দনকাননে। ঝাঁপ দেন সিংহের খাঁচায়।
তবে সূর্যনারায়ণের শারীরিক অবস্থা এখন ভাল বলেই চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, এর আগে কলকাতা চিড়িয়াখানায় এক মদ্যপ যুবক, শিবা নামে এক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের এনক্লোজারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তবে সূর্যনারায়ণের মতো সে বেঁচে ফিরতে পারেনি। বছর কয়েক আগে গুয়াহাটি চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচায় হাত ঢুকিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে এক ব্যক্তিকে হাত খোয়াতে হয়েছিল।
এদিকে, সূর্যনারায়ণের ঘটনায় চিড়িযাখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সৃষ্ট প্রশ্নের জবাবে নন্দনকাননের উপ-অধিকর্তা সি আর মিশ্র জানান, তাদের চিড়িয়াখানায় এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। এছাড়া দর্শকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে মনে করেন তারা পুরোপুরি সতর্ক, কোথাও কোনও গাফিলতি নেই। বরং তিনি পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, “কেউ যদি সিংহের খাঁচায় ঝাঁপ দেবেন বলে মনে করেন, তাকে ঠেকাবে কে?”
সৌজন্য: দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ ঘণ্টা, ০৭ অক্টোবর, ২০১২
অমিয় দত্ত ভৌমিক/একে