ঢাকা, সোমবার, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২১ জুলাই ২০২৫, ২৫ মহররম ১৪৪৭

ফিচার

বিজ্ঞানের রাজ্যে ‘নোবেল’ অমর

স্বপ্নযাত্রা ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:২৫, অক্টোবর ৯, ২০১২
বিজ্ঞানের রাজ্যে ‘নোবেল’ অমর

শুরু হয়ে গেছে নোবেল ঘোষণা। প্রতিবছর এ সময় বিশ্বব্যাপী মানুষ অপেক্ষা করে নোবেল বিজয়ীদের নাম জানার জন্য।

অথচ কেন এই পুরস্কার? কিংবা কে এই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? মূল বিষয়টি হলো, বিশ্বে মানব কল্যাণের উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘নোবেল প্রাইজ’। যিনি এ পুরস্কারটির প্রবর্তন করেছেন, সেই মানুষটির নাম স্যার আলফ্রেড নোবেল।

আলফ্রেড নোবেল ছিলেন সুইডিশ রসায়ন বিজ্ঞানী। ১৮৩৩ সালে ২১ অক্টোবর স্টকহোম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ইমানুয়েল নোবেল ছিলেন প্রসিদ্ধ টর্পেডো ও মাইন নির্মাতা। ইমানুয়েলের ইচ্ছে ছিল তার ছেলেও বড় হয়ে কারিগরি বিদ্যায় পারদর্শী হবে। এ জন্য ছোটবেলা থেকেই নোবেলকে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি জোর দেওয়া হতো।

ছোটবেলা থেকে নোবেলের রসায়নের প্রতি আকর্ষন তৈরি হয়। এজন্য বাসায় গৃহশিক্ষক রাখা হয়েছিল। নোবেল কোনোদিনই স্কুলে যাননি। পরে একটু বড় বয়সে পিতা নিজে তাকে টর্পেডো ও মাইন নির্মাণের শিক্ষা দিতে থাকেন।

নোবেলের আগ্রহ রসায়ণ বিষয়ে। আগ্রহের বিষয়টি সম্পর্কে পিতার দৃষ্টি ছিল। সেজন্য বিশিষ্ট রসায়ন বিজ্ঞানী এবং অধ্যাপক জিনিনের উপর পু্ত্রের শিক্ষার ভার দেন ইমানুয়েল। অধ্যাপক জিনিন কিশোর নোবেলের রসায়নের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখে মুগ্ধ হন। তখন সবেমাত্র ‘নাইট্রোগ্লিসারিন’ নামে বিস্ফোরক আবিষ্কৃত হয়েছে। এ নিয়ে বিজ্ঞানী মহলে চলছে ব্যাপক আলোচনা। জিনিন এই বিস্ফোরক পদার্থ নিয়েই নোবেলকে কাজ করতে বলেন। শুরু হলো নোবেলের গবেষণা।

তারপর ১৮৬২ সালে কাইজেলগার নামে এক ধরনের সচ্ছিদ্র মাটির দ্বারা নাইট্রোগ্লিসারিনকে শোষিত করিয়ে আবিষ্কার করলেন সুষ্ঠভাবে ও নিরাপদে বিস্ফোরণ ঘটানোর কৌশল। পরে আরও গবেষণা করে ১৮৬৭ সালে আবিষ্কার করেন নিরাপদ ডিনামাইট।

স্যার আলফ্রেড নোবেল সুদীর্ঘসময় গবেষণা করেছেন ডিনামাইট নিয়ে। আবিষ্কার করেছিলেন নানা ধরনের ডিনামাইট। পরবর্তীকালে ঐ ডিনামাইট থেকে উপার্জন করেছিলেন প্রচুর অর্থ। বিশাল সম্পত্তি গড়ে তুললেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন সম্পত্তির একটা বড় অংশ তিনি মানবকল্যানে দান করে যাবেন।

এই উদ্দেশ্যে ১৮৯৫ সালে ২৭ নভেম্বর প্যারিস শহরে একটি উইল রচনা করেন। সেই উইল অনুসারে প্রতি বছর পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, চিকিৎসা বিদ্যায় মূল্যবান আবিষ্কারের জন্য, বিশ্বের সেরা সাহিত্য রচনার জন্য এবং বিশ্বশান্তি; এই পাঁচটির প্রত্যেকটির জন্য মোটা অংকের অর্থ পুরষ্কার দেওয়া হয়।

নোবেলের উইল অনুসারে ১৯০১ সাল থেকে পুরস্কার প্রদান করা হয়ে আসছে। পুরস্কারদাতার নাম অনুসারেই নাম হয়েছে ‘নোবেল পুরস্কার’।

কেবলমাত্র একটি সংস্থা থেকে সবগুলো পুরস্কার প্রদান করা হয় না। পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের পুরস্কার দুটি প্রদান করা হয় সুইডিশ বিজ্ঞান একাডেমি, চিকিৎসাবিদ্যায় পুরস্কার প্রদান করা হয় স্টকহোম কারোলিন মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট, সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হয় স্টকহোম সাহিত্য একাডেমি এবং বিশ্বশান্তি বিষয়ক পুরস্কারটি দেওয়া হয় নরওয়েজিয়ান স্টরটিং কর্তৃক নির্বাচিত কমিটি থেকে।

নোবেল পুরস্কারের মত মোটা অংকের টাকা পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় নেই। নোবেল মৃত্যুবরণ করার আগে ঘোষণা করেছিলেন, পুরস্কারটি দাতার নির্দেম অনুযায়ী পৃথিবীর যে কোনো জাতির মানুষ লাভ করতে পারে।

১৮৯৬ সালে ২০ ডিসেম্বর স্যার আলফ্রেড নোবেল মৃত্যুবরণ করেন। তার জীবদ্দশায় নোবেল পুরস্কার ঘোষণা হয়নি। তবে বিজ্ঞানের রাজ্যে ‘নোবেল’ চিরকালই অমর হয়ে থাকবেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২০১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১২
সম্পাদনা: শেরিফ সায়ার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।