ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২০ মে ২০২৫, ২২ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

কলকাতা অদর্শনে ভারত দর্শনও অসম্পূর্ণ

লিয়াকত হোসেন খোকন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৫০, নভেম্বর ২২, ২০১২
কলকাতা অদর্শনে ভারত দর্শনও অসম্পূর্ণ

অনেকেই বলে থাকেন কলকাতা মায়াময় শহর। যে একবার কলকাতা গিয়েছে-  তাকে আবার যেতে হবে কলকাতা।

অর্থাৎ কলকাতা সবাইকে বার বার কাছে টানে। যে কারণে আমি কলকাতা ৪৫ বার গিয়েছি।

ওখানে গেলে বারবার মনে পড়ে এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গে ভরা‘। এখানে রঙ্গ বাংলার আকাশে বাতাসে। রঙ্গ বাঙালির রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সেই রঙ্গ বলেই এগিয়ে চলেছে বাংলা। মহামতি গোখলের অবিস্মরণীয় উক্তি : “What Bengal thinks to-day rest of India thinks to-morrow other world thinks day after tomorrow.”

ইদানীং বাংলাদেশিরা কলকাতায় গেলেই গিয়ে ওঠেন নিউমার্কেট এলাকার হোটেলগুলোতে। যে কারণে এখন গোটা নিউমার্কেট এলাকা জুড়েই গড়ে উঠেছে হোটেল আর হোটেল।

হালে কলকাতার আর এক বিভ্রম তার নাম বদল। এজন্য ২/৫ বছর বাদে কেউ কলকাতায় গেলে তাকে খানিকটা বিভ্রাটে পড়তে হয়।

পুরাতন হ্যারিসন রোড হয়েছে মহাত্মা গান্ধী রোড, চৌরঙ্গী রোড হয়েছে জহরলাল নেহেরু রোড, থিয়েটার রোড হয়েছে শেক্সপিয়ার সরণি, ওয়েলিংটন স্ট্রিট হয়েছে নির্মল চন্দ্র স্ট্রিট, হ্যারিংটন স্ট্রিট হয়েছে হো-চি-মিন সরণি, রেড রোড হয়েছে ইন্ধিরা গান্ধী সরণি, বৌ-বাজার স্ট্রিট হয়েছে বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট, চিৎপুর রোড হয়েছে রবীন্দ্র সরণি, কর্নওয়ালিশ স্ট্রিট হয়েছে বিধান সরণি, লোয়ার সার্কুলার রোড হয়েছে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু রোড, ল্যান্সডাউন রোড হয়েছে শরৎচন্দ্র রোড, বালিগঞ্জ স্টোর রোড হয়েছে গুরুসদয় রোড, ওয়েলেসলি স্ট্রিট হয়েছে রফি আহমেদ কিডওয়াই রোড, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট হয়েছে মির্জা গালিব স্ট্রিট, গড়িয়াহাট রোড হয়েছে সিভি রমণ রোড।

কলকাতায় গিয়ে বারবার মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা। এই শহরের আলো-বাতাসে তিনি বড় হয়েছেন। বিশ্বকবি হয়েছেন। দেহত্যাগও করেছেন এ শহরেই।

আরো মনে পড়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, প্রমথেশ বড়–য়া, কানন দেবী, উত্তম কুমার, সূচিত্রা সেন আরও কতো নাম।

সাহিত্যপ্রিয় বাঙালির আড্ডাস্থল এই কলকাতার কলেজ স্ট্রিট। কলকাতার আকাশে বাতাসে বয়- কলকাতার সৃষ্টি বাঙালির কৃষ্টি। মূর্তি বসেছে লেনিন, মার্কস, এঙ্গেলস, হো-চি মিন কলকাতার রাজপথে। কলকাতা অদর্শনে দুই বাংলা দর্শন শুধু নয়- ভারত দর্শনও অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

এখন ঢাকা ও কলকাতার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ হয়েছে। সপ্তাহে নির্ধারিত রেল ছাড়াও প্রতিদিন একাধিক পরিবহন সংস্থার বাস চলাচল করছে। কলকাতার সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে রেল ও বাস যোগাযোগ রয়েছে ।

উত্তর-পূর্ব ভারতের তোরণ দ্বার কলকাতা। এক সময় কলকাতা ছিল ভারতের রাজধানী। ১৯১১ সালে কলকাতা থেকে নয়াদিল্লি¬তে স্থানান্তরিত হয় ভারতের রাজধানী।

১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষ, ১৯৪৬-এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ক্ষত শুকাতে না শুকাতে ১৯৪৭ সালে বাংলাকে বৃটিশরা দ্বিখণ্ডিত করে ।

শৈশবে মনে করতাম, কলকাতা বুঝি চিত্র তারকাদের নগরী। মেট্রো, লিবার্টি, জয়া, মৃণালিণী, রূপবাণী, চিত্রা, উত্তরা, শ্রী, বিজলী, ছবিঘর, মিনার, আলেয়া, রূপণ কত কি ছবিঘর। ওখানে গিয়ে দেখবো কানন দেবী, প্রমথেশ বড়ুয়া, পংকজ কুমার মলি¬ক, যমুনা দেবী, চন্দ্রাবতী দেবী, অসিত বরণ, রবীন মজুমদার, উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন, মঞ্জু দে, কাবেরী বসুর ছবি। এদের নিয়ে কতোই না আগ্রহ ছিল কিশোর বয়সে।

১৯৭২ সালের প্রথম দিকের কথা। পিরোজপুরের ছাত্রলীগ নেতা মালেক খান আবুর সঙ্গে আমি গেলাম কলকাতা শহর দেখার জন্য। তখনতো থাকতাম ছোট শহর পিরোজপুরে। খুলনা, যশোর, বেনাপোল হয়ে কলকাতা যেতে পাসপোর্ট-ভিসার কোনো প্রয়োজন ছিল না।

‘জয়বাংলা’ থেকে এসেছি বললেই হতো। আমরা কলকাতায় গিয়ে উঠেছিলাম নিউমার্কেট এলাকার এক হোটেলে।
রবীন্দ্র সদনের কাছে বেড়াতে গিয়ে শুনলাম- ওখানে বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী পঙ্কজ কুমার মল্লিক এসেছেন। তাকে এক নজর দেখবো বলেই ভিড় ঠেলে মূল মঞ্চের কাছে গেলাম।

অনেকটা কাছ থেকে তাকে দেখে বেশ উৎফুল¬ হলাম। তখন মনে পড়লো তার অভিনীত ‘ডাক্তার’, ‘নর্তকী,  ‘মুক্তি’, ‘অধিকার’ ছবির কথা। ‘মুক্তি’ ছবিতে  ‘দিনের শেষে ঘুমের দেশে’, ‘কোন লগনে জনম আমার’, ‘আমি কান পেতে রই’ তিনিই তো গেয়েছিলেন।

তার গাওয়া- ‘চৈত্র দিনের ঝরা পাতার পথে’, ‘কোথা সে খেলাঘর’, ‘শেষ বাসর’ সে কি ভোলার। সেদিন তাঁর মঞ্চে বসে থাকার সেই ক্ষণ এখনও যে চোখের পাতায় ভাসে। তিনিই তো রবীন্দ্রনাথের গান প্রথম গেয়েছিলেন ফিল্মে।

রবীন্দ্র সঙ্গীতকে জনপ্রিয় আর বিশেষ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়- এ কথা কে না জানে। একটি কথাই মনে পড়ে উনি কাকে যেনো বললেন, ‘হারমোনিয়ামটি এদিকে নিয়ে এসো ...। ’

বালিগঞ্জে যমুনা দেবীর বাসায় তার সঙ্গে দেখা করার কথাও বেশ করে মনে পড়ে। সেটি ছিল ১৯৭৭ সালের কথা। শৈশবে তার অভিনীত- জিন্দেগী, অধিকার, শেষ উত্তর দেখেছিলাম পিরোজপুরের ইরা টকিজে। সে কথা তাকে জানাতেই উনি কেমন জানি হয়েছিলেন।  

১৯৭২ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত যতবার কলকাতায় গিয়েছি, ঘুরে ফিরে চিত্রতারকাদের সঙ্গে বিশেষ করে পুরনো দিনের তারকাদের দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠতাম। যাদের কাছ থেকে দেখেছি সেই সব স্মৃতি তো ভোলার নয়।
কলকাতায় বেড়াতে গিয়ে কত না কথা শুনলাম। থিয়েটার সম্পর্কে এক বৃদ্ধা জানালেন, কলকাতার প্রথম বিনোদন ছিল বাঈজী নাচ। তারপর ডিনারের সঙ্গে নাটক পাঠ। কিন্তু শুধু নাটক পাঠে কি মন ভরে।

চাই একটি থিয়েটার। তো খুলে বসলো তারা (ইংরেজরা) একটি থিয়েটার। তার নাম দেওয়া হলো পে¬ হাউস। ওল্ড পে¬ হাউসও বলা হয়। বিবাদিবাগের যে দিকটি মার্টিন বার্নের বাড়ি, সেখানেই খোলা হয়েছিল থিয়েটার।

ইংরেজরা যেখানে যায়, গড়ে তোলে সেখানে থিয়েটার। আর এভাবেই কলকাতায় গড়ে উঠেছিল থিয়েটার। থিয়েটার খোলা হয়েছিল ইংরেজকুঠির সাহেব-কর্মচারীদের চাঁদায়। ওখনকার অভিনেতারা ছিলেন অপেশাদার।

শুনেছি- থিয়েটার পরিচালনার ব্যাপারে পরামর্শ ও নির্দেশ আনা হতো ইংল্যান্ডের তৎকালীন বিখ্যাত অভিনেতা ডেভিড গ্যারিকের কাছ থেকে। প্রতিদানে তাকে উপহার পাঠানো হতো মেদিরা কাঠের পাইপ। ইংরেজদের থিয়েটারে বাঙালি অভিনেতাও অভিনয় করেছিলেন।

তার নাম বৈষ্ণবচরণ। তিনি সাঁসুসি থিয়েটার ‘ওথেলো’  নাটকের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। সেই সময়কার থিয়েটার এটি একটি সাড়া জাগানো ঘটনা। তাকে বলা হতো ‘হিন্দু ওথেলো’। কলকাতার বিশিষ্ট বাঙালি বাবু প্রসন্ন কুমার ঠাকুর এগিয়ে এলেন থিয়েটার প্রতিষ্ঠায়। তিনি তার নারকেলডাঙ্গার বাগানবাড়িতে খুলেছিলেন থিয়েটার। নাম দিলেন ‘হিন্দু থিয়েটার’।

কথাগুলো শুনে চমকে উঠলাম। ভাবলাম, কতোই না স্মৃতি জড়িয়ে আছে কলকাতাকে ঘিরে। এক বিকেলে এলাম জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি দেখবার জন্য। ওখানে এসেই শুনলাম, এই জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতেই থিয়েটার খুলতে চেয়েছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ।

কি বিশাল নগরী কলকাতা। সারা জীবন ঘুরেও যেনো কলকাতা দেখা শেষ হয় না। দমদম, শ্যামবাজার, বাগবাজার, শোভাবাজার, আহিড়িটোলা স্ট্রিট, উত্তমকুমারের বাড়ি ময়রাস্ট্রিট, বড়বাজার, হেদুয়ার বেথুন কলেজ, বৈদ্যনাথ রায়ের বাগান, ইডেন গার্ডেনস, গড়ের মাঠ, বেহালা, লালবাজার,  বিবাদিবাগ, হাজরা পার্ক, যাদবপুর, টালিগঞ্জ, ঢাকুরিয়া লেক, কালীঘাট, চিড়িয়াখানা, ফোর্ট উইলিয়াম, মুচিখোলা, শিয়ালদহ, বালিগঞ্জ ময়দান, রাজভবন, পরেশনাথ মন্দির, বেহালা ইত্যাদি এলাকায় যাওয়ার কথা খুব করে মনে পড়ে এই বয়সে।

এই কলকাতার সঙ্গে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়, ওয়ারেন হেস্টিংস, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, জগদীশ চন্দ্র, মেঘনাথ সাহা প্রমুখ নামগুলো বিশেষভাবে জড়িয়ে আছে।

বেথুন স্কুল, হিন্দু কলেজ এখানকার বহু পুরনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রেসিডেন্সি কলেজের নাম এখনও শুনি লোকের মুখে মুখে। কাছ থেকে দেখে নিলাম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, এটি স্থগিত হয়েছিল ১৮৫৭ সালে। ওখানেই পরিচয় হয় দু‘জন ছাত্রের সঙ্গে।

তারা আমাকে জানালেন, নতুন শতাব্দীর শুরু থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় আড়াই দশক ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আশুতোষ যুগ’। ১৮৮৯ সালে মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে সিনেট ও সিন্ডিকেটের সদস্য হবার পর থেকেই আশুতোষের প্রভাব বাড়তে থাকে।

নতুন আইনে ১৯০৬ সালে উপাচার্য নিযুক্ত হন। উপাচার্য ছিলেন মাত্র আট বছর ১৯১৪ সাল পর্যন্ত। কিন্তু তাঁর মৃত্যু অবধি অর্থাৎ ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তিনিই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বাধিনায়ক ছিলেন।
টালিগঞ্জ স্টুডিও দেখতে এসে প্রায় নব্বই বছর বয়সী একজনার মুখে শুনলাম, বাঙালিরা কিন্তু বহুদিন যাবৎ প্রমথেশ চন্দ্র বড়–য়ার‘  ‘দেবদাস’ সিন্ড্রোমেই আচ্ছন্ন ছিল। আর পাশ্চাত্য প্রাচ্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে হাস্যকর লঘু উচ্ছ্বাস নিয়ে (গরমিল) যার বীজ প্রমথেশ বড়–য়ার ‘মিইক্ত’তেই ছিল।

অথবা শহরে বিপজ্জনক মহিলা মেরিলিন মনরোর আদলে চন্দ্রাবতী এবং সরলা গ্রামবালিকা অর্থাৎ জোন ফনবটেইনের আদলে ভারতী দেবীকে দেখে সেকালে কে-না মুগ্ধ হয়েছে। ‘প্রতিশ্রুতি’ ছবিটিতো এরই ইঙ্গিত বহন করে।

নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তিটি দেখলাম কলকাতা শহরের প্রাণকেন্দ্র শ্যামবাজারে। বারবার তাকিয়ে আছি- সুভাষ বসুর মূর্তির দিকে। মূর্তি কী আর কথা বলে। ওখানেই পরিচয় হয় এক বৃদ্ধের সঙ্গে। তিনি জানালেন, শহর কলকাতার প্রথম পূর্ণাঙ্গ তথা প্রকাশ্যস্থানে বসানো মূর্তিটি লর্ড কর্নওয়ালিসের।

কর্নওয়ালিসের মূর্তি দিয়েই শুরু হয়েছিল প্রকাশ্যস্থানে মূর্তি বসাবার প্রথা। পলাশীর যুদ্ধের ছেচলি¬শ বছর পর উনিশ শতকের সূচনায় কর্নওয়ালিসের মূর্তিটি বসানো হলেও মূর্তি বসানোর প্রস্তাব নেয়া হয়েছিল অষ্টাদশ শতকে।

বণিকদের প্রসঙ্গ উঠতেই বৃদ্ধ জানালেন, কলকাতা শহরের প্রথম বণিকদের মধ্যে অক্রুর দত্তের নাম বলা চলে। ১৭৪০ সালে তিনি কলকাতার সম্ভ্রান্ত দাদনী‘ বণিকদের একজন।

ইংরেজ রাজত্বের সময়ে অক্রুর দত্তের পরিবার একটু পৃথক থাকতেন। এবার তিনি হাসতে হাসতে বললেন, কেউ কেউ বলতে পারেন কলকাতা এসেছে ‘খল কথা’ বা ‘খল কত’ থেকে।

অর্থাৎ এই জায়গায় এককালে খলেদের আড্ডা ছিল। অনেক খল ছিল বলে দূরের লোকেরা এই জায়গার নাম দিয়েছিল ‘খলকত’। অথবা এখানে খলেদের চমৎকার চমৎকার সব কথা শোনা যেতো বলে এই জায়গার নাম হয়েছিল ‘খলকথা’।

জানেন, এই অঞ্চলে বহু কবিরাজ ছিলেন, তাদের আড্ডায় প্রভূত পরিমাণে খল দেখা যেত। সেজন্য সাধারণ মানুষ জায়গাটির নাম দিয়েছিল ‘খলকত’। তা থেকেই কলকাতা।

কলকাতার ‘নন্দন’-এ গিয়ে দেখেছি সত্যজিৎ আর্কাইভ। এখানেই রয়েছে চলচ্চিত্র, শিল্প, সাহিত্য তথা ব্যক্তি জীবনের নানান সম্ভার। এটিও আজ কলকাতা দর্শনে অন্যতম সংযোজন। কলকাতায় কত না কিছু দেখলাম।

ভালো লেগেছে বড়বাজারের পাশে নাখোদা মসজিদ’ দেখে। এটি জাকারিয়া স্ট্রিটে অবস্থিত। কারবালা মসজিদটি দেখবার জন্য গিয়েছিলাম মানিকতলায়। ধর্মতলায় দেখলাম ‘টিপু সুলতানের মসজিদ’। এটি তৈরি করিয়েছিলেন টিপু সুলতানের পুত্র প্রিন্স গোলাম মোহাম্মদ।

কলকাতায় আরও দেখেছি- কালীঘাটের মন্দির, মদনমোহন মন্দির, আশুতোষ মিউজিয়াম, আর্মেনিয়ান চার্চ, ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ভাসমান জাদুঘর, রেসকোর্স, মার্বেল প্যালেস, রবীন্দ্র সরোবর, বিড়লা মন্দির, ময়দান- আরও কত সব।

বিশাল নগরী কলকাতার পশ্চিম পাশ থেকে বয়ে গেছে পদ্মা বা হুগলি নদী। ওপারে হাওড়া জেলা। কলকাতায় যারা বেড়াতে যান (বাংলাদেশি) তারা নিউমার্কেট এলাকার আশপাশের হোটেলেই ওঠেন।

নিউমার্কেটের উত্তরে লেনিন সরণি, আবুল কালাম আজাদ কলেজ, চাঁদনী মার্কেট, বউবাজার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, মাছুয়া বাজার, গিরিশ পার্ক, শোভা বাজার, আজাদ হিন্দবাগ, বিদ্যাসাগর কলেজ, শ্যামবাজার, বাগবাজার, চিৎপুর (চিৎপুর রেলস্টেশনে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া-আসার ট্রেনটি থামে), কালীপুর, নেতাজি কলোনি, বেলঘড়িয়া, পাইকপাড়া।

নিউমার্কেটের দক্ষিণেÑ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, কালীঘাট, বালিগঞ্জ, যোধপুর পার্ক, টালিগঞ্জ, রিজেন্ট পার্ক, কালীঘাট, যাদবপুর।

কলকাতা মেট্রো রুট এ রকমÑ দমদম থেকে শুরু হয়ে নিউগড়িয়ায় গিয়ে থামে। পাতাল ট্রেন থামার স্টেশনগুলো হলো- বেলগাছিয়া, শ্যামবাজার, শোভাবাজার, গিরিশপার্ক, মহাত্মগান্ধী, সেন্ট্রাল, চাঁদনি চক, এসপ্ল্যানেড, পার্কস্ট্রিট, ময়দান, রবীন্দ্রসদন, নেতাজি ভবন, যতীনদাস পার্ক, কালীঘাট, রবীন্দ্র সরোবর, মহানায়ক উত্তম কুমার, নেতাজি, মাস্টারদা সূর্যসেন, গীতাঞ্জলী, কবি নজরুল, শহীদ ক্ষুদিরাম এবং নতুন গড়িয়া।

বিমানবন্দরটি হল- দমদমে। বাংলাদেশ থেকে যারা বিমানে কলকাতা যান- তাদের নামতে হয় এই দমদমে আন্তর্জাতিক সুভাষচন্দ্র বসু বিমানবন্দরে । এরপর বাস, ট্যাক্সি করে শহর কলকাতায় যাওয়া। বাসে গেলে দমদম বিমানবন্দর বাঁয়ে রেখে যেতে হয় কলকাতা। ট্রেনে গেলে তো মধ্যমগ্রাম রেলস্টেশন থেকে শুরু হয় বিমানবন্দর এলাকা। এরপর নিউব্যারাকপুর, বিশরপাড়া, বিরাটি, দুর্গানগর ও ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন অবধি বিমানবন্দর। হালে বিমানবন্দর থেকে শিয়ালদহ অবধি রেল চালু হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে- মেট্রোরেল স্টেশন স্থাপনের। তবে তা হবে উপর দিয়ে মাটির নীচ দিয়ে নয়। অর্থাৎ এখন প্রান্তিক স্টেশন দমদম মেট্রোস্টেশন থেকে বেলগাছিয়া যাবার আধাআধি যেভাবে মাটির ওপর দিয়ে চলে।

বাংলাদেশ সময় : ১৭০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২,  ২০১২
সম্পাদনা : সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর
eic@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।