পলের দোকান ‘বাইট শপ’। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া শহরের মাউন্টেন ভিউ এলাকায় পল এ দোকানটি শুরু করেন ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে।
১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে শুরু করে পরের মাসেই পল বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করেন। তিনি তাদের গিয়ে বলেন, তোমাদের দোকান দেওয়ার দরকার নেই। তোমরা যে পণ্য বিক্রি করতে চাও তা এখানেই সম্ভব। মুনাফা ভাগাভাগি করে নেব।
মুহূর্তেই বদলে যায় বাইট শপের চিত্র। বিস্তার লাভ করতে শুরু করে অন্য শহরগুলোতেও। বিশেষ করে সান্তাক্লারা, সান জোস, পোর্টল্যান্ডেও পৌঁছে যায় বাইটের শপের শাখা।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৬ সালের মার্চ মাসেই বাইট শপকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন পল। কারণ বাইট শপের দেখাদেখি আরও দোকান তৈরি হতে শুরু করে। এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়াটা জরুরি হয়ে ওঠে।
তবে পলের দোকানের ভাগ্য বদলায় স্টিভ জবসের সঙ্গে পরিচয়ের পর। স্টিভ জবস তখন সবে বাসার গ্যারেজে অ্যাপেল শুরু করেছেন। স্টিভ এসে পলকে বলল, তোমার দোকানে আমি কিছু মেশিন বিক্রি করতে চাই। কারণ এ মুহূর্তে কোনো স্টোর ভাড়া করার মত অর্থ আমার হাতে নেই।
পল কিছুটা চিন্তা করল। তারপর বলল ঠিক আছে। তুমি বিক্রি করতে পারবে। তবে অ্যাসেম্বল মেশিন হতে হবে।
স্টিভ সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে গেলেন। তাদের চুক্তি হলো। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মেশিনে ৫০০ ডলার করে স্টিভকে দেওয়া হবে। প্রথম ৫০টি মেশিনের অর্ডার দেন পল। স্টিভ মরিয়া হলে গেলেন। কারণ পলকে দিতে হবে সম্পূর্ণ অ্যাসেম্বল মেশিন। তখন আবার ‘অ্যাপেল ওয়ান’ কম্পিউটার নিয়ে কাজ করছেন স্টিভ এবং ওজনিয়াক।
স্টিভ ব্যাংক লোনের জন্য চেষ্টা করছিলেন। কারণ তাকে ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি কিনতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থাপক তাকে অর্থ কিভাবে শোধ করবে সেটা জানতে চাইল। স্টিভ খুব নিশ্চিন্ত মনে উত্তরে বলেন, আমি বাইট শপের কম্পিউটার স্টোর থেকে ৫০টি কম্পিউটার তৈরির অর্ডার পেয়েছি। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি কম্পিউটারে আমাকে লাভ দেওয়া হবে। আর ব্যাংকঋণ পরিশোধ করবে বাইট শপের পল।
ব্যাংক থেকে পলকে ফোন করা হয়। পল জবাবে বলেন, যদি আমার স্টোরে স্টিভের কম্পিউটার আসে তাহলে মনে রেখ তাকে আরও কম্পিউটার তৈরির জন্য ঋণ দিতে হবে।
পলের বিশ্বাসকে জয় করতেই মরিয়া ছিলেন স্টিভ এবং ওজনিয়াক। দিনরাত পরিশ্রম করে পলের স্টোরে প্রথম বিক্রি শুরু করেন পার্সোনাল কম্পিউটার। সেখান থেকে লাভের টাকা দিয়ে স্টিভ আরও ইলেকট্রনিক্স পণ্য কিনেন। আরও কম্পিউটার বানান।
পল কখনও স্টিভকে ছোট করে দেখেননি। সত্যি কথা হলো নতুন ব্যবসায়ীকে পল সব সময়ই বড় করে দেখেছেন। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় পলই প্রথম স্টিভ জবসকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। তাকে সহযোগিতা করেছেন। যেখানে পল ও স্টিভ দু্জনই নতুন ব্যবসায়ী। একজন আরেকজনকে সহযোগিতা করে দুজনের প্রতিষ্ঠানই এখন পৃথিবী বিখ্যাত।
স্টিভের সফলতায় মুগ্ধ হয়ে পলও কম্পিউটার তৈরির ব্যবসায় নামেন। তিনি তখন ‘বাইট ৮’ নামে পার্সোনাল কম্পিউটার বাজারে আনেন। যা শুধু পলের নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। এ কম্পিউটার বাজারে আনার পর বাইট শপ আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
বিশ্বব্যাপী পলের এ ব্যবসায়ীক ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী এবং উদ্ভাবনী মানুষগুলোকে সাহায্যের হাত বাড়াতে বাইট শপের মতই অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বাইট শপকে বলা হয় ‘মাইক্রো এইজ কম্পিউটার ডিস্ট্রিবিউটর’। তারাই প্রথম মানুষের কাছে পার্সোনাল কম্পিউটারকে জনপ্রিয় করে তোলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১২
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর