ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২০ মে ২০২৫, ২২ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

২৩ বছর পর বোধোদয়

‘মরিতে চাই পুরুষ হয়ে!’

সত্যি বিচিত্র ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:০৩, ডিসেম্বর ১, ২০১২
‘মরিতে চাই পুরুষ হয়ে!’

শল্য চিকি‍ৎসার মাধ্যমে নারী থেকে পুরুষ আর পুরষ থেকে নারীতে রূপান্তরের সংবাদে এখন আর তেমন চমকিত হই না আমরা। তবে সুদীর্ঘ ২৩ বছর আগে সার্জারির মাধ্যমে পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হওয়া গ্যারি নর্টন (৭৫) যখন ফের পুরুষ হতে চাইলেন— বিষয়টি সবার মাঝে বেশ আগ্রহের ‍সৃষ্টি করেছে।



সাম্প্রতিক এ ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইংল্যান্ডের কভেন্ট্রির বাসিন্দা অশীতিপরের কোঠায় পৌঁছানো গ্যারি প্রায় দুই দশক আগে স্বেচ্ছায় সার্জারির মাধ্যমে নারীতে রূপান্তরের পর নিজের নাম রেখেছিলেন গিলিয়ান। এ ঘটনার আগে তিনি ব্রিটিশ রয়েল এয়ার ফোর্সে চাকরি করতেন। বর্তমানে পেনশনে থাকা ‍এবং একেবারে নিঃসঙ্গ জীবনযাপন রত গ্যারি বা গিলিয়ান বৃটিশ স্বাস্থ্য বিভাগের বড়কর্তাদের এখন রীতিমত পেরেশান করে মারছেন ফের সার্জারির মাধ্যমে তাকে সেই লিঙ্গ পরিচয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য যে পরিচয় নিয়ে তিনি জন্মেছিলেন।

কিন্তু কাজটা অত সোজা না। একে তো গ্যারির বয়স এখন অনেক তার ওপর এ ধরনের অপারেশনের জন্য লম্বা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হয়। কেবল মাত্র একটি সার্জারিতে এটা সম্ভব নয়।

প্রসঙ্গত, পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরের পর স্ত্রী-সন্তানরা তাকে ত্যাগ করে।

প্রশ্ন করা হয়েছিল, এতদিন পর কেন আবার পুরুষ পরিচয়ে ফিরে যেতে চাইছেন?

জবাবে গিলিয়ান জানান, আসলে নিঃসঙ্গতাকে সঙ্গী করে থাকতে থাকতে তিনি বিরক্তির চরমে পৌঁছে গেছেন। এর সঙ্গে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত মেয়েলি সব কাজ করতে করতেও হয়রান-পেরেশান তিনি। তার মতে, লম্বা চুলে চিরুনি চালানো, মেয়েদের মত সাজ-গোজ করা চরম ঝক্কির কাজ। নারী হিসেবে কাপড়-চোপড়ও বেশি পড়তে হয়। এসব অতিরিক্ত কাজ তাকে পুরোপুরি ক্লান্ত করে ছেড়েছে।

এছাড়া নারী বনে যাওয়ার পর তার ৪ সন্তানসহ স্ত্রীও তাকে ত্যাগ করে। তারপর থেকে তিনি পুরোপুরি একা হয়ে যান।

একই সঙ্গে এখন যারা সার্জারি করে লিঙ্গ-পরিচয় বদলানোর মতলবে আছেন, তাদেরকে হুঁশিয়ারি জানানোর দায়িত্বও তুলে নিয়েছেন গিলিয়ান-গ্যারি। তিনি বলছেন, যে লিঙ্গ পরিচয়ে আপনি জন্মেছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকুন। নাহলে ম্যালা ঝামেলা পোহাতে হয়!

জানা গেছে, তিনি তার সমস্ত মেয়েলি কাপড়-চোপড় এরইমধ্যে একটি দাতব্য সংস্থায় দান করে দিয়েছেন এবং অপেক্ষায় আছেন কবে ফের পুরুষে রূপান্তরিত হবেন।

যারা নারী থেকে পুরুষ আর পুরুষ থেকে নারী হওয়ার চেষ্টায় আছেন তাদের উদ্দেশে তিনি আরও জানিয়েছেন, সার্জারির মাধ্যমে শুধু লিঙ্গ পরিবর্তন করলেই শরীর থেকে সমস্ত নারী বা পুরুষ হরমোন শেষ হয়ে যায় না। এরফলে নারী বা পুরুষে রূপান্তরের পরও সম্পূর্ণ পুরুষ বা নারী আসলে হওয়া যায় না।

নিজের অভিজ্ঞতা বয়ানে তিনি বলেন, এছাড়া নারী হওয়ার পর সঙ্গ দেওয়ার জন্য নারী সাথীরও প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু তার ক্ষেত্রে তাও হয়নি। বিষয়টি তাকে চরম হতাশ করেছে। এখন ফের পুরুষে রূপান্তরিত হতে পারলে অন্ততপক্ষে সন্তানরা কাছে টেনে নেবে এবং তার নিঃসঙ্গতারও সমাপ্তি ঘটবে— এই আশায় আছেন।

তবে গিলিয়ান বা গ্যারি নারী থেকে ফের পুরুষ হতে চাইছেন কেন তা তো বোঝা গেল, কিন্তু কোন লোভে পুরুষ থেকে নারী হতে চেয়েছিলেন তার কোনো জবাব মেলেনি। অবশ্য তার বাতচিতে বোঝা গেছে, বিশ্বকবি রবী ঠাকুরের ‘...ও পাড়েতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস’ দর্শনে তাড়িত হয়েই মহাকবি মাইকেলের ভাষায় ‘পরধন লোভে মত্ত’ হয়েছিলেন গ্যারি সাহেব।

এখন বোঝ ঠ্যালা। কারণ, বৃটিশ স্বাস্থ্য বিভাগ তার বয়স বিবেচনায় এ ধরনের আব্দারে খুব একটা সারা দেবে বলে মনে হচ্ছে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, ০১ ডিসেম্বর, ২০১২
একে      

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।