ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২০ মে ২০২৫, ২২ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

নির্জনের মিউজিক্যাল হার্ট!

শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৩২, ডিসেম্বর ৩, ২০১২
নির্জনের মিউজিক্যাল হার্ট!

বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোনের জয়জয়কার। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে ল্যাপটপের চেয়ে স্মার্টফোন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

এ জন্য বিশ্বের সব মোবাইল প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো নিত্যনতুন সেবা নিয়ে বাজার দখলের প্রতিযোগিতায় নামছে।

শুধু তাই নয়, গবেষকেরাও চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষণা। স্মার্টফোনের মাধ্যমে আর কত সুবিধা দেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করছেন অসংখ্য গবেষক।

স্মার্টফোনের অ্যাপ নিয়ে বিশ্বব্যাপী চলছে মাতামাতি। বাংলাদেশি তরুণ তেমনই এক অ্যাপ তৈরি করে প্রযুক্তিজগতে সাড়া জাড়িয়েছেন। বাংলাদেশের এ তরুণের নাম শাহরিয়ার নির্জন। বুয়েট থেকে পড়াশোনা শেষ করে ২০০৮ সালে ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়াতে পাড়ি জমান নির্জন। এখন সেখানেই পিএইচডি করছেন।

নির্জন স্মার্টফোনের সেন্সিং এবং অ্যামবেডেড নেটওয়ার্ক সিস্টেম নিয়ে গবেষণার কাজ করেন। এরই অংশ হিসেবে ‘মিউজিক্যাল হার্ট’ নামে অসাধারণ একটি অ্যাপলিকেশন তৈরি করেছেন শাহরিয়ার নির্জন। বিশ্বব্যাপী বলা হচ্ছে, নির্জনের এ উদ্ভাবন হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির অন্যতম উদাহরণ।

মিউজিক্যাল হার্ট কি:

যখন কেউ গাড়ি চালায় বা দৌড়ায় কিংবা ক্লান্তি নিয়ে চোখ বন্ধ করে অবসন্ন হয়ে বসে থাকেন, তখন প্রতিটি মানুষই চায় সুন্দর একটি গান শুনতে। অন্যভাবে বলা যায়, এ সময় মানুষের মন পূর্ণতা চায়।

একমাত্র গানই তাকে সেই পূর্ণতা দিতে পারে। কিন্তু ধরুন, আপনি ফোনে গান শুনছেন। তখন আপনার মনের কথা ফোন তো বুঝবে না। সে তার প্লে লিস্টে থাকা গান একটার পর একটা শোনাতেই থাকবে। মনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গান শোনাতে সে একদমই অক্ষম।

নির্জন সেই বিষয়টাতেই কাজ করেছেন। তিনি এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন যা মানুষের হৃদস্পন্দনের সঙ্গে মিশে গিয়ে প্লে লিস্ট থেকে গান বের করে চলতে শুরু করবে।

মিউজিক্যাল হার্ট অ্যাপটি একই সঙ্গে হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। হার্ডওয়্যার হিসেবে থাকছে একটি এয়ারফোন। এই এয়ারফোনের সঙ্গেই সেন্সর সংযুক্ত করা আছে। এই সেন্সরটিই হার্টবিট কাউন্ট করতে সক্ষম।

একই সঙ্গে কানের মাধ্যমেই সে বুঝে নেবে আপনি কি করছেন। আপনি কি দৌড়াচ্ছেন, নাকি ঘুমাচ্ছেন, দাঁড়িয়ে আছেন নাকি হাঁটছেন। ব্যবহারকারী যাই করছেন সে তথ্য অডিও জ্যাকের মাধ্যমে স্মার্টফোনে তথ্যটি পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

স্মার্টফোনে বিশেষ অ্যাপটি আগে থেকেও দেওয়া থাকবে। এর কাজ হচ্ছে ব্যবহারকারীর বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী সঠিক মিউজিকটি প্লে লিস্টে চালু করে দেওয়া।

এ অ্যাপটি এতই অসাধারণ যে, ব্যবহারকারী যদি মনে করেন তার এ মুহূর্তে হার্টবিট বাড়াতে হবে। তখন অ্যাপটি হার্টবিট বাড়ানোর জন্য যে মিউজিক বাজানো দরকার তা চালু করে দেবে। তবে এক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর নিয়মিত ব্যবহারের ওপর নির্ভর করবে।

রোগীদের জন্য কতটুকু কাজ করবে এ উদ্ভাবন:

এ বিষয়টি নিয়ে নির্জন বাংলানিউজকে জানান, রোগীদের ওপর এখনও এ প্রযুক্তির পরীক্ষা চালানো হয়নি। এখনও পর্যন্ত শারীরিকভাবে সুস্থ মানুষের ওপরই এ পরীক্ষা চালানো হয়েছে। নির্জন জানান, যারাই মিউজিক্যাল হার্ট ব্যবহার করবেন তাদের প্রত্যেকের হৃৎ স্পন্দনের ভালো প্রশিক্ষণ হবে।

নির্জনের গবেষণা:

নির্জনের এ উদ্ভাবন নভেম্বরে কানাডার টরেন্টোতে অনুষ্ঠিত ‘১০ম কম্পিউটিং মেশিনারি কনফারেন্স অন অ্যামবেডেড নেটওয়ার্কড সেন্সর সিস্টেম’ সম্মেলনে উপস্থাপিত হয়েছে। তার গবেষণা প্রবন্ধও তিনি সেখানে উপস্থাপন করেন। সম্মেলনে উপস্থিত সবাই এ উদ্ভাবনের প্রশংসা করেন।

নির্জন স্মার্টফোনের সেন্সিং এবং অ্যামবেডেড নেটওয়ার্ক সিস্টেম নিয়ে কাজ করছেন। ভবিষ্যতে এ বিষয় নিয়ে তার আরও কাজ করার ইচ্ছা আছে বলেও বাংলানিউজকে জানান। সেই সঙ্গে তার এ উদ্ভাবনের পেটেন্টের প্রক্রিয়াও চলছে বলে তিনি জানান।

দেশের অসংখ্য তরুণ এভাবেই নিজেদের উদ্ভাবন দিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন বিশ্ববাসীকে। আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিজ্ঞানকে পৌঁছে দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। সেখানে মেধা থাকা সত্ত্বেও এ মানুষগুলোই দেশে থাকতে গবেষণার সুযোগ পান না। আমাদের উন্নতির স্বার্থে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজন গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা। যে সুযোগ পেলে আমাদের দেশের তরুণরাই বদলে দেবে বাংলাদেশকে। গড়ে তুলবে ডিজিটাল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ সময় ১৮১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১২
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।