ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ফিচার

ছেলেহারা ইরানি বাবা সঞ্চয়ের টাকা দিলেন ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণে

আশরাফুর রহমান, তেহরান থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:২৯, জুলাই ১৫, ২০২৫
ছেলেহারা ইরানি বাবা সঞ্চয়ের টাকা দিলেন ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণে শহীদ এহসান কাসেমির কফিন নিয়ে শোক মিছিল

ইরানের কোম শহরের এক শোকাহত বাবার হৃদয়বিদারক সিদ্ধান্ত দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইসরায়েলি হামলায় ১৬ বছর বয়সী পুত্র এহসান কাসেমিকে হারিয়ে তিনি ছেলের ক্যারিয়ারের জন্য সঞ্চিত সমস্ত অর্থ দেশের প্রতিরক্ষা শক্তি বৃদ্ধিতে দান করেছেন।

গত ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলের বর্বর হামলায় ইরানে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়, যাদের মধ্যে কোম শহরের কিশোর এহসান কাসেমিও ছিল। হামলা চলাকালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানি নাগরিকদের ইরানের সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ করার’ আহ্বান জানিয়েছিলেন, কিন্তু বাস্তবে তার প্রভাব পড়েছে উল্টো।

জাতীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত সাক্ষাৎকারে এহসানের বাবা বলেছেন, “আমার সন্তানের উচ্চশিক্ষা ও ভবিষ্যতের জন্য বছরজুড়ে সঞ্চয় করেছিলাম। এখন সেই টাকা দিচ্ছি আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে, যেন একটি ক্ষেপণাস্ত্রও তৈরি হয়। আমার শেষ ইচ্ছা—এই ক্ষেপণাস্ত্র যেন তেল আবিবের কেন্দ্রে আঘাত করে। ”


দানের টাকা নিয়ে আইআরজিসি অফিসে এহসানের পিতা (ডান থেকে দ্বিতীয়)

পরিবারটির দান করা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ইরানি রিয়াল (প্রায় ১,২০০ মার্কিন ডলার)। স্থানীয় কর্মকর্তাদের মতে, এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে একটি স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় ১৫ শতাংশ খরচ বহন করা সম্ভব।

এহসানের দানের টাকায় একটি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা সম্ভব নয়। তবে এই ঘটনা ইরানে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় একটি স্কুল এহসানের নামে নামকরণের ঘোষণা দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে #MySacrificeForIran ট্রেন্ড চালু হয়েছে।

এটি কেবল একটি পরিবারের গল্প নয়, বরং সমগ্র ইরানি সমাজের মনোভাবের প্রতীক। যখন পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের অর্থনীতিকে টার্গেট করে কিংবা মুসলিম দেশগুলোর ওপর দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দেয় তখনই ইরানিরা নিজেদের সম্পদ নিয়ে পাশে দাঁড়ায়।

গত বছরের শেষ দিকে লেবাননে ইসরায়েলি আগ্রাসনের সময় দেশটির সাধারণ মানুষের সহায়তায় নিজেদের স্বর্ণালঙ্কার দান করেছেন ইরানি নারীরা। রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন প্রদেশের মসজিদ প্রাঙ্গণে স্বর্ণালঙ্কার ছাড়াও নগদ অর্থ সংগ্রহ করা হয়।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ২০২৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ফিলিস্তিন ও লেবাননের মানুষের জন্য ইরানিদের ডোনেট করার আহ্বান জানান। এখনও সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকেই দান করে যাচ্ছেন।

একই ধরনের ঘটনা ঘটে ইরান-ইরাক যুদ্ধকালে (১৯৮০-১৯৮৮)। তখন ইরানি নারীরা তাদের ব্যক্তিগত সোনার গহনা পর্যন্ত দেশের প্রতিরক্ষায় দান করেছিলেন। এহসানের পরিবারে ঘটনাটি সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বলে মনে করা হচ্ছে। এহসানের বাবার মন্তব্য যেন তারই প্রতিধ্বনি করছে:
“আমার ছেলে শহীদ হয়েছে, কিন্তু লক্ষ্য পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। প্রতিটি ইরানি পরিবার প্রস্তুত—আমরা সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য সব কিছু উৎসর্গ করতে রাজি। ”

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।