রংপুর থেকে: যান্ত্রিকতার যুগে বাঙালির ঐতিহ্য তেলের ঘানি হারিয়ে যেতে বসেছে। সচরাচর ঘানি দিয়ে তেল মাড়তে দেখা যায় না।
দারিদ্র্যতার কারণে লেখাপড়া করা হয়নি রেজাউলের। ৮ বছর বয়স খেকে বাবার সঙ্গে কাজ করছিলেন। কিন্তু বাবার অসুস্থার কারণে ১০ বছর যাবত একাই ব্যবসা সামলাতে হচ্ছে তাকে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্য রেজাউল সবার বড়।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে রেজাউল বলেন, “বাপ-দাদার আমলে ঘানির তেলের খুবই কদর ছিল। কিন্তু বর্তমানে শত শত কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখে আমাদের এ তেলের বেচাকেনা কম। এরপরও মান ভালো বলে অনেকে নিয়মিত তেল কেনেন। কিন্তু সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় কথন ফুটপাত থেকে উঠিয়ে দেয় প্রশাসন।
রেজাউল জানায়, প্রথমে একটা গরু দিয়ে তেলের ঘানি টানার কাজ শুরু করেছিলেন তার বাবা। কিন্তু গরু দুই ঘণ্টা ঘানি টেনে দুবর্ল হয়ে পড়ে। ঘণ্টা দুয়েক গুরুকে বিশ্রাম দিয়ে আবার কাজ শুরু করতে হতো। ফলে দিনে একটি গরু দিয়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার বেশি কাজ করা সম্ভব ছিল না।
সারাদিনে ২৪ কেজি সরিষা থেকে তেল হয় মাত্র ৫ লিটার। এই তেল বিক্রি করে সংসার চালানো তো দূরের কথা, গরুর খাবার ও সরিষা কেনার টাকা জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। পরে ধার-দেনা করে আরেকাটি গরু কেনেন তিনি।
বর্তমানে ৪৮ কেজি সরিষা থেকে ১২ থেকে ১৩ লিটার তেল উৎপাদন হয়।
রেজাউল বলেন, “তেল ও খৈল বিক্রি করে দিনে ৩ থেকে ৪০০ টাকা রোজগার হয়। তাতে বাবার ওষুধ কিনে যা থাকে তাতে কোনো মতে সংসার চলে। ”
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, “অভাবের তাড়নায় আমি নিজে লেখাপড়া করতে পারলাম না। এখন একউ কারণে ভাই-বোনদেরও লেখাপড়া করাইতে পারছি না। গরীব হয়ে জন্মানই যেন একটা পাপ। ”
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১২
সম্পাদনা: কাজল কেয়া, নিউজরুম এডিটর/আরআর