ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২০ মে ২০২৫, ২২ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

বিশ্বকে চমকে দেবে দেশি রোবট!

শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৩৬, ডিসেম্বর ৯, ২০১২
বিশ্বকে চমকে দেবে দেশি রোবট!

২০১২ সালে প্রথমবার আয়োজিত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের প্রধান আকর্ষণ ছিল রোবট। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ঢুকতেই চোখে পড়ে রোবট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তরুণের দল।

তাদের চোখে উদ্ভাবনার স্বপ্ন। একদিন বাংলাদেশ থেকেই তৈরি হবে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত রোবটটি।

দশটিরও বেশি রোবট নিয়ে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে অংশ নিয়েছে বেশ কটি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যেই কয়েকটি বিশেষ রোবট নিয়ে বাংলানিউজের এ প্রতিবেদন...

বাংলা ভাষায় চলবে রোবট!

রোবট মানেই মেশিন। কম্পিউটারে প্রোগ্রামের ইশারায় চলবে এসব রোবট। কিন্তু ভয়েস সেন্সর দিয়ে রোবট চালানোর পদ্ধতি উন্নত বিশ্বে নতুন নয়। এবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন মেধাবী শিক্ষার্থীর উদ্যোগে তৈরি হয়েছে বাংলা ভাষায় নিয়ন্ত্রিত রোবট।
Robot
এ রোবটের নাম ‘ই বোট’। রোবটটি তৈরি করেছেন মো: ওয়াহিদুর রহমান, আহমেদুল্লাহ আজিজ এবং সাফায়াত হোসেন।

ই বোটের গবেষকেরা জানায়, এ রোবটটি বাংলা ভাষার কথা বলবে। প্রশ্ন করলে উত্তর দেবে। এর জন্য তাদের একটি বিশেষ অ্যালগোরিদম তৈরি করতে হয়েছে। যা সম্পূর্ণ বাংলায়।

কথায় কথায় এও জানায়, বাংলা ভাষায় এই প্রথম আমরাই অ্যালগোরিদম ডেভেলপ করেছি। বাংলা ভাষায় অ্যালগোরিদম নিয়ে আগে কেউ কাজ করেছে বলে তাদের জানা নেই।

এ রোবট মানুষের কোন কাজে আসবে? এ প্রশ্নের উত্তরে তারা জানায়, রোবটটি আপনার সম্পর্কে তথ্য অন্যকে বলতে পারবে। তবে তাকে আগে থেকেই সে তথ্য জানিয়ে রাখতে হবে। ধরুণ ঘরে কেউ নেই। আপনি বের হওয়ার আগে তাকে বলে যাবেন, আপনি কোথায় গেছেন। কেউ যখন আপনার ঘরে এসে আসবে তখন তাকে সেই তথ্য বলে ই-বোট।

এ তিন তরুণের আরও একটি আবিষ্কার হলো ‘রাফি’। এ রোবটটি সম্পর্কে তারা জানায়, থ্রিডিতে ম্যাপিং করতে সক্ষম ‘রাফি’। সে ছবি তুলবে। তবে সেটা টু ডাইমেনশনে তুলবে। সে ছবিকে সে থ্রিডিতে কনভার্ট করবে। তারপর সেটার ম্যাপ তৈরি করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে রাফি এগিয়ে যেতে পারবে। সামনে যদি কোনো বাধাও আসে সেটাও সামলে নেবে রাফি।

তরুণ এ উদ্ভাবকদের ভাষায়, এতদিন রোবট মঙ্গলগ্রহের ছবি তুলে পাঠিয়েছে। কিন্তু মঙ্গলগ্রহের ম্যাপ তৈরি করতে সক্ষম হয়নি। আমাদের রাফি মঙ্গলগ্রহের ম্যাপ তৈরি করবে নিমিষেই। এ ছাড়াও কোনো বস্তুকে লক্ষ্য করে সেখানে এগিয়ে তাকে তুলেও আনতে সফল হবে রাফি।

এ তিন তরুণ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী।

হেঁটে হেঁটেই চলবে রোবট!

বাংলাদেশের অধিকাংশ রোবটের পায়ের নিচে থাকে চাকা। তাদের হাঁটানোর চেষ্টায় বিভোর চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ব্যাটারির সাহায্যে চলতে পারা এ রোবটের নাম ‘বাই প্যাডেল রোবট’। এ প্রজেক্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজিব হাসান বাংলানিউজকে জানান, বিশ্বে সব দেশেই রোবট এখন পা দিয়ে হাঁটে। কিন্তু আমাদের দেশে কোনো রোবটকেই পা দিয়ে হাটতে দেখিনি।

ঠিক তখন মাথায় আসলো, আমরা কেন পারবো না? আমাদের রোবটকেও আমরা হাঁটাবো। আগ্রহ থেকেই আমরা এ নিয়ে কাজ শুরু করলাম। সফলও হলাম, তবে তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। আমাদের রোবট হাঁটতে পারছে। ভবিষ্যতে একে আরও সুনিয়ন্ত্রিত করতে গবেষণা চলছে।

এ রোবটটি কে তৈরি করেছেন? এমন প্রশ্নে রাজিব বলেন, অনেকেই এর সঙ্গে যুক্ত। কারও একার চেষ্টায় এ রোবট হাঁটেনি। অনেকেই কাজ করেছেন। সবার চেষ্টায় আমাদের রোবট এখন হাঁটছে। আশা করছি একদিন দৌঁড়াতেও পারবে।


শরীরের তালেই উড়বে প্লেন!

২০১২ সালে বাংলানিউজ এবং ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) আয়োজিত ‘জাতীয় উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতায়’ প্রথম স্থান অধিকার করা ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ‘প্রজেক্ট কন্ট্রোল স্কিম রেভ্যুলেশন’ স্থান পেয়েছে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে।

এ গেইমের প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে এখানে ভাষা এবং শরীর নাড়িয়ে গেম খেলতে হবে।

কমপিউটারে যারা গেম খেলে তারা শারীরিকভাবে অলস হয়ে পড়ছে। যদি এমন গেম হয়, যেখানে হাত নাড়াতে হবে, মুখেও কথা বলতে হবে। তাহলে বিষয়টা হয় একেবারেই অন্যরকম।

মানে হলো, আপনি গেম খেলছেন। প্লেন উড়ছে; আপনি ডানদিকে প্লেনটিকে নিতে চান, শুধু হাতকে ডান দিকে সড়িয়ে নেবেন। সঙ্গে সঙ্গে প্লেনটি ডান দিকে ঘুরে যাবে। আবার প্রয়োজনে প্লেনটির গতি বাড়াতে মুখে বলতে হবে, ‘গো ফাস্ট’। দেখবেন, প্লেনটি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং এ গেমটি খেলার জন্য মেধার সঙ্গে শরীরের পুরোপুরি ব্যবহার হচ্ছে।

এমনই এক গেম তৈরি করেছে তিন বন্ধু। এরা হচ্ছেন রাইসুল করিম, ইমরান ফরিদ এবং কামরান ওয়ালিউল্লাহ। তিনজনই কমপিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী। এ প্রকল্পটি তৈরি করতে সহযোগিতা করেছেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কমপিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মুমিত খান।

রাইসুল বাংলানিউজকে বলেন, এ গেমটির জন্য প্রয়োজন ছবি ইনপুট দেওয়া। ওয়েব ক্যামেরার মাধ্যমে ইমেজ ইনপুট নেওয়া হয়। ভাষা কিংবা শব্দ ইনপুট দিতে আছে মাইক্রোফোন। তবে এ গেমটির প্রধান বিষয় গেম ইঞ্জিনটিকে কাস্টোমাইজ করা হয়েছে।

ইঞ্জিন জেএনই-থ্রির ভেতর দেওয়া হয়েছে শব্দ, ভাষা এবং ছবি। এ ছাড়াও সম্পূর্ণ নেটওয়ার্কভিত্তিক গেম এটি। দুটি কমপিউটারের নেটওয়ার্ক তৈরি করে খেলা সম্ভব।

এ উৎসবে আরও ভিন্ন ধরনের রোবট অংশ নেয়। এ রোবট নিয়ে দাড়িয়ে তরুণরা একদিন বিশ্ব দরবারে নিজেদের আবিষ্কার পৌঁছে দিতে প্রস্তুত। তারাই জানালো, অচিরেই বাংলাদেশের রোবট দেখে চমকে যাবে বিশ্ব।

বাংলাদেশ সময় ১৭৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১২
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।