ঢাকা: উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণ, আজও যেন এক শোকাহত আঙিনা। যে আঙিনায় একসময় ভেসে আসত কোমলমতি শিশুদের উচ্ছ্বসিত হাসি, টিফিনের সময়ের কোলাহল, আর শিক্ষকদের স্নেহমাখা ডাক—সেখানে এখন এক গভীর নীরবতা।
প্রাণোচ্ছল এই আঙিনায় এমন শোকের পাথর ফেলেছে ২১ জুলাইয়ের অভিশপ্ত দুপুর। সেদিন যুদ্ধবিমান আছড়ে পড়লে নিভে যায় ৩৩টি প্রাণ। কান্নায় ভেঙে পড়ে নিহত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বজন-বন্ধু, আর স্কুলের প্রতিটি কোণ। দেয়াল, জানালা, বারান্দা—সব যেন সেই শোকে কেঁপে মুষড়ে পড়ে।
আকস্মিক ওই দুর্ঘটনা কেবল মানুষকেই নয়, যেন ছুঁয়ে দিয়েছিল প্রকৃতিকেও। স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লম্বা নারকেল গাছগুলোর একটি উপড়ে পড়েছে পুরোপুরি। আর কয়েকটি গাছের ডাল-পাতা ঝরে পড়ে আছে মাটিতে, যেন গাছগুলোও হারিয়েছে তাদের প্রিয় সঙ্গীদের।
তবু ঠিক এই বেদনার আবরণেই প্রকৃতি নীরবে লিখে দিল এক অদ্ভুত আশার গল্প। একটি নারকেল গাছের ধুলো-মাখা শুকনো পাতার আড়াল ভেদ করে উঁকি দিয়েছে একগুচ্ছ হালকা হলুদ ফুল।
হয়তো প্রথমে কেউ খেয়াল করেনি। যেদিন নজরে এলো, মনে হলো—এ যেন প্রকৃতিরই বার্তা। যেন বলছে, ‘চল আবার গাই জীবনের জয়গান’
স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়ানো এক অভিভাবক ফুলের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। চোখ যেন ছলছল করছে, কণ্ঠ কাঁপছে—“আমার ছেলেটা আর ফিরে আসবে না… কিন্তু এই ফুল দেখে মনে হয়, হয়তো সে কোথাও আছে। ”
স্কুলের সাবেক এক শিক্ষক নীরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন গাছটির নিচে। চোখে ভেসে উঠছিল হারিয়ে যাওয়া মুখগুলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, “এটি কেবল একগুচ্ছ ফুল নয়—এটি আমাদের হারিয়ে যাওয়া মুখগুলোর জন্য প্রকৃতির শ্রদ্ধাঞ্জলি। ”
সেদিন বৃষ্টিভেজা দুপুরে, ধূসর আকাশের নিচে নারকেল গাছে ফুলগুলো যেন বাতাসে দুলছিল। চারপাশে শোক, অশ্রু আর ভারী নিঃশ্বাসের আবহ। এর মধ্যেই চুপি চুপি যেন কেউ বলছিল, একদিন মাইলস্টোন স্কুলের আঙিনা আবার ভরে উঠবে শিশু-কিশোরদের হাসি-উচ্ছ্বলতায়। ঠিক যেভাবে শোকে পাথর স্কুল আঙিনায় ফুটেছে এই আশার ফুল।
জিএমএম/এইচএ/