ঢাকা: দক্ষিণ দিল্লির ডেপুটি কমিশনার অব পুলিশ (ডিসিপি) ছায়া শর্মা চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার মেডিকেল ছাত্রীকে দেখতে শনিবার হাসপাতালের আইসিইউ কেবিনে যান। গত কয়েকদিনে আরও কয়েকবার তাকে সেখানে যেতে হয়েছে হতভাগা ওই নারীকে দেখতে।
কেবিনে ঢুকেই ছায়া বিছানায় শায়িত ভিকটিমকে শুভেচ্ছা জানান। সামান্য মাথা নেরে শুভেচ্ছার জবাব দেন তরুণী। এসময় তিনি কথা বলারও চেষ্টা করেন কিন্তু কমিশনার তাকে থামিয়ে দেন। কারণ, ভয়াবহ গ্যাংরেপের শিকার হয়ে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতের প্রচণ্ডতায় ওই নারী কোমায় চলে গিয়েছিলেন। গত দু’দিন যাবত চেতনা ফিরে পেলেও তিনি এখনও আশংকামুক্ত নন।
দিল্লির সফদর জং হাসপাতালের আইসিইউ কেবিনে উপস্থিত অন্যান্য কর্মকর্তারা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ডিসিপি ছায়া ভিকটিমকে প্রশ্ন করেন, হাউ আর ইউ?
জবাবে মাথা নেড়ে উত্তর দেওয়ার পর তিনি কথা বলতে চাইলে ডিসিপি বলেন, প্লিজ, ডোন্ট স্পিক!
এরপর ওই তরুণীকে তার নামে ধরে সম্বোধন করে তিনি বলেন, অল ক্রিমিনাল্স হ্যাভ বিন কট (অপরাধীদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে)। একথায় তরুণীর চেহারায় স্বস্তির ছাপ লক্ষ্য করা যায়। তিনি সঙ্গে সঙ্গে দু’চোখ বন্ধ করে ফেলেন, সেখানে দেখা দেয় কষ্ট আর স্বস্তি মাখানো আবেগ। গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোঁটা লোনা জল।
পুলিশ কর্মকর্তারা এসময় নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় ভিকটিমকে অসম্ভব সাহসী একজন মানুষ বলে স্বীকার করেন।
এদিকে, পুলিশ সূত্র জানায়, সমগ্র দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করা ওই ভয়াবহ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ৬ লম্পটের বয়স ১৭ থেকে ৩৪-এর মধ্যে। এদের মধ্যে ৪জনকে আগেই গ্রেফতার করা হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক রবিকে (ছদ্মনাম) গ্রেফতার করা হয় গত বৃহস্পতিবার রাতে। পুলিশ জানিয়েছে তাকে বিহার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ন্যাক্কারজনক ওই ঘটনা ঘটিয়ে সে বদায়ুন অর্থাৎ বিহারে (ইউপি) পালিয়ে গিয়েছিল। ঘটনার দিন (রোববার) সে ওই গণধর্ষণের মূল হোতা বাসচালক রামসিংহের কাছ থেকে নিজের পাওনা টাকা নিতে এসেছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে। পরে একপর্যায়ে সে গণধর্ষণে অংশ নেয়। তবে বয়স কম হওয়ায় তার বিচার জুভেনাইল কোর্টে হবে বলে জানা গেছে। আদালত সূত্র জানায়, গত শুক্রবার তাকে জুভেনাইল জাস্টিস কোর্টে সোপর্দ করা হয়।
অপর অভিযুক্ত অক্ষয় ঠাকুরকে বিহার পুলিশের সহায়তায় আওরঙ্গাবাদ থেকে গ্রেফতার করা হয়। একই সঙ্গে ভিকটিমের জালিয়ে দেওয়া কাপড়-চোপড়, মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, এটিএম কার্ডসহ পার্সটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুর্বৃত্তরা তাদের অপরাধ গোপন করার লক্ষ্যে ঘটনাস্থল ওই বাসটি ধুয়ে মুছে ফেলেছিল এবং তরুণীর ছিড়ে নেওয়া কাপড়-চোপড় জ্বালিয়ে দিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত রোববার দিল্লিতে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ভ্রমণরত ২৩ বছর বয়সী ডেন্টাল ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে বাসের চালকসহ ৬ দুর্বৃত্ত। এসময় সঙ্গে থাকা ওই তরুণীর ছেলে বন্ধুকে প্রচণ্ড মারধর করে দুর্বৃত্তরা। পরে তাদের দু’জনকে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয়। অভিযুক্ত সবাইকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় রাজধানী দিল্লিসহ সর্বত্র ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। গণধর্ষণের শিকার তরুণী এখনও আশংকামুক্ত নন। তবে ক্রমশ তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
- দিল্লিতে গণধর্ষণ : প্রতিবাদকারীদের বিক্ষোভে পুলিশের জলকামান, লাঠিচার্জ
- আগুনে ঘৃতাহুতি! :দিল্লিতে এবার বিদেশিনী ধর্ষিত
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, ২২ ডিসেম্বর, ২০১২
একে