যশোর: ফুলের সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত যশোরের গদখালি এখন ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। বসন্ত বরণ, ভালবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে এ অঞ্চলের ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীদের মুখে এখন হাসির ঝিলিক।
সোম ও মঙ্গলবার দু’দিনে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা প্রায় ৩ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। বুধবার বসন্ত বরণ ও বৃহস্পতিবার ভালাবাসা দিবস উপলক্ষে আরও দেড় থেকে দুই কোটি টাকার ফুলের বেচাকেনার আশা করছেন ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
আর বসন্ত বরণ ও ভালবাসা দিবস উপলক্ষে গদখালিতে সব ফুলের দাম এখনই দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
গদখালির ফুলচাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, বসন্ত বরণ ও ভালবাসা দিবসকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে বাজার জমে উঠেছে। যশোরে গদখালি থেকে দেশের ৫৪টি জেলায় ফুল সরবরাহ করা হচ্ছে। এবার দাম এবং বেচাকেনা দুটোই ভাল হওয়ায় ফুল চাষিরা দারুণ খুশি।
যশোরের সদর, ঝিকরগাছা, শার্শা, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার ৬০টি গ্রামে এখন বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করেন কৃষকরা। এসব এলাকায় রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমলিকা, ক্যালেন্ডেলা, লিলিয়ামসহ নানা জাতের ফুলের চাষ হচ্ছে।
তবে, ফুল চাষের বিপ্লব ঘটেছে ঝিকরগাছা এলাকার গদখালীতে। গদখালী এলাকায় এখন প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হচ্ছে। আর এ ফুল চাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত প্রায় ৫ হাজার কৃষক।
জানা গেছে, প্রতিদিন এ অঞ্চলের শতশত কৃষক তাদের উৎপাদিত ফুল বিক্রির জন্য গদখালী পাইকারি বাজারে নিয়ে আসেন। ব্যবসায়ী ও ফাঁড়িয়ারা এই ফুল ক্রয় করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহীসহ সড়ক পথে দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করছেন।
কৃষকদের উৎপাদিত ফুল এই অঞ্চলের প্রায় ৫শ’ ফুল ব্যবসায়ী খুচরা ও পাইকারিভাবে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ বিভিন্নস্থানে ফুল সরবরাহ করে থাকেন।
বসন্ত উৎসব ও ভালবাসা দিবসকে সামনে রেখে আরও দু’দিন আগে থেকে গদখালী এলাকায় ফুল বেচাকেনা জমে উঠেছে। সারাদেশের ব্যবসায়ীরা এখন ছুটছেন গদখালী ফুল বাজারে। বাড়তি চাহিদার কারণে দামও বেড়ে গেছে ফুলের। প্রায় সব রকমের ফুলই এখন দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ী ও ফুল চাষিরা।
মঙ্গলবার গদখালী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রজনীগন্ধা স্টিক ৫ টাকা, গোলাপ ৯/১০ টাকা, গ্লাডিওলাস কালারভেদে ৫ থেকে ১৫ টাকা, জারবেরা ১৫ থেকে ২৫ টাকা এবং দেড়শ’ থেকে ২শ’ টাকা এক হাজার গাঁদাফুল বিক্রি হচ্ছে।
অথচ কয়েকদিন আগেও এসব ফুল অর্ধেক দামে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি একশ’ পিচ ক্যালেন্ডোলা দেড়শ’ টাকা ও রকস্টিক ২শ’ টাক করে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে বাড়তি দরের হাওয়া লাগলেও তা গায়ে মাখছেন না ব্যবসায়ীরা। ফুল কেনাবেচায় এর প্রভাব পড়েনি। বরং সারাদেশের ব্যবসায়ীরাই ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন নিজ গন্তব্যে।
গদখালী এলাকার কাগমারি গ্রামের ফুল চাষি রকিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তিনি গ্লাডিওলাস বিক্রি করেছেন দেড় লাখ টাকার।
হাড়িয়া গ্রামের ফুল চাষি শাহজাহান আলী বাংলানিউজকে জানান, বাজারে ফুলের বেচাকেনা বেশ ভালো। গত দু’দিনে তিনি দু’লাখ টাকার জারবেরা ও গ্লাডিওলাস বিক্রি করেছেন।
সৈয়দপাড়ার রমজান আলী এদিন ৪০ হাজার টাকার গোলাপ ফুল বিক্রি করেছেন। তার মতে, এবার বাজার ভালো। বেচাকেনাতেও তারা খুশি। শুধু শাহজাহান কিম্বা রমজান আলী নন, গদখালী এলাকার প্রায় ৫শ’ ফুল চাষির সবাই কমবেশি ফুল বিক্রি করেছেন এ দু’দিনের বাজারে। আর সব মিলিয়ে এ দু’দিন ফুল বেচাকেনা হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকার।
আগামী আরও দু’দিন বাজারের এই চাঙ্গা ভাব বিরাজ করবে বলে ব্যবসায়ী ও চাষিরা আশা করছেন। এ দু’দিনে আরও দেড় থেকে দু’কোটি টাকার ফুল বিক্রির প্রত্যাশা তাদের।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপপরিচালক শেখ হেমাযেত হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এ বছর গদখালীতে ১৫শ’ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের ফলন ভালো হয়েছে।
এছাড়া এই অঞ্চলের অনেক কৃষক বাইরে থেকে ফুল চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন। সবমিলিয়ে সচেতন হওয়ায় ফুলের আবাদের কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৩
সম্পাদনা: প্রভাষ চৌধুরী, নিউজরুম এডিটর