ইতিহাসে বিতর্কিত পুরুষ কম নেই। তাদের নিয়ে আলোচনাও কম হয়নি।
সমাজ গঠনের জন্য তার অবদান অসীম এবং উল্লেখ্য। আবার পাশাপাশি অনেকেরই স্থির বিশ্বাস যে চেঙ্গিস খানের মত অত্যাচারী সেনানায়ক ইতিহাসে বিরল এবং তিনি শুধুমাত্র ঘৃণারই যোগ্য। ঠিক এজন্যই তিনি বিতর্কিত।
মোঙ্গোল জতির প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খান এখন থেকে সাত শতাব্দী আগে তার দিগ্বিজয় শুরু করেছিলেন। এই দিগ্বিজয়ের ইতিহাস অনেকের কাছে বিশেষ করে মোঙ্গোলদের কাছে লজ্জার ইতিহাস হয়ে আছে।
১১৬২ খ্রিষ্টাব্দে চেঙ্গিস খানের জন্ম মোঙ্গোলিয়ার উত্তরপূর্ব এলাকার দূর প্রত্যন্ত একটি গ্রামে। দীর্ঘদেহী এবং অত্যন্ত বিশাল ছিল শরীর। ঐতিহাসিক নাজজোনি লিখেছেন যে, চেঙ্গিস খানের চোখ ছিল কাটা, বিড়ালের মত অত্যন্ত সতর্ক ছিল তার দৃষ্টি। মোঙ্গোলিয়ান ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষাতে তার দখল ছিল না। তিনি লিখতে শিখেননি।
ঐতিহাসিক বার্থহোলডের ভাষায়, চেঙ্গিস খান আক্ষরিক অর্থেই নিরক্ষর ছিলেন, কিন্তু সামাজিক প্রয়োজনে এবং সামরিক প্রয়োজনের প্রতি তার দৃষ্টি ছিল প্রখর। ডাকপিওনের ব্যবস্থা তিনি তার রাজ্য জুড়ে প্রবর্তন করতে পেরেছিলেন।
পৃথিবীর ইতিহাসে চেঙ্গিস খান একজন অপ্রতিদ্বন্দী যোদ্ধা এবং সেনানায়ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। ইতিহাসের ধারাও অবশ্যই তিনি পরিবর্তন করতে সমর্থ হয়েছিলেন। মোঙ্গোলিয়ার স্তেপ অঞ্চলের মধ্যাঞ্চলে চেঙ্গিস খান তার রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। তার রাজধানীর নাম ছিলো কারাকোরাম।
কারাকোরামের শ্বেত প্রাসাদে রত্নখচিত সিংহাসনে বসে তিনি দূর চীন, ইয়োরোপ, পারাস্য এবং ভারতবর্ষের রাষ্ট্রদূতদের সাদর সম্ভাষণ জানাতেন। সেখানে বসেই তিনি পরিকল্পনা করতেন পরবর্তী যুদ্ধের। সেই সব যুদ্ধের পরিণতিতে মোঙ্গোল বাহিনী পৌঁছে গিয়েছিল ভিয়েনার দ্বারপ্রান্ত পর্যন্ত। এই কারাকোরাম শহর পরবর্তী সময়ে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছিল তার প্রতি প্রতিশোধ স্পৃহায়। সেই ধ্বংসস্তুপ আর কোনোদিন নতুন করে সৃষ্টি হয়নি।
মোঙ্গোলিয়ান রাষ্ট্রের বর্তমান রাজধানী উলান বাটোরে চেঙ্গিস খানের একটি প্রতিকৃতি ছাড়া আর কিছুই দৃশ্যমান নেই।
বলা বাহুল্য স্তেপ অঞ্চলের অসংখ্য ছোট দল উপদলের সমন্বয় সাধন করে বিশাল একটি রাজত্ব স্থাপনের কৃতিত্ব চেঙ্গিস খানের ছিল। মোঙ্গোল অঞ্চলের একটি সুনির্দিষ্ট জাতিতে পরিণত করার পর চেঙ্গিস খান অতঃপর তার সুশিক্ষিত সেনাবাহিনী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন দিগ্বিজয়ে।
ধীরে ধীরে মধ্য এশিয়া থেকে তার রাজত্ব বিস্তৃত হল পারস্য পর্যন্ত। পারস্য অধিকার করার পর তিনি জয় করলেন রাশিয়া, পূর্ব-ইউরোপের দেশগুলি। অন্যদিকে চীন এবং ভিয়েতনাম পর্যন্ত তার সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়ে দেরী হল না। ১২২৭ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ৬৫ বছর বয়সে মারা যাওয়ার সময় পর্যন্ত তিনি নিজেকে ‘মানব জাতির সম্রাট’ অখ্যায় ভূষিত করেছিলেন।
সম্প্রতিকালে চেঙ্গিস খানের প্রতি যুবক মোঙ্গোলদের মনোভাব একটু বদলেছে। তারা চেঙ্গিস খানকে আলেকজান্ডার দি গ্রেটের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেছে।
পৃথিবীর ইতিহাসে চেঙ্গিস খানের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গর্ব করতে চাইছে। উলান বাটোরের একজন অধ্যাপক লিখেছেন, তার শিক্ষার্থীরা ‘সিক্রেট হিটলার’ পাঠ করার পর চেঙ্গিস খানকে নিয়ে মনে মনে খুবই গর্ববোধ করে থাকে। মানুষ হিসেবে, যোদ্ধা হিসেবে তাকে বিশাল পুরুষ হিসেবে ভাবতে চায়।
বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৩
সম্পাদনা: শেরিফ সায়ার