ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

গ্রীষ্মকালের চাষেও চাহিদা মেটাবে শিম-টমেটো!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৫১, জুলাই ১২, ২০১৩
গ্রীষ্মকালের চাষেও চাহিদা মেটাবে শিম-টমেটো!

সিলেট: শুধু শীতকাল নয়, এখন থেকে গ্রীষ্মকালেও চাষ হবে শিম ও টমেটোর। আমিষের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ এই শিম ও টমেটোর শীতকালীন চাষ গ্রীষ্মকালেও শুরু হয়েছে সিলেটে।

ছড়িয়ে পড়েছে একের পর এক কৃষকের কাছে।

বাণিজ্যিকভাবেও এর চাষ লাভজনক। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে যে আয় করা যাবে, সে চাহিদা সিলেটে বসেই মেটানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

জানা গেছে, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) হর্টিকালচার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম মাঠ গবেষণার মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে টমেটো ও শিম চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন। প্রাথমিকভাবে কৃষকরা তার কাছ থেকে বীজ নিয়ে চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
 
এর মাধ্যমে সিলেটে পতিত জমিগুলো লাভজনক কৃষিভিত্তিক ফসল উৎপাদনে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের কোর গবেষণা মঞ্জুরি ২০১২-১২ এর অর্থায়নে ড. শহীদুল ইসলাম বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক ও পুষ্টিকর শিম-টমেটোর চাষাবাদ সিলেটে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, “সাধারণত শিম ও টমেটো শীতকালে চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে যে জাতের বীজ রয়েছে, অক্টোবরের আগে এর ফুল আসে না। আর গ্রীষ্মকালে দিনের দৈর্ঘ্য বেশি হওয়ার কারণে এ সময় এর চাষ হয় না।

তাই, গ্রীষ্মকালে শিম ও টমেটো চাষ সম্ভব করতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেয়। পরবর্তীতে গবেষণার মাধ্যমে বেশকিছু জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়; যার মাধ্যমে গ্রীষ্মকালে শিম-টমেটো চাষ করা যাচ্ছে। ”

প্রায় দুই বছর ধরে সিলেট অঞ্চলে এর ফলন সম্ভাব্যতা যাচাই ও গবেষণা চালাচ্ছেন ড. শহীদুল ইসলাম। ইতোমধ্যে, কৃষকদের কাছ থেকে ভালো ফলাফলও পেয়েছেন তিনি।

তাই, এটা সফল এবং সিলেট অঞ্চলে সম্ভাবনাময় বলে জানান ড. শহীদুল।

তবে বীজের অপ্রতুলতা আছে জানিয়ে এ অধ্যাপক বলেন, “বীজের পর্যাপ্ত উৎপাদনের মাধ্যমে অপ্রতুলতা দূর করতে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে। ”

তবে এখন কৃষক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের হর্টিকালচার বিভাগে অথবা সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্টিকালচার বিভাগে যোগাযোগ করে কৃষকরা এই বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন।

প্রোটিন সমৃদ্ধ শিম সিলেট অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে এবং সারা বাংলাদেশে এর চাষ হবে জানিয়ে ড. শহীদুল বলেন, “পরীক্ষামূলকভাবে শিমের আরো কয়েকটি উন্নত জাত উৎপাদন করা হচ্ছে, যা পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ”

গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষাবাদও এখন সিলেটে সম্ভব করে তুলেছেন ড. শহীদুল ইসলাম।

তিনি সিলেট অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য গ্রীষ্মকালীন টমেটোর জাত বারি টমেটো-৪ এবং বারি টমেটা-৫ ব্যবহার করেন। টমেটোর চারাগুলোকে তিনি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে (যেমন গ্রাফটেড, নন-গ্রাফটেড, হরমোনাল, নন-হরমোনাল ইত্যাদি) মূল জমিতে লাগান।

তার মতে, এই হাইব্রিড জাতগুলোতে হরমোন ছাড়াই লাভজনক ফলন পাওয়া যাবে। তবে টমেটোটন নামে হরমোন প্রয়োগ করলে এর ফলন আরো বৃদ্ধি সম্ভব।

সিকৃবির উদ্যান তত্ত্ব বিভাগ জানায়, সঠিক পরিমাণ সার ব্যবহার ও গাছের পরিচর্যা হলে গ্রীষ্মকালেই প্রতি এক হেক্টরে ৪০ থেকে ৫০ টন টমেটো হতে পারে।

সিলেটসহ সারা বাংলাদেশে জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত কোনো টমেটো পাওয়া যেতো না। শীতকালীন কিছু টমেটো সংরক্ষণ করে সরবরাহ করা হতো, যার বাজার মূল্য ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হতো।

এই বাজার মূল্য ধরেই গ্রীষ্মকালীন টমেটো প্রতি হেক্টরে পাঁচ লাখ ১৮ হাজার পাঁচশ টাকা খরচ করে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

শুক্রবার সকালে বাংলানিউজের এ প্রতিবেদককে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ের মাঠ ঘুরে দেখিয়ে ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, “গ্রীষ্মকালীন শিমের বৈশিষ্ট্য হলো ৪০ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে ফুল আসবে। আর ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে প্রথম ফলন তোলা যাবে। এটি সবুজ রঙের হয়। এই শিম যথেষ্ট পুষ্টিকর ও স্বাদেও অসাধারণ। তুলনামুলক কম খরচ পড়ে, যা অত্যন্ত লাভজনক। ”

মাঠে কথা হয়, সিলেট শহরতলীর খাদিমপাড়া কল্লগ্রামের কৃষক মিসবাহ উদ্দিনের সঙ্গে।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের অনেক জায়গা বর্ষাকালে পতিত থাকে। কিন্তু, শিম চাষ করে আর পতিত থাকছে না জায়গা। ”

এবার ৩১ শতক জায়গায় শিম চাষ করেছেন এই কৃষক। প্রতি সপ্তাহে ৩০ কেজি শিম বিক্রি করতে পারেন তিনি। আর কেজিতে শীতকালের চেয়ে বর্ষাকালে ১০০ টাকা বেশি লাভ পাচ্ছেন বলে জানান মিসবাহ উদ্দিন।

১১০ শতক জমিতে এবার শিম চাষ করেছেন বিশ্বনাথ উপজেলার ৬নং ইউনিয়নের জাইয়া গ্রামের কৃষক মুছব্বির মিয়া।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে যে আয় হয়, পতিত জমিতে বর্ষাকালে শিম চাষ করে সে আয় সম্ভব। এটার একটাই সমস্যা ফলন কিছুটা কম পাওয়া যায়। তবে এর বাজার দর খুব ভালো। ”
 
তিনি আরো বলেন, এক সময় এক মণ বিক্রি করেও একশ ৪০ টাকা পাওয়া যায় না। কিন্তু, বর্ষাকালে এক কেজি শিম আমি একশ ৪০ টাকায় বিক্রি করছি।

মাঠ দিবস:

শুক্রবার সকালে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মাঠ দিবস’ আয়োজন করে কৃষকদের শীতকালীন শিম ও টমেটো চাষাবাদ সম্পর্কে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে উদ্ভিদ তত্ত্ব বিভাগ।

মাঠ দিবসে এসে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা কৃষি অফিসে কর্মরত সমরেশ পাল বাংলানিউজকে জানান,  এখন গ্রীষ্মকালে শিম ও টমেটো চাষাবাদ করে সহজেই লাভবান হতে পারবেন কৃষকরা। দেখা যাচ্ছে, এক কেজি শিম গ্রীষ্মকালে একশ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর শীতকালে মাত্র ৪০ টাকায়। তাহলে সমান পরিশ্রমে অধিক আয় করার সুযোগ পাচ্ছেন কৃষকরা। এতে ফলন একটু কম হলেও গড় ফলনের মূল্য অনুপাতে লাভবান হওয়া যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৩
এসএ/সম্পাদনা: বেনু সূত্রধর, নিউজরুম এডিটর, আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।