ভাসমান জীবন তাদের। লগি ঠেলে দুরন্ত গতিতে এভাবেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন গাঁথা সমাজের এই যাযাবর শ্রেণীর মানুষগুলোর।

নদীর ময়লা কালো জলে বিকেলে চলছে দুপুরের খাবারের অয়োজন। সকাল থেকে পাড়ায় ফেরি করেন কাচের চুড়ি, নাকের নোলক, আলতা, ফিতা আরও কতকি...।

ধোওয়া, কাটা-বাছা শেষ। চলছে রান্না। আমরা কাছে যেতেই অনেকবার বললেন তাদের সঙ্গে খাওয়ার জন্য। আন্তরিকতার কোনো কমতি নেই তাদের।

বিকেলটা তাদের খাওয়া-দাওয়া, খেলা আর আড্ডায় কাটে। একঘরে যখন চলছে রান্না, অন্যঘরে তখন চলছে তাস পিটিয়ে আর লুডু খেলে জোর আড্ডা। না পাওয়ার আক্ষেপ তাদের মধ্যে খুব বেশি দেখা গেলো না। সরকারি সাহায্যেও নেই খুব আগ্রহ। তবে তাদের জিম্মি করে অনে ফায়দা লুটছে বলে জানালেন কেউ কেউ।

এসবের মধ্যেও শিশু রাব্বির পড়াশোনার আগ্রহের কমতি নেই। পড়ে ক্লাস ফাইভে। নিয়মিত স্কুলে যায়, প্রাইভেট পড়ে। রেজাল্টও বেশ ভালো। জানে নানা ধরনের হাতের কাজ, আাঁকাআঁকি। বড় হয়ে কি হতে চাও জানতে চাইলে অত্যন্ত শুদ্ধ ভাসায় জানালো, বড় হয়ে আঁকতে চাই।

এটাই তাদের বসতি। এই তাদের জীবনের সব সম্পদ। রোদ, ঝড়, বৃষ্টি, শীত এভাবেই কাটে। তবু তারা খুব অখুশি নয় বলে জানালেন। বললেন, ভালা আছি, সাতে পাঁচে নেই। দিনে সত্তর, আশি যা রোজগার করি তাতেই দিন চইল্যা যায়।

নাম তার অরুণা। গোষ্ঠীর সবাই তাকে নায়িকা অরুণা বিশ্বাস বলেই ডাকেন। তিনি এখানকার গোষ্ঠীর মধ্যমণি। প্রায় সব না থাকার জীবনেও কেউ নেই তার। সবাইকে আনন্দ দেন, স্বপ্ন দেখান। নিঃসঙ্গতা এভাবেই উপভোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৩