কেমন হবে বিয়ের অনুষ্ঠানটি, কোথায় করা হবে আয়োজন, কেমন করে আপ্যায়িত করা হবে অতিথিদের- এমনতর কত প্রশ্নই না ঘুরপাক খায় হবু বর-কনেদের মনের ভেতর। তাদের পরিবারেরও তো চিন্তার অন্ত নেই।
বছর বিশেক আগেও জিরাকপুর ছিল ভারতের আর দশটি পাড়াগাঁর মতোই। হরিয়ানা ও পাঞ্জাব রাজ্যের যৌথ রাজধানী চন্ডিগড়ের খুব কাছাকাছি এর অবস্থান হলেও গ্রামের নিবিড়তায় আচ্ছন্ন ছিল জিরাকপুর। এই গ্রামটিকে নিয়ে এখন শুধু আলোচনাই হয় না, হয় অনেক জল্পনা-কল্পনা। কেননা, জিরাকপুর যেন আজ ভারতের অন্য এক রাজধানী।
তবে এই রাজধানীতে নেই কোন মন্ত্রী-মিনিস্টারের অফিস-আদালত। এখানে বসেন না কেউ শাসক হয়ে। কিন্তু রাজা আসেন পারিষদ নিয়ে, আবার চলেও যান। শুধু সঙ্গে যোগ হন রানী। ‘আমরা সবাই রাজা’র মেজাজ থাকে সবার ভেতর। কেননা, এখানকার চারপাশটাই তো রাজকীয়। এসবই আপনার জীবনের মধুময় স্মৃতিটুকুকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য।
ঐতিহ্যগতভাবেই পাঞ্জাবি বিয়েতে থাকে রাজকীয় আয়োজন। পোশাকে, অলঙ্কারে থাকে ঐতিহ্যের ছোঁয়া। খাবার-দাবার তো আছেই। তবে হাল-ফ্যাশনের অনুসরণও করেন অনেকেই। এ সবকিছুই ভাবনায় রেখে সাজানো হয়েছে জিরাকপুর। এখন ছোট-বড় মিলিয়ে ৫৫টি রিসোর্ট আছে এখানে। এ বছর যোগ হবে আরো দশটি। চার থেকে দশ একর পর্যন্ত বিস্তৃত একেকটি রিসোর্ট। ১ হাজার থেকে ১৫ হাজার অতিথিকে আপ্যায়িত করা যায় একসাথে।
এতসব বৈশিষ্ট্যের কারণে জিরাকপুর খ্যাতি পেয়েছে ভারতের বিয়ের রাজ্যের ‘রাজধানী’ হিসেবে। স্থানীয় ভারতীয়রাও যেমন আসেন তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানটি এখানে আয়োজন করতে, তেমনি আসেন অভিবাসীরাও। তাই বর-কনেদের সাধ ও সাধ্য মোতাবেক সাজানো হয় অনুষ্ঠানস্থল।
কেউ কেউ অনুষ্ঠানস্থলটি সাজান প্রাচীন মিশরীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী, কেউ বা সাজান রোমান স্টাইলে। আর ভারতের নিজস্বরূপ তো রয়েছেই। ‘সত্যিই, জিরাকপুর বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য একটি আদর্শ স্থান হিসেবে গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে, যাদের সামর্থ্য আছে,’ মন্তব্য একটি রিসোর্ট মালিক ধমিন্দর শর্মার। ২০০৮ সালে তিনি নিজের বিয়ের অনুষ্ঠানটি করেছিলেন এখানে।
রিসোর্ট মালিকদের হিসেবে, প্রতি বছর ৮০০ থেকে ৯০০ বিয়ের অনুষ্ঠান হয় জিরাকপুরে। তাদের মতে, চন্ডিগড়ের হোটেলগুলোতে বড়জোর একহাজার অতিথিকে দাওয়াত দেওয়া যায়। তাই আজ জিরাকপুরের এত কদর। এখানে বিয়ের একেকটি সেট সাজাতে খরচ হয় ভারতীয় মুদ্রায় ২০ লাখ থেকে ১ কোটি রুপিরও বেশি। আর এক দিনের ভাড়া গুনতে হয় ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ রুপি।
সূত্র: আইএএনএস
বাংলাদেশ সময় ১৫৩০, জানুয়ারি ১৩, ২০১১