হাকালুকি হাওরপারে নিরাপদ আবাসের খোঁজে বারবার আবাসস্থল পাল্টাচ্ছে অতিথি পাখির দল। তারপরও শিকারিদের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পানকৌড়ি, বকসহ আকাশে রংধনুর সাজে উড়ে বেড়ানো সুদুর সাইবেরিয়া থেকে আসা এসব পাখির দল।
জানা যায়, বছর চারেক ধরে হাকালুকি হাওরে আসা বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পাখি বড়লেখার সুজানগর সালদিগা গ্রামের বরহুম মিয়ার বাড়িতে গড়ে তোলে তাদের আশ্রয়ের নীড়। আর পাখির অভয়াশ্রম রক্ষায় বরহুম মিয়াসহ স্থানীয় পাখিপ্রেমীরা এ বাড়িটি ঘিরে শিকারিদের পাখি শিকার বন্ধে পাহারা চৌকিও বসান। ভোরবেলা এসব পরীয়ায়ী পাখির খাদ্যের খোঁজে দল বেঁধে ওড়া আর সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকরা ভিড় জমাতেন বরহুম মিয়ার বাড়িতে। কিন্তু এখানে শিকারিদের উৎপাতের কারণে পাখিরা গত ডিসেম্বরের শেষার্ধে আবাসস্থল পাল্টে এক কিলোমিটার দূরে রহিম বখতের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। পরে জানুয়ারি মাসের শুরুতে ফের নীড় পাল্টে আবাস গড়ে উপজেলার নিউ সমনবাগ চা বাগান সংলগ্ন মনিপুরী পাড়ায়। কিছু পাখি অবস্থান নেয় গাংকুল গ্রামের গোলাম মুহিব চৌধুরীর বাড়িতে।
সম্প্রতি মনিপুরি পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, হাজারো পরিযায়ী পাখির উড়াউড়ির এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের পর থেকেই পাখির দল প্রায় ১৫ কিমি দূরের হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন বিল থেকে ফিরতে শুরু করে নীড়ের পথে।
বড়লেখার দক্ষিণভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক পাখিপ্রেমী গোলাম মুহিব চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, পাখিদের গড়ে উঠা বিভিন্ন অভয়াশ্রমে এলাকার লোকজন পাখি নিধন বন্ধে পাহারার ব্যাবস্থা করেছেন। মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার হারুন ওর রশিদ জানান, পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কুলাউড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিযুক্ত (ভিসিজি) পাহারাদার গয়েন্দ্র বিশ্বাস জানান, পাখি নিধন বন্ধে আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো: মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের বার বার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরণ বিভাগের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী গোলাম মোস্তফা জানান, পাখি নিধনে জড়িত কয়েকজনের বিরুদ্ধে জুড়ী, বড়লেখা ও কুলাউড়া থানায় বহু মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আমাদের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই।
বাংলাদেশ সময় ০০০০, জানুয়ারি ১৭, ২০১১