ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৭ মে ২০২৫, ১৯ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

বার্সেলোনার ‘বাইসি’!

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৪০, এপ্রিল ১৮, ২০১৪
বার্সেলোনার ‘বাইসি’! সাইকেলের শহর বার্সেলোনা

বার্সেলোনা থেকে ফিরে: দেশে বসে শুনেছিলাম বার্সেলোনা হচ্ছে, ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির শহর। কথাটি অবাস্তব নয়।

বার্সেলোনায় নেমেই তা টের পেয়েছি। কিন্তু, এক সপ্তাহের সফরে বার্সেলোনা শহরের অন্য একটি জিনিসও অবাক করেছে। এই শহরে ঘুরতে গিয়ে কিছু দূর পর পরই দেখলাম বাইসাইকেল স্ট্যান্ড।   

বার্সেলোনাবাসীর কাছে খুবই জনপ্রিয় যান এই বাইসাইকেল। স্প্যানিশদের কাছে বাইসাইকেল ‘বাইসি’ নামে পরিচিত। শহরে যতই ঘুরছি, দেখছি মানুষ সাইকেলে চড়েই শহরে ঘুরছেন এবং নিত্যদিনকার কাজ সেরে নিচ্ছেন। দেখে ভাবলাম, আসলেই এটি সাইকেলের শহর। সাইকেল চালকদের জন্য আলাদা লেন রয়েছে, যে লেন দিয়ে নিরাপদেই চলাচল করে থাকেন চালকেরা। তরুণরাই শুধু নয়, মধ্যবয়সীরাও এসব সাইকেল ব্যবহার করছেন।  

২০০৭ সালে বাইসাইকেল ভাড়া করা ‘বাইসিং’-এর মাধ্যমে বাইসাইকেল প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। ওই সময় মাত্র ৫০ স্ট্যান্ড থেকে ৭৫০টি সাইকেল নিয়ে শুরু হয় এই পথচলা। কয়েক বছরের মধ্যেই বাইসাইকেল ভাড়াকারীর সংখ্যা এক লাখ ২০ হাজারে উন্নীত হয়।

২০১২ সালে সাইকেল স্ট্যান্ড ৪২০টিতে উন্নীত এবং সাইকেলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ হাজারে। যে কেউ অনলাইন ম্যাপের মাধ্যমে খুব সহজেই সাইকেল স্ট্যান্ডের খোঁজ পেতে পারেন। মূলত বার্সেলোনা শহরে যন্ত্রচালিত গাড়ির চাপ কমানো এবং মানুষকে স্বল্প দূরত্বে সহজেই যাতায়াতের সুবিধা করে দিতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে আমরা আটজন সাংবাদিক বার্সেলোনায় একটি কনফারেন্সের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাই।

ঢাকা শহরের যানজট ছেড়ে বার্সেলোনার মতো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন একটি শহর দেখে অভিভূত হলাম সবাই। তবে এই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। এখানে স্বল্প দূরত্বে যেতে হবে হয় পায়ে হেঁটে অথবা সাইকেল ভাড়া করে। কিন্তু, এখানকার এই বাইসাইকেল পর্যটকদের ভাড়া দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই, যে কারণে এক সপ্তাহের বার্সেলোনা সফরে আমাদের অনেক হাঁটতে হয়েছে। ঢাকা শহরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকার অভ্যাস থাকলেও এভাবে প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস কারোই ছিল না। এর মধ্যে ব্যতিক্রম দেখলাম, হাসান ভাইকে। তিনি নিয়মিতই সকালে হাঁটেন; যে কারণে হাঁটার ক্লান্তি ছুঁতে পারলো না তাকে।

এর বাইরে রুবেল ভাই, সজল ভাই, শাওকি, মোছাব্বের সবাই হেঁটে কাবু। আর কিবরিয়া ভাইতো সবার আগে ঘুম থেকে উঠে ভূমধ্যসাগরের তীরে প্রতিদিনই হাঁটতেন।

বাইসি ভাড়া করার নিয়ম জানতে গিয়ে জানলাম, নির্দিষ্টহারে ফি প্রদানকারী একজন গ্রাহক একটি কার্ড পেয়ে থাকেন। অটোমেটিক সাইকেল স্ট্যান্ড থেকে সাইকেল নিতে ও রাখতে এই কার্ডটি প্রয়োজন পড়ে। প্রথম আধাঘণ্টা ফ্রি এবং পরবর্তী ৭১ সেন্ট লাগে পরবর্তী প্রতি আধাঘণ্টার জন্য। এর মেরামত কিংবা চুরি সংক্রান্ত কোনো ঝামেলা গ্রাহকের থাকে না। তাই, এটি বাড়তি সুবিধাই দিয়ে থাকে গ্রাহকদের।

মধ্যরাত থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত সময় ছাড়া সব সময়ই তা পাওয়া যায়। তবে বড় ধরনের উৎসব ও বিশেষ দিনগুলোতে সারারাতই সাইকেল গ্রাহকরা নিতে পারেন।

তিন গিয়ারের এই বাইসিতে সন্ধ্যা হতেই অটোমেটিক লাইট জ্বলে ওঠে। অসলো, স্টকহোম এবং কোপেনহেগেনের মতো শহরেও এভাবেই সাইকেল পাওয়া যায়। প্রতিদিন কমবেশি ৪৭ হাজার বার্সেলোনাবাসী সাইকেল চালিয়ে থাকেন।

বছরে সাইকেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক কোটি ৪৪ লাখ ৩৯ হাজার ৯০২ জন। ২০০৭ সালের ২২ মার্চ এর অপারেশন চালু হয়। ক্লিয়ার চ্যানেল নামে একটি সংস্থা পুরো বিষয়টি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে।

বছরে এর মেম্বারশিপ নিতে হয়। অনলাইনের মাধ্যমে এই মেম্বারশিপের আবেদন ও তা পাওয়া সম্ভব। পরবর্তীতে এই মেম্বারশিপ কার্ড গ্রাহকের বাড়ির ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একটি সাইকেল প্রতিদিন ১০ থেকে ১০ বার ব্যবহার করে থাকেন বিভিন্ন মানুষ।

তবে শুধু বার্সেলোনাই নয়, ইউরোপের কোপেনহেগেন, অসলো, স্টকহোমের মতো শহরেই এভাবে সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। বার্সেলোনার এই চমৎকার সাইকেল ভাড়ার ব্যবস্থাপনা দেখে মনে হলো, আমরাও কি পারি না এমন একটি উদ্যোগ নিতে?
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।