চীনা বাস্তুশাস্ত্রের এক অতি প্রাচীন পদ্ধতি ফেং সুই। আজ থেকে প্রায় ৩ হাজার বছর আগে চীনে এই শাস্ত্রের জন্ম হয়।
প্রামাণ্য গ্রন্থের তালিকা ঘাঁটলে মাস্টার ইয়াং ইয়ান সাং নামের এক লেখকের কথা পাওয়া যায়, প্রাচীন চীনে বেশ কিছু ফেং সুই বই লিখে ছিলেন। মাস্টার ইয়াং তার লেখার বেশির ভাগ অংশেই বর্ণনা করেছেন কীভাবে “ড্রাগনের শক্তি” এবং“ড্রাগনের নিশ্বাস” পৃথিবীর বিভিন্ন জিনিসের উপর প্রভাব বিস্তার করে।

মাস্টার ইয়াং তার এই সিদ্ধান্তকালে জল, মাটি , পাহাড়, দ্বীপ, নানা ধরনের প্রাণীর উপর বিভিন্ন প্রভাবের পর্যবেক্ষণ করেছেন বলে জানা যায়। যতদূর বোঝা যায়“ড্রাগনের শক্তি” এবং “ড্রাগনের নিশ্বাস” বিষয়টি বেশ কিছুটা প্রতীকী। আসলে এখানে শক্তি (এনার্জি) ও বায়ুর প্রভাবের কথা বলা হয়েছে।
এছাড়াও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আরও ৯টি বিষয়ের উপর। এই ৯টি বিষয়ের সবক’টি আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিটি মুহূর্তে প্রভাব বিস্তার করে। এই ৯টি বিষয়ের মূল বিষয়গুলি হলো- জল, কাঠ, কালো র!, হলুদ রং, ধাতু, মাটি, আগুন প্রভৃতি। ঠিক জ্যোতিষশাস্ত্রে যেমন বিভিন্ন গ্রহের অবস্থান পরিবর্তনের কথা বলে আছে, ফেং সুই শাস্ত্রে তেমনভাবেই উপরোক্ত বিষয়গুলিকে পরিবর্তনশীল বলা হয়েছে।

আর এই পরিবর্তনশীলতার জন্যেই মানুষের জীবনে বিভিন্ন পরিবর্তন হয়। তবে ফেং সুই নিয়ে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। বিভিন্ন ফেং সুই মাস্টার বিভিন্নভাবে এই শাস্ত্রকে ব্যাখ্যা করেছেন।
তবে সবচেয়ে প্রচারিত ফেং সুই বস্তগুলির মধ্যে অন্যতম হলো ‘লাফিং বুডঢা’। এটি এক হাস্যরত বৃদ্ধের মূর্তি। গোটা বিশ্বে ফেং সুই এর জনপ্রিয়তম প্রতিকার সামগ্রী। লাফিং বুডঢা মূলত সৌভাগ্যের প্রতীক। শারীরিক উন্নতি, সাফল্য, আনন্দ বয়ে আনে এই লাফিং বুডঢা।

কিন্তু কেন হাসছে এই বুড়ো মানুষটি। এর পেছনে আছে একটি ইতিহাস। ফেং সুই মতে, দশম শতাব্দীর এক বৌদ্ধ সাধুর মতো করে বানানো হয়েছে এই মূর্তি। যিনি সাধকদের মতো গম্ভীর স্বভাবের নয়। যার উপস্থিতি একটা আনন্দ, হাসি ও উচ্ছ্বলতার ভাব পর্যবসিত করে। মনে করা হয় এই লাফিং বুডঢা-কে ঘরে রাখলে বাড়িতে আসবে ধন-সম্পত্তি আনন্দ, সুস্থ শরীর ও নানা রকমের ইতিবাচক মুহূর্ত।
ফেং সুই ঘণ্টা অনেক জায়গাতেই ঝুলতে দেখা যায়। বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে এই ঘণ্টা খুব সুন্দর এক শব্দ করে। সেই শব্দ এতই শ্রুতিমধুর যে এটি বেজে উঠলেই মনের ভেতর এক আনন্দের তরঙ্গ অনুভূত হয়। বেশ কয়েকটি ফাঁফা ধাতব দণ্ড দিয়ে সাধারণত তৈরি হয় এই ঘণ্টা। অনেক সময় ফাঁপা দণ্ডের বদলে নিরেট দণ্ড দিয়ে বা ছোট ছোট সমষ্টিগত ঘণ্টার আকারেও এই যন্ত্রটি তৈরি হয়।

এবার দেখা যাক এই ঘণ্টার সুফল কি কি পাওয়া যেতে পারে। বাড়ির উত্তর দিকে ৬টি ফাঁপা দণ্ডের এই ঘণ্টা রাখলে পেশাগত উন্নতি হয় ও নতুন সুযোগ সুবিধার উৎপত্তি হয়। উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ পশ্চিম দিকে ২টি , ৫টি অথবা ৮টি ফাঁপা দণ্ডের ঘণ্টা রাখলে শিক্ষা, সম্পর্ক ও ব্যক্তি জীবনের উন্নতি হয়।
বাঁশ বা কাঠের তৈরি তিন দণ্ডের ঘণ্টা পূর্বদিকে রাখলে পারিবারিক সম্পর্ক এবং শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ৪ দণ্ডের ঘণ্টা রাখলে অর্থের আগমন বাড়ে।
ফেং সুই –এর অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তু চীনা মুদ্রা। ৩টি, ৬টি মুদ্রা এক সঙ্গে লাল রিবন দিয়ে বেঁধে কাজের টেবিলের ড্রয়ারে বা পয়সার ব্যাগে রাখলে অর্থভাগ্য শক্তিশালী হয়।
আরও একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো ফেং সুই ক্রিস্টাল। বিভিন্ন রঙের এবং আকারের ক্রিস্টালগুলি বিভিন্ন বিষয়ের উন্নতির জন্য কাজে লাগানো হয়। এর মধ্যে কোনোটি ভালোবাসা। কোনোটি অর্থ, কোনোটি অন্য বিশেষ কোনো শক্তির প্রভাবকে বাড়াতে ব্যবহার করা হয়।
একটি চীনা মুদ্রা মুখে ধরা ব্যাঙ হয়তো আপনারা অনেক জায়গাতেই দেখেছেন। ব্যাঙের এই মূর্তিটি মূলত ধন-সম্পত্তি বৃদ্ধির কাজে সাহায্য করে। এটি শুভ ভাগ্য বহন করেও নিয়ে আসে।
এছাড়া আছে কচি বাঁশ গাছ। এটিকে বাড়িতে রাখলে শান্তি বজায় থাকে। কাঠ ফেং সুই শাস্ত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যেটা আগেই বলা হয়েছে। এ কারণেই বাঁশ গাছ শুভ প্রতীক হিসেবে ধরা হয়।
ফেং সুই সম্পদ জাহাজ আরও একটি সৌভাগ্যের প্রতীক। বোতল বন্দি এই জাহাজ দেখতে খুবই সুন্দর। বাড়িতে এই সুন্দর জাহাজটি রাখলে আসবে সম্পদ, সম্পত্তি সহ আরও অনেক কিছু। এছাড়াও ফেং সুই শাস্ত্রে আরও অনেকগুলি বিষয়ের কথা বলা আছে যেগুলি সুস্থ, সুন্দর এবং বিত্তশালী জীবন কাটানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী কোনো প্রতিবেদনে সেগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৪