ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ফিচার

ফুটবলের যত অজানা গল্প

অনুবাদ ও গ্রন্থনা: চন্দন চৌধুরী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১:২০, জুন ১২, ২০১৪
ফুটবলের যত অজানা গল্প

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলে কালের বিবর্তনে এসেছে নানা পরিবর্তন। পাল্টে গেছে অনেক নিয়ম, যোগ হয়েছেও অনেক।

এমনই কিছু অজানা তথ্য নিয়ে আজকের আয়োজন।

হাত দিয়ে গোল
১৮৬২ সালের আগে হাত দিয়ে মারলেও গোল হতো। এ বছরই নিয়ম হয়, হাতের সাহায্যে দিলে তা গোল হবে না।

ক্রসবারও ছিল না
১৮৬৫ সালের আগে গোলপোস্টের ভেতর দিয়ে বল প্রবেশ করালেই গোল হতো, তা যত ওপর দিয়েই হোক। এ বছরই ৮ ফুট উচ্চতার ক্রসবার দেওয়ার চল শুরু হয়।



ছিল না অফসাইড
১৮৬৬ সালের আগে খেলোয়াড়রা হাত দিয়ে বল থামানোর নিয়ম বাতিল হয়। এর আগে অফসাইডেরও কোনো নিয়ম ছিল না।

গোলরক্ষকদের কাণ্ড
১৮৭১ সালে নিয়ম করা হয়— ‘গোলরক্ষকই হাত দিয়ে বল ধরতে পারবে। ’ তখন গোলরক্ষকরা হাতে বল ধরে মাঠের সবখানে চলে যেত।

খেলার সময়
১৮৭১ সালের আগে খেলার কোনো নির্দিষ্ট সময় ছিল না। আলোচনার মধ্যদিয়ে সময় নির্ধারিত হতো। কয়েক বার বিরতির নিয়মও ছিল। তখন খেলোয়াড়রা গোসল করতো, কাপড় বদলাতো, বিশ্রাম নিতো। ১৮৮৩ সালে খেলা দেড় ঘণ্টার হয়।



প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ
প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মধ্যে স্কটল্যান্ডের গ্ল্যাসগো শহরে ১৮৭২ সালের ৩০ নভেম্বর। এতে ইংল্যাণ্ডের ৮ জন এবং স্কটল্যাণ্ডের ৬ জন স্ট্রাইকার খেললেও ম্যাচটি গোলশূন্যভাবে শেষ হয়।

ছিল না রেফারি
১৮৭৮ সালের আগে খেলায় কোনো রেফারি থাকতো না। দু’দলের দুই জন প্রতিনিধি থাকতো। সে বছরই বাঁশি ব্যবহারের চল হয়। এর আগে ব্যবহার হতো চিৎকার, ইশারা এবং ছুটির ঘণ্টা।



হাফটাইম নেই
১৮৮৩ সাল পর্যন্ত খেলার প্রথমার্ধ দ্বিতীয়ার্ধ বলে কিছু কিছু ছিল না। ৯০ মিনিটের খেলা চলতো এক টানা। ছিল না প্রান্ত বদলেরও কোনো চল।

নেট ছাড়া গোলবার
নেট ছাড়া আবার গোলবার হয় নাকি! ১৮৯০ সালের আগে নেট ছাড়াই খেলা হতো।



খেলোয়াড়ের সংখ্যা
১৮৯৭ সালের আগে একেক দলে কত জন খেলবে তা নির্ধারিত হতো দলগুলোর চুক্তির মাধ্যমে। এ বছরই নিয়ম হয় খেলোয়াড়ের সংখ্যা হবে ১১।

টিকেট ছাড়া বিশ্বকাপ দেখা
এই কাণ্ডটি হয়েছিল ১৯৫০ সালে, ব্রাজিলে। ব্রাজিল ও উরুগুয়ের ফাইনাল দেখতে যাঁরা এসেছিল তাদের সঙ্গে ঢুকে যায় টিকেট ছাড়াই আরো ৬ হাজার ১৫৫ জন।

ভিডিও দেখিয়ে শাস্তি
মেক্সিকো বিশ্বকাপে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ৬-০ তে হেরে যায় হাঙ্গেরি। অথচ তা হতে পারতো ১০-০ গোলে। হাঙ্গেরির কোচ তো রেগে আগুন। তিনি সব খেলোয়াড়কে একটি ঘরে বন্দী করে পাঁচ ঘণ্টা খেলাটির ভিডিও ফুটেজ দেখালেন। খেলোয়াড়দের বারবার দেখতে হলো নিজেদের লজ্জাজনক হার।



ওরে বাবা, স্ট্রেচার!
স্ট্রেচারে করে খেলোয়াড়কে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তিনি তড়াক করে স্ট্রেচার থেকে লাফ দিয়ে নেমে ফিরে আসেন মাঠে। মেক্সিকো বিশ্বকাপে বুলগেরিয়া বনাম মেক্সিকোর খেলার একসময় হুগো সানচেজ এই কাণ্ডটি করেন। পোল্যান্ডের সঙ্গে খেলায় আহত হয়ে গড়াগড়ি করছিলেন ব্রাজিলের অধিনায়ক এডিনহো। রেফারি স্ট্রেচার নিয়ে আসার জন্য ইঙ্গিত করছে দেখেই তড়তড় করে উঠে গেলেন তিনি।

বলের চক্কর
১৯৩৪ সালে ইতালির বিশ্বকাপে ফাইনাল হয় স্বাগতিকদের সঙ্গে চেকোশ্লাভাকিয়ার। এই খেলায় ইতালির উইঙ্গার ওরসি একটি দুর্দান্ত বাঁক খাওয়া শটের মাধ্যমে গোল করেন। তা দেখে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেন, গোলটি দৈবাৎ হয়ে গেছে। কিন্তু এ কথা শুটে ওরসি চটে টং। তিনি বললেন, ওরকম শট তিনি ইচ্ছে করলেই নিতে পারেন। পরদিন সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফারদের উপস্থিতিতে গোটা বিশেক শট নিয়েও তিনি ফাঁকা গোলপোস্টে বল ঢোকাতে পারলেন না।



কে আবার বাজায় বাঁশি
১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে ফ্রান্স বনাম কুয়েতের খেলা চলছে। কুয়েতকে একে একে হজম করতে হয়েছে গুনে গুনে চারটি গোল। খেলার ৭৪ মিনিটে এক পাল্টা আক্রমণে কুয়েতের খেলোয়াড়রাও বল পাঠালেন ফ্রান্সের জালে। আল হৌতির ফ্রি কিকের সূত্র ধরে গোলটা দেন আল বুলৌসি। এই গোলের পরেও মনে হচ্ছিল কুয়েতের পরাজয় বরণ করতে হবে। পুরো বিষয়টাই তখন সময়ের ব্যাপার। কিন্তু নাটকের তখন অনেক বাকি। ৭৫ মিনিটে দেখা গেল ফরাসি খেলোয়াড় গিয়েসে বল নিয়ে ছুটছেন। হঠাৎ শোনা গেল বাঁশির শব্দ। কুয়েতিরা ভাবলেন রেফারি বোধহয় অফ সাইডের বাঁশি বাজালেন। গিয়েসে অফসাইড। অতএব গিয়েসেকে প্রতিরোধ করার দরকার নেই। কিন্তু গিয়েসে বোধহয় উত্তেজনায় খেয়াল করেননি। তিনি প্রায় বিনা বাধায় বল পাঠিয়ে দিলেন কুয়েতিদের জালে, গোল।



এরপর নিয়ম অনুযায়ী বল মাঠের সেন্টারে বসানোর নির্দেশ দিলেন রেফারি। তখনই প্রতিবাদ করে বসলেন কুয়েতি খেলোয়াড়রা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন কুয়েত ফুটবলের সভাপতি যুবরাজ ফায়েদ। খেলা ৯ মিনিট বন্ধ। রেফারি জানালেন তিনি অফ সাইডের কোনো বাঁশি বাজান নি। তাহলে কি কুয়েতি খেলোয়াড়রা ভুল শুনেছিল? আসলে তা নয়, বাঁশি ঠিকই বেজেছিল তবে তা মাঠে নয় গ্যালারিতে। হয়তো কোনো কুয়েতি ভক্তই বাঁশি বাজিয়েছিল। পরে রেফারির নির্দেশ অনুযায়ী গিয়েসের গোলটি বাতিল করা হয়। বেচারা গিয়েসে! বিশ্বকাপে করা নিশ্চিত গোলটি বাতিল হলো; তাও আবার গ্যালারি থেকে বাজানো বাঁশির জন্য। শেষ পর্যন্ত সে খেলায় আর কোনো গোল হয়নি। খেলার ফল ফ্রান্স ৪ আর কুয়েত ১।

** দ্বিতীয় কিস্তিতে সমাপ্য

বাংলাদেশ সময়: ০১২০ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।