ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৭ মে ২০২৫, ১৯ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

উপকূল থেকে উপকূল

রাতের কর্ণফুলী, বর্ণিল আলোছায়ার খেলা!

রফিকুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫:৪৬, জুন ১২, ২০১৪
রাতের কর্ণফুলী, বর্ণিল আলোছায়ার খেলা! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী  ঘুরে এসে: এ এক ভিন্ন রং, ভিন্ন রূপ। রংধনুর সাত রঙ যেন এখানে এসেই মিলিত হয়েছে।

যেন কোন এক দক্ষ চিত্রশিল্পীর নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ভেসে উঠেছে আলোছায়ার এই দৃশ্যপট। শিল্পীর তুলির আঁচড় প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোকে করে তুলেছে আরও মোহনীয়। রাতের আঁধার নেমে আসতে না আসতেই এই সৌন্দর্য আরও দৃশ্যমান হতে থাকে।

ঐতিহ্যবাহী  সাম্পানের সঙ্গে মিশে আছে যে নদী, যে নদী ঘিরে লোকসঙ্গীত শিল্পী শেফালী ঘোষের কণ্ঠে সুর উঠেছে, সেই কর্ণফুলী নদীর রাতের সৌন্দর্যটা যেন অন্য এক জগতে নিয়ে যায় আমাদের। কল্পনার জগতে নিয়ে আসে বিচিত্র সব ফ্রেম। মনের জানালায় এঁকে দেয় বহুবর্ণের প্রতিবিম্ব। আরও কিছুক্ষণ অপলক তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে বর্ণিল আলোছায়ার এই ক্যানভাসে।

কর্ণফুলীতে দেশি-বিদেশি জাহাজ চলাচল করে। চট্টগ্রাম বন্দরের হাজার বছরের ঐতিহ্য মিশে আছে এ নদীর সঙ্গে। নদী তীরে আছে জাহাজ-কেন্দ্রিক নানান শিল্প প্রতিষ্ঠান। কিনারে জেগে থাকে এক ঐতিহ্যবাহী নগরী। রাস্তায় চলাচল করে নানা ধরনের যানবাহন। গন্তব্যে ফেরা যাত্রী নিয়ে টুংটাং শব্দে পথ চলে রিকশা। বহমান জীবনের এই ধারায় সব দৃশ্যপটের সাক্ষী হয়ে থাকে কর্ণফুলী।

সার্চ লাইট জ্বালিয়ে সশব্দে ছুঁটে চলা জাহাজের সঙ্গে এগিয়ে যায় মাছধরা ট্রলারগুলো, চলে ইঞ্জিন চালিত নৌকা। কিন্তু এরই মাঝে আবার নীরবে পানির ভেতরে বৈঠা ডুবিয়ে গন্তব্যে এগিয়ে যায় ছোট নৌকাগুলো। এসব কিছুর মাঝেই লুকিয়ে রয়েছে এক ভিন্নমাত্রার রঙের খেলা। দিনের কর্ণফুলীকে দেখে সেটা কল্পনা করাও হয়তো কারও পক্ষে সম্ভব নয়।     

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের রহমতপুর ঘাট থেকে স্টিমার এগিয়ে চলে চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে। বেলা গড়িয়ে দুপুর আড়াইটা। জাহাজ ‘এমভি আব্দুল মতিন’র যাত্রা শুরু চট্টগ্রামের পথে।

চট্টগ্রাম পৌঁছুতে রাত হবে। সমুদ্র সৈকত পতেঙ্গার গা ঘেঁসে কর্ণফুলীর পথ ধরেই জাহাজ প্রবেশ করবে বন্দরনগরীতে। রাতের কর্ণফুলী দেখার এটাই বড় সুযোগ।

দিনের আলো নিভে গিয়ে গোধুলির রঙটা স্পষ্ট হয়ে উঠতে না উঠতেই সমুদ্রের মাঝেই দৃশ্যমান হতে থাকলো নির্দেশক বাতিগুলো। সমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে থেকেই এই নির্দেশক বাতি নৌযানগুলোকে পথ চলতে সাহায্য করে। পানির ভেতরে নির্দেশক বাতিগুলোর হেলেদুলে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য দেখতে দেখতে দূর থেকেই চোখে ভাসে বন্দরনগরীর আলোআঁধারির মাঝে সোডিয়াম লাইটের ঝলকানি।
  
কর্ণফুলীর মোহনা পেরোতে না পেরোতে বর্ণময় হাজারো দৃশ্যের প্রতিফলন। নোঙ্গর ফেলে দাঁড়িয়ে থাকা জাহাজের ফাঁকে ফাঁকে ছোট্ট সাম্পান এগিয়ে চলে আপন মনে। জাহাজের ওপর থেকে নদীর বুক ছাপিয়ে যাওয়া আলোর ভেতরে সাম্পানের ঢেউ কর্ণফুলীর রাতের সৌন্দর্যে যেন এক ভিন্নমাত্রা যোগ করে। ঢেউয়ের সঙ্গে ছড়ায় ম্লান আলোর ঝলকানি। এরই মাঝে আবার ভেসে আসে মাঝির কণ্ঠের ভাটিয়ালী সুর। দিনভর অধিক খাটুনির পর মাঝিরা ফিরছে গন্তব্যে।

কর্ণফুলীর তীরে ডকইয়ার্ডের পাশ দিয়ে জাহাজ চলে যাওয়ার সময় কানে ভেসে আসে বিচিত্র সব শব্দের প্রতিধ্বনি। অন্যদিকে জাহাজ চলার শব্দ। নানা শব্দের মাঝে বর্ণিল সৌন্দর্য যেকোনো মানুষকেই অন্য জগতে নিয়ে যাবে।

শুধু সোডিয়াম লাইটের হলদেটে আভা নয়, এখানে ধরা পড়ে লাল-নীল-সবুজ আলোর প্রতিচ্ছবি। ডকইয়ার্ডের বিভিন্ন কাজের ভেতর দিয়ে সৃষ্টি হওয়া এই প্রতিবিম্ব রাতের কর্ণফুলীর চেহারাটাই যেন বদলে দেয়।

দিনের প্রখর আলো কিংবা রাতের আবছা আলোতে জেগে থাকে কর্ণফুলী। কেউ দিনের সৌন্দর্যটা দেখেই ক্ষান্ত থাকেন, কেউবা দেখেন রাতেরটা। মাঝি-মাল্লা আর নাবিকদের কাছে তো রাতের দৃশ্য খুবই চেনাজানা। কিন্তু রাতে যারা কর্ণফুলীতে কখনো যাওয়ার সুযোগ পাননি, তাদের তো রাতের কর্ণফুলী দেখাটা আজও হয়ে ওঠেনি। তবে রাত-দিন-ভোর-দুপুর-গোধুলির সকল রূপের সাক্ষী হয়ে আছে কর্ণফুলী নিজেই।

চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ-হাতিয়ার পথে যাত্রীবাহী জাহাজের ছোট্ট দোকানে চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিতে দিতেই ঘাটে নোঙর করার শব্দ কানে আসে। বন্দরনগরীর সদরঘাটে নোঙর করে জাহাজ আব্দুল মতিন। শেষ হয় রাতের কর্ণফুলী দেখা। নগরে ফিরতে ফিরতে স্মৃতিপটে ভাসতে থাকে একখণ্ড আলোকিত কর্ণফুলী।         
      
[ পশ্চিমে সাতক্ষীরা, পূর্বে টেকনাফ, উপকূলের এই ৭১০ কিলোমিটার তটরেখা বেষ্টিত অঞ্চলে সরেজমিন ঘুরে পিছিয়ে থাকা জনপদের খবরাখবর তুলে আনছে বাংলানিউজ। প্রকাশিত হচ্ছে ‘উপকূল থেকে উপকূল’ নামের বিশেষ বিভাগে। আপনি উপকূলের কোনো খবর বাংলানিউজে দেখতে চাইলে মেইল করুন এই ঠিকানায়: ri_montu@yahoo.com ]

বাংলাদেশ সময়: ০৫৪০ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।