বর্ষাকে বলা হয় কবিদের ঋতু, কবিতার ঋতু। কেউ কেউ আবার বলেন, বর্ষা হচ্ছে প্রেমের ঋতু।

এবার আষাঢ়ের প্রথম দিন থেকেই বর্ষণমুখর হয়ে উঠেছে বাংলার প্রকৃতি। সজল মেঘের বারিধারায় সজীব ও সতেজ হয়ে উঠেছে চারপাশ। প্রতিদিনই পালা করে নামছে বৃষ্টি। এবারের বর্ষা যেন ‘বর্ষা’ হয়েই এসেছে বাংলার প্রকৃতিতে।
কবির ভাষায়, বর্ষা প্রেমিক মনে ভালবাসবার সাধ জাগায়। সারাদিন অজস্র করুণার অমৃতধারার টুপটাপ শব্দ যেন সংগীতের মোহনীয় সুরের মুর্ছনা তোলে। যা আমাদের মনের আকাশটাকেও নির্মল করে তোলে। হৃদয়কে করে কোমল ও সিক্ত। মনের কিনারা ছুঁয়ে যায় কী সব অজানা অনুভূতি! ব্যথিত-বঞ্চিত জীবনকে সে ভরে দিতে চায় ঘ্রাণে। এতো দুঃখের মধ্যেও মনে হয় জীবনে এত সুখ, এত প্রশান্তি!

অজানা কি এক অনুভূতি মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। নিত্য নৈমিত্তিক কাজে কিছুতেই যেন মন আর বসতে চায় না। তাইতো বর্ষামুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘আজি ঝড়ো ঝড়ো মুখরও বাদল দিনে/জানি না জানি না কিছুতে কেন যে মন লাগে না লাগে না..’
বর্ষা হল এমন এক ঋতু যা কেবল বাংলার প্রকৃতিতেই বোধ হয় এতো গভীর ও দ্যোতনা নিয়ে দেখা যায়।
বর্ষাকে নিয়ে বাংলা সাহিত্যে যত কবিতা, ছড়া, গল্প, কাব্য গ্রন্থ, উপন্যাস-উপাখ্যান হয়েছে পৃথিবীর আর কোন ভাষা-সাহিত্যে তা হয়নি। বাংলা কাব্যও অনেকটা বর্ষাময়।

বর্ষার সঙ্গে বাঙালির প্রেম ও বিরহের সম্পর্কও যেন অবিচ্ছেদ্য। বর্ষা প্রেমে মুগ্ধ হয়েই কবি কাজী নজরুল ইসলাম বর্ষায় বিরহ বেদনা নিয়ে লিখেছেন, “শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে/বাহিরে ঝড় বহে, নয়নে বারি ঝরে। ”
বর্ষায় প্রকৃতির সাথে অলঙ্কারের মতো প্রস্ফুটিত হয় কদম, কেয়া, জুঁই, মালতী, জুঁই, কাঁঠালচাঁপা, গন্ধরাজ, বেলি, বকুল, হাসনাহেনা, কামিনী, দোলনচাঁপাসহ হাজারও ফুল। যার সুবাসে আকুল হয় প্রেমিক মন। ব্যাকুল হয়ে কাছে পেতে চায় তার প্রিয়জনকে। প্রিয়জনের হাতটি ধরে সে হারিয়ে যেতে চায় প্রকৃতির নিস্বর্গ ভুবনে। বর্ষার জলে স্নাত একটি সতেজ কদম ফুল গুজে দিতে ইচ্ছে করে প্রেয়সীর খোপায়।
এমন দিনে সত্যিই প্রেয়সীকে বলা যায় এমন কিছু। যা আপনি এতদিন বলতে পারেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৪