‘অন্ধকার থেকে মুক্ত করুক একুশের আলো’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে লাখো দ্বীপশিখা প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে নড়াইলবাসী স্মরণ করলেন বায়ান্নোর ভাষা শহীদদের। প্রতি বছরের মতো এ বছর একুশে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শহরের কুড়িরডোব মাঠে আয়োজন করা হয় এ অনুষ্ঠানের।
একুশ উদযাপন পর্ষদের আয়োজনে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি লিয়াক আলী লাকী। এ সময় জেলা প্রশাসক মোঃ আনোয়ার হোসেন, পুলিশ সুপার এস এম ফজলুর রহমান, মোবাইল অপারেটর রবির কর্মকর্তা ফাহাদ আহম্মেদ, উদযাপন পর্ষদের আহবায়ক প্রফেসর মুন্সী হাফিজুর রহমান, সদস্য সচিব কচি খন্দকারসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
হাজারো দর্শদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে এ মাঠটি। ঢাকা, বাগেরহাট, যশোর, ফরিদপুর, রাজবাড়ি, সাতীরা, খুলনা, মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও অনেকে এসে উপস্থিত হন।
শুরুর কথা : বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্মৃতি সংসদের সভাপতি খন্দকার শাহেদ আলী শান্ত বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৯৭ সালের একুশে ফেব্র“য়ারি প্রথম স্থানীয় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্মৃতি সংসদের আয়োজনে মোমবাতি প্রজ্বলন কার্যক্রম শুরু করে।
প্রথম দিকে স্মৃতি সংসদের সদস্যদের নিজ নিজ বাড়ি এবং স্থানীয় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এভাবে দুই বছর চলার পর প্রফেসর মুন্সী হাফিজুর রহমান, নাট্যব্যক্তিত্ব কচি খন্দকার, খন্দকার শাহেদ আলী শান্তসহ স্থানীয়রা এ অনুষ্ঠান কুড়িরডোব মাঠে করার সিদ্ধান্ত নেন। গঠন করা হয় একুশ উদযাপন পর্ষদ। এ উদযাপন পর্ষদের আয়োজনে শহরের কুড়িরডোব মাঠে প্রথমে দুই হাজার মোমবাতি জ্বালিয়ে এ অনুষ্ঠান করে।
১৯৯৯ সালে প্রয়াত চিত্রশিল্পী কাজল মুখার্জীর আঁকা আল্পনার মধ্য দিয়ে কুড়িরডোব মাঠে দুই হাজার মোমবাতি নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও হাঁটি হাঁটি পা পা করে প্রতি বছরই বৃদ্ধি পেতে থাকে মোমবাতির সংখ্যা। এর সাথে যোগ হয় মাটির তৈরি প্রদীপ। গত বছর ৫০ হাজারের বেশি প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালানো হয়। এর সংখ্যা এ বছর বৃদ্ধি পেতে দাঁড়িয়েছে লাখে। বেসরকারি মোবাইল ফোন রবি এ আয়োজনে সহযোগিতা করে।
যেভাবে সাজানো হয় মাঠ : প্রতি বছর ভাষা শহীদদের স্মরণে মাঠ সাজানোর কাজ শুরু হয় সকাল থেকে। মাঠের চারপাশ ঘিরে রাখা হয় বাঁশ এবং রশি দিয়ে। মাঠে বিভিন্ন ধরনের আল্পনা এঁকে তার ওপর মাটি ছিদ্র করে মোমবাতি সারিবদ্ধভাবে সাজানো হয়। স্থানীয় যুবকরা কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই নিজ নিজ উদ্যোগে এ কাজ করে থাকেন। সাজিয়ে রাখা প্রদীপ সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রজ্বলন শুরু হলে স্বেচ্ছাসেবকরা চারপাশ থেকে জ্বালানো শুরু করেন। সঙ্গে চলে দেশাত্মবোধক গান। এ সময় শহরের বিদ্যুৎ প্রায় এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হয়।
আয়োজকদের কথা : দ্বীপশিখা প্রজ্বলন উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর মুন্সী হাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রতি বছরের একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন পর্ষদের আয়োজনে আমরা অনুষ্ঠানটি করে আসছি। নড়াইলের সর্বস্তরের মানুষ আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে।
সদস্য সচিব কচি খন্দকার বলেন, অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসার প্রথম ধাপ ভাষা আন্দোলন। আমরা মনে করি এখনও পৃথিবী থেকে সব অন্ধকার দূর হয়নি। তাই আমরা নড়াইলে দীপশিখা প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে সকল জড়তা এবং অন্ধকারকে দূর করার স্বপ্ন দেখি।
তিনি আরো বলেন, দীপশিখা প্রজ্বলনের অনুষ্ঠানটি একদিন আর্ন্তজাতিক মানের অনুষ্ঠান হবে বলে আমার বিশ্বাস।
বাংলাদেশ সময় ২১১০, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১১