ঢাকা, শনিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৭ মে ২০২৫, ১৯ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

উড়বেন নাকি পাখির মতো!

শুভ্রনীল সাগর, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:২১, জুলাই ১৬, ২০১৪
উড়বেন নাকি পাখির মতো!

ঢাকা: পাখির সঙ্গে মানুষের ভাবের আদান-প্রদান বোধহয় কেবল জাদুবাস্তব গল্প-উপন্যাসেই সম্ভব। আর পাখির মতো ওড়া তো রীতিমতো কাব্য।

একবার ভাবুন তো- আপনি উড়ছেন খোলা আকাশে, আপনার সঙ্গে ডানা মেলে উড়ছে পাখিও। মাঝে মাঝে আপনি ছুঁয়ে দিচ্ছেন পাখির ডানা!

রোমঞ্চপ্রিয়দের বলি, আপনার কল্পনাকে বাস্তবে পরিণত করবে উড্ডয়ন (এভিয়ান) বিশেষজ্ঞ স্কট ম্যাসন। তার পরিচালনায় প্যারাগ্লাইডিংয়ে আপনার সঙ্গে উড়বে সোনালি ডানার চিল। তিনি আপনার এই প্যারাগ্লাইডিং ভ্রমণের নাম বদলে রেখেছেন ‘প্যারাহকিং’। এটা একান্তই তার উদ্ভাবন।



প্যারাগ্লাইডিং সম্পর্কে যাদের কোনো ধারণা নেই, সহজে তাদের বলি- এক কথায় প্যারাগ্লাইডিং হচ্ছে প্যারাশ্যুটের মাধ্যমে আকাশ ভ্রমণ। ভয়ের কারণ নেই, সার্বক্ষণিক আপনার পেছনে থাকবেন একজন উড্ডয়ন বিশেষজ্ঞ। কোনো উঁচু পাহাড়ের উপর থেকে শুরু হবে আপনার ওড়া। আপনাকে সামনে রেখে নিরাপদভাবে পুরো ভ্রমণ পরিচালনা করবেন আপনার বিশেষজ্ঞ সহযাত্রী।



ম্যাসন এশিয়ার বিপন্নপ্রায় শকুনের উপর সবার দৃষ্টি ফেরাতে চান। এজন্য প্যারাগ্ল্যাইডিংয়ে তিনি প্রাচীন বাজপাখি পালন পদ্ধতির সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। এখানে মানুষ ও পাখি, দু’পক্ষই ভূমি থেকে উঁচুতে উঠে উপভোগ করবে বাতাসের উষ্ণতা।
ম্যাসনের ব্যাখ্যা, শিকারের জন্য পাখিরা তাদের ডানা না ঝাপটিয়েই অনেক উঁচু ও দীর্ঘ উড্ডয়নে সক্ষম। ওড়ার সময় আমরা প্যারাগ্লাইডাররা শক্তি সঞ্চয় রাখতে পাখিদের সহজাত সক্ষমতার মতো সেজে নিই।



প্যারাহকিংয়ে ওড়ার সময় প্যারাগ্ল্যাইরা তাদের হাতে এক টুকরো মাংস নিয়ে নেন। খাবারের লোভে পাখিটিও তাদের সঙ্গে উড়তে শুরু করে।
ম্যাসনের ভাষায়, এটা একটা নিঁখুত মিথোজীবী সম্পর্ক। প্যারাহকিং এখন আমার ব্যক্তিগত নিরীক্ষা থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবছর প্রায় একশোর বেশি মানুষ এ অনন্য উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা নিতে আসেন। এখানে মানুষ ওড়ার পাশাপাশি পাখির নিজস্ব পরিবেশে তার সঙ্গে ভাব বিনিময়ের সুযোগ পাচ্ছেন।



তবে ডাইক্লোফেনাক ওষুধের কারণে এশিয়া অঞ্চলের শকুন একেবারে বিলুপ্তির শেষ সীমায় চলে এসেছে। ডাইক্লোফেনাক হচ্ছে প্রদাহ অর্থাৎ, জ্বালা নিবারণকারী ওষুধ যা এশিয়ার অসুস্থ ও মুমূর্ষু পশু সম্পদে ব্যবহার করা হয়। এটি শকুনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
শকুনের মত মাংসাশী পাখিরা যখন পশুর মৃতদেহ ভক্ষণ করে, কার্যত মাংসের সঙ্গে ডাইক্লোফেনাক তাদের শরীরে ঢুকে যায়। এটা শকুনের রেনাল ফেইলিয়র (বৃক্ক সম্পর্কীয়) ও মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।



গত ১৫ বছরে সাদা পিঠের শকুন, সরু ও দীর্ঘ প্রজাতির শকুন কমে গেছে ৯৯.৯ শতাংশ। তারমানে মারা গেছে প্রায় ৪০ মিলিয়ন শকুন।
শকুন সবসময় অপ্রীতিকর ও ভুলভাবে আমাদের কাছে উপস্থিত হয়। প্যারাহকিংয়ে শকুনের ব্যবহার করে শকুন সস্পর্কে আমাদের ভুল ধারণা কাটাতে পারি। শকুনের মতো বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের বাঁচাতে এটা আমাদের ‍অনন্য ও উদ্ভাবনী প্রয়াস, জানান ম্যাসন।

নেপালে তার আয়োজিত এ শকুন সংরক্ষণ কার্যক্রমে যে কেউ পাখির সাথে এই ভাব বিনিময়ে অংশ নিতে পারবেন। এজন্য প্রতি ওড়ায় মাথাপিছু ১০০০ রুপি দান করতে হবে।

নেপালের পোখরায় অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চলে এই প্যারাহকিং সেশন। সেক্ষেত্রে দুইরাত থাকা-খাওয়াসহ মোট খরচ পড়বে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৯,৭০০ টাকা।

প্যারাহকিং ‘ট্রিপ অ্যাডভাইসর’-এ পোখরার ‘স্পোর্টস নম্বর ওয়ান’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

তাহলে? আর দেরি কিসের? সামনের সেশনেই পাখির সঙ্গে উড়ে আসুন মুক্ত আকাশে!

বাংলাদেশ সময়: ০০২২ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।