ঢাকা: ভিনগ্রহের রহস্যপ্রাণী এলিয়েন নিয়ে আমাদের জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। দূরের কোনো গ্রহে তাদের কোনো অস্তিত্ব আছে কি নেই, কয়েক শতাব্দী ধরে তা নিয়ে বিতর্ক বিস্তর।
বিশ্বব্যাপী নানান আলোচনা সমালোচনা, গবেষণা হলেও এতদিন মহাকাশ গবেষণাকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ‘নাসা’ ছিল চুপ করে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, আগামী ২০ বছরের মধ্যে এলিয়েন খুঁজে পাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেটা হতে পারে অামাদের সৌরমণ্ডলের বাইরে।
সোমবার ওয়াশিংটনে একটি গণ আলাপে নাসা এ ঘোষণা দেয়। সেইসাথে এ মহাকাশ সংস্থা মহাবিশ্বে প্রাণ খুঁজে পেতে একটি রোডম্যাপের রূপরেখা দেয়।
বুধবার ছিল ‘অ্যাপোলো ১১’ নিক্ষেপের ৪৫তম জয়ন্তী। সেখানেও নাসা শিগগিরই মহাবিশ্বে প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে দৃঢ় আশাবাদ জানায়।

আমরা কি বিশ্বাস করি পৃথিবীর বাইরে কোথাও প্রাণ আছে? বলেন সাবেক নভোচারী ও নাসার প্রশাসক চার্লস বোল্ডেন।
তিনি আরও যোগ করলেন, হয়তো একটু ঝুঁকি নিয়ে বলতে হবে। আজ এখানে আমার অধিকাংশ সহকর্মী উপস্থিত। তারা বলবেন, মহাশূন্যের অসীম বিশালতায় এটা অসম্ভব, যেখানে আমরা মানুষ একাকী দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু আমাদের ১০০ কোটি সূর্যের নক্ষত্রপুঞ্জে কোথাও না কোথাও তারা আছে।
এলিয়েন খোঁজার ক্ষেত্রে গত কয়েক দশকে আমাদের সৌরজগতে মঙ্গল ও চাঁদের নাম বারবার সামনে এসেছে। কিন্তু গত এক দশকে প্রযুক্তিতে রোবটের বিস্তৃতি ঘটা সত্ত্বেও তেমন কোনো শক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তবে জ্যোতির্বিদ কেভিন হ্যান্ড সম্প্রতি প্রস্তাব রাখেন, এলিয়েনের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে বৃহস্পতি গ্রহের চাঁদ ইউরোপা অথবা শনি গ্রহের চাঁদ টাইটানে।
কিন্তু প্যানেলে নাসার বিজ্ঞানীরা কেবল আমাদের সৌরমণ্ডলের বাইরে নমুনা খুঁজছেন। নিকট ভবিষ্যতের কোনো একদিন, মানুষ একটি নক্ষত্রের দিকে নির্দেশ করে বলতে পারবে, ‘ওই নক্ষত্রটি আমাদের পৃথিবীর মতো’। বলেন ম্যাসাচুয়েটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির প্লানেটারি সায়েন্স অ্যান্ড ফিজিক্স বিভাগের অধ্যাপক সারা শিগার।

নাসা প্রথম প্লানেটারি সিস্টেমের পাশাপাশি অন্য নক্ষত্রের উৎপত্তি পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা শুরু করে।
তারপর এটা হাবল স্পেস টেলেস্কোপ, স্পিৎজার স্পেস টেলিস্কোপ ও কেপলার স্পেস টেলিস্কোপের মতো স্পেস-বেজড অ্যাসেটে চালিত হয়।
যদি গ্রহগুলো তরল জল ও প্রাণের মৌলিক উপাদান খুঁজে পেতে নক্ষত্র থেকে সঠিক দূরত্বে থাকে, তাহলে এই টেলিস্কোপগুলো তা নির্ধারণ করতে পারবে।

২০১৭ সালে নাসা ‘ট্রানজিটিং এক্সোপ্লানেট সার্ভেয়িং স্যাটেলাইট’ (টিইএসএস) চালু করার ব্যাপারে আশাবাদী। সেইসঙ্গে ২০১৮ সালে ‘ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ’ ও পরের দশকের শুরুতে ‘ওয়াইড ফিল্ড ইনফ্রারেড সার্ভে টেলিস্কোপ- অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ফোকাসড টেলিস্কোপ অ্যাসেট’র প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

নভোচারী ও নাসা’র সায়েন্স মিশন ডাইরেক্টরেটের সহযোগী প্রশাসক জন গ্রানসফেল্ড বলেন, এই প্রযুক্তি আমরা গ্রহের বাস্তবতাকে আরও বিস্তৃত করতে ব্যবহার করছি।
প্রশ্নোত্তর পর্বে কেউ একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জানতে চান, যদি ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধান পাওয়া যায়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার কি তা মানুষকে জানতে দেবে?
অবশ্যই আমরা দেব! জবাব দেন নাসার প্রধান বিজ্ঞানী অ্যালেন স্টোফান।

পৃথিবীর মতো গ্রহদের ছবির সন্ধান পেতে ফিউচার স্পেস টেলেস্কোপের ব্যবহার এখন উন্নত হয়েছে। এলিয়েন খুঁজে পেতে হয়তো আরও বেশ কয়েক বছর লাগবে, বা তারও বেশি খোঁজ চলতেই থাকবে।
ভাবতেই কেমন শিহরণ জাগে। সময়টা তো খুব বেশি নয়, মাত্র বছর বিশেক। এই অসীম মহাবিশ্বে আর আমাদের একা থাকতে হবে না!
বাংলাদেশ সময়: ০৮০২ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৪