মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা অনসার সদস্য এবং তাদের পরিবার-সদস্যদের দিন কাটছে অর্থাভাব ও অনাহারে। স্বাধীনতার ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলেনি তাদের।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদানকারী ১২ জন আনসার সদস্যের মধ্যে ৮ জনই ইতোমধ্যে মারা গেছেন। তারা হলেন পিসি ইয়াদ আলী, ফকির মোহাম্মদ, নজরুল ইসলাম, মফিজ উদ্দীন, কিসমত আলী, মহিউদ্দীন, সাহেব আলী ও অস্থির মল্লিক। জীবিত চারজন হলেন আজিমুদ্দিন শেখ, সিরাজুল ইসলাম, হামিদুল ইসলাম ও লিয়াকত আলী।
পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। সরকারের দেওয়া সামান্য মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তাদেও প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। তাদের অভিযোগ, স্বাধীনতার ৪০ বছর পেরিয়ে গেছে। সবাই আমাদের ভাঙিয়ে অনেক কিছু করেছে। কিন্তু কেউ আমাদের জন্য কিছু করেননি।
তারা বলেন, বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হলে ১৯৯৫ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গার্ড অব অনার প্রদানকারী ১২ জন আনসার সদস্যকে পুনর্বাসন করে। পিসি ইয়াদ আলীকে ৫৬ শতাংশ, ফকির মোহম্মদকে ৬৪ শতাংশ, নজরুল ইসলামকে ৬১ শতাংশ, মফিজ উদ্দীনকে ৬৬ শতাংশ, কিসমত আলীকে ৪৫ শতাংশ, মহিউদ্দীনকে ২৫ শতাংশ, আজিমুদ্দীন শেখকে ৫১ শতাংশ, সাহেব আলীকে ৪১ শতাংশ, সিরাজুল ইসলামকে ৬১ শতাংশ, হামিদুর ইসলামকে ৫৬ শতাংশ, লিয়াকত আলীকে ৭২ শতাংশ ও অস্থির মল্লিককে ৫০ শতাংশ খাস জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এর মধ্যে লিয়াকত আলী, সাহেব আলী, অস্থির মল্লিক ও আজিমুদ্দীন শেখ তাদের জন্য বরাদ্দকৃত জমির দখল পেলেও অন্যরা আজও তাদের জন্য বরাদ্দকৃত জমির দখল পাননি। ২০০৯ সালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি অসহায় এসব মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে উচ্ছেদ করে দেয়। ফলে এ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলো মানবেতর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। বিষয়টি নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি এবং পরে সরকারের উচ্চমহল থেকে ভূমিকা নেওয়ার ফলে ওই মহলটি পিছু হটে। তবে এখনও অসহায় এসব মুক্তিযোদ্ধা পরিবার তাদের জমির দখল নিয়ে বেশ চিন্তিত। কারণ প্রভাবশালী মহলটি তাদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
তারা বলেন, স্বাধীনতার ৪০ বছর পেরিয়ে গেছে । এখন ক্ষমতায় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের জন্য এমন কিছু করুন, যাতে বাকিটা জীবন আমরা একটু শান্তিতে কাটাতে পারি।
মুক্তিযোদ্ধা আজিমুদ্দীন শেখ বর্তমান মহাজোট সরকারের কাছে প্রত্যাশা করেন, এপ্রিলের এই মাসেই যেন সরকার তাদের জন্য কিছু করেন। তাদের সন্তানরা যেন ছোটখাটো চাকরি-বাকরিও সুযোগ পান।