নানা প্রজাতির গাছপালায় সমৃদ্ধ দেশের শিল্পোন্নত গাজীপুর জেলা। এসব গাছের যেমন রয়েছে ভেষজ গুণ, তেমনি আছে নানা উপকারিতা।
নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি, প্রকৃতিপ্রেম এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর মজ্জাগত, গাজীপুরের হৃতগৌরব ভাওয়াল রাজারাও তেমনি নিসর্গপ্রেমী ছিলেন। ভাওয়াল রাজবাড়ির (১৯৮৪ সালে মহকুমা থেকে পূর্ণাঙ্গ জেলায় রূপান্তরের পর বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়) ভেতরে ঢুকে দৃশ্যমান দৃষ্টিনন্দন একটি গাছ দেখে সবার তাই মনে হবে।
রাজবাড়ির প্রাচীরের মধ্যে জেলা প্রশাসকের দপ্তরের ঠিক পশ্চিমে সরকারি কর্মচারী সমিতির অফিস ঘেঁষে শতাব্দীর প্রাচীন এ গাছটি কালের সাক্ষী হয়ে ভাওয়াল রাজাদের মহিমা ঘোষণা করছে আজও। সুবিশাল ঐতিহ্যের অংশীদার বিরল প্রজাতির এ গাছটির নাম নাগলিঙ্গম।
নিসর্গপ্রেমী লেখক-শিক্ষাবিদ আমিরুল আলম খানের একটি তথ্যবহুল লেখায় জানা যায়, ‘উদ্ভিদবিজ্ঞানী ডেভিড প্রেইন তাঁর গবেষণাগ্রন্থ Bengal plants-এ বৃক্ষটিকে নাগ ফণা বলে উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ শিবলিঙ্গমও বলে থাকেন। ইংরেজি নাম Canon Ball. বৈজ্ঞানিক নাম Couroupita guianensis গোত্র Lacythidaceac.’
ভারতের শান্তিনিকেতনে, শিল্পী এস এম সুলতানের বাড়ি নড়াইলে, মালয়েশিয়ার পেনাংয়ের ভোটানিকেল গার্ডেনে, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে (শ্রীমঙ্গল), ময়নমনসিংহ রাজবাড়ির শশীলজে, মুক্তাগাছা রাজবাড়িতে, যশোর শিক্ষাবোর্ডের প্রধান ফটকে দৃষ্টিনন্দন বিরল প্রজাতির এই গাছের দেখা মিলবে। সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার উষ্ণমণ্ডল থেকে গাছটির এই উপমহাদেশে বংশবিস্তারের ইতিহাস এখনো অজানা।
গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক ড. ফরিদ আহমেদ ভাওয়াল রাজবাড়ির ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা নাগলিঙ্গম গাছটি সম্পর্কে জানান, সুনির্দিষ্ট সময় জানা না গেলেও ভাওয়াল রাজা কালীনারায়ণ রায় চৌধুরী ও তার ছেলে রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর সময়ে এ নাগলিঙ্গমটি রোপণ করা হয়ে থাকতে পারে। ’
সুনির্দিষ্টভাবে বলা না গেলেও গাছটি অন্তত শতাব্দীকাল আগে রোপণ করা হয়েছে বলে ধারণা স্থানীয় প্রবীণদের।

বর্ণে গন্ধে অপরূপ উজ্জ্বলতায় পুষ্পরাজ্যে অতুলনীয় নাগলিঙ্গম ফুল। ফল সাদাটে মাংসল, বহুজীবী, সহজে চারা হয়, তবে বৃদ্ধি মন্থর। দক্ষিণ আমেরিকায় নাগলিঙ্গমের কাঠ ফার্নিচার তৈরিতে ব্যবহৃত হলেও আমাদের দেশে এ কাঠ ব্যবহার হতে দেখা যায় না।
আমাদের দেশের উদ্যানগুলোতে এ বৃক্ষের সরব উপস্থিতি বিশেষ সৌন্দর্যের মাত্রা যোগ করবে। গাজীপুর জেলার প্রাণকেন্দ্র ভাওয়াল রাজবাড়িতে এ বিরল প্রজাতির গাছটি কালের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও একে সর্বসাধারণ্যে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেই।
বাংলাদেশ সময় ২১২০, এপ্রিল ২৫, ২০১১