ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৭ মে ২০২৫, ১৯ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

‘এই লাদেন কে?’

শেরিফ আল সায়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:২০, মে ৩, ২০১১
‘এই লাদেন কে?’

বিশ্বজুড়ে আলোচিত হচ্ছিল রাজপরিবারের বিয়ে। দাওয়াত পাননি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।

ব্রিটেনের রাজপরিবার আমন্ত্রণ জানাননি প্রেসিডেন্ট সাহেবকে। তাই হয়তো এক গোপন অভিযানের মধ্য দিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলেন। গত রোববার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ওসামা নিহত হন বলে প্রথমে গুঞ্জন শুরু হয়। গুঞ্জনকে সত্যি প্রমাণ করে ওবামা হাজির হন টেলিভিশন পর্দার সামনে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সৈন্যদের এক অভিযানে বিন লাদেন নিহত হয়েছেন, যিনি ছিলেন একজন সন্ত্রাসী এবং হাজার হাজার মানুষ হত্যার জন্য দায়ী। ’ তিনি আরও বলেন, ‘এর মাধ্যমে ন্যায়বিচার হলো। ’

সারা বিশ্বের মিডিয়াগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ল। মজার ঘটনা ঘটল খোদ যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানকার শিশুরা তাদের মা-বাবাকে প্রশ্ন করল যে, এই লাদেন কে? শুরুতে তারা একটু বিপাকে পড়লেও পরে ব্যাপারটি মেনে নিয়েছেন। কারণ হলো, যেসব শিশু প্রশ্ন করছে তারা ৯/১১-এর পরে জন্মেছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের সবাই এখন ঠিক করছে শিশুদের কী বলে লাদেন সম্পর্কে জানাবে।

শিশুদের সাথে তারা বলছেন, ‘ওসামা বিন লাদেন একজন খারাপ লোক, যে আমেরিকাকে ঘৃণা করত। ’ এগুলো বললেও সমস্যা আছে। তারা যদি বলে বসে, কেন সে খারাপ? আমেরিকাকে ঘৃণা করলেই কি সে খারাপ? তখন তাদের ঘৃণা এবং সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে জ্ঞান দিতে হবে। সুতরাং দরকার এখন গল্প তৈরি করা।

গল্পটি হলো : একটা সময় ছিল, যখন নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানে দুটি বড় ভবন ছিল। কিছু মানুষ একটি বিমান নিয়ে ভবনের ওপর হামলা করেছিল। এই হামলায় প্রায় তিন হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল। এবং এই হামলার পিছনে যিনি ছিলেন তিনি হচ্ছেন ওসামা বিন লাদেন। যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াগুলোতে এভাবেই আসছে বিষয়টি।

না আসার অবশ্য কোন কারণও নেই। গত দশ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র হন্যে হয়ে খুঁজছে লাদেনকে। লাদেনকে ধরতে গিয়ে আফগানিস্তানে যুদ্ধ পর্যন্ত করতে হয়েছে। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কি জিতে গেছে? এমন প্রশ্ন করা যেতেই পারে। তবে হ্যাঁ, মৌলবাদী সরকারের পতন হয়েছে। সেই সরকারের পতন ঘটাতে গিয়ে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষগুলোর প্রাণ গিয়েছে। সেসবের অবশ্য বিচার হবে না। এটাকে নিশ্চয়ই ওবামা বলবেন, ইটস এন এক্সিডেন্ট। সে যাই হোক। আফগানিস্তানের পর হামলা হলো ইরাকে। বলা হলো, তালেবানরা ইরাকে সংগঠিত হতে শুরু করেছে। এবং স্বৈরশাসক সাদ্দামের পতন ঘটাতে হবে। যদিও বিশ্ববাসী জানতো সাদ্দামের পতনের সাথে সাথে তেলখনির দিকে যুক্তরাষ্ট্রের লোলুপ দৃষ্টি ছিল । তবে এই লোলুপ দৃষ্টিরও কোনো বিচার হবে না।

তবে হ্যাঁ, সাদ্দামের স্বৈরশাসনের সমাপ্তি হয়েছে। সাদ্দামকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখা যায় না। একদিন গদি থেকে নামতেই হবে। এই দুটি বাক্য আমাদের দেশের বাক্য। এগুলো আমাদের রাজনীতিবিদরা অধিকহারে ব্যবহার করেন। আমাদের বিরোধী দল থেকে লাদেন বিষয়ে বক্তব্য এসেছে। তারা বলেছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বরাবরই দ্ব্যর্থহীনভাবে সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের নিন্দা জানিয়ে আসছে। তা যে কোনো স্থানে যখনই ঘটুক না কেন।

তবে আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে বাংলা ভাইয়ের কথা। আমাদের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী বাবর সাহেব বলেছিলেন, ‘দেয়ার ইজ নো বাংলা ভাই অ্যান্ড ইংলিশ ভাই। এগুলো মিডিয়ার তৈরি। ’ যদিও বাংলার ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু ওনার ওই ধরনের মন্তব্যের জবাবটা আর মিডিয়ার তৈরি করা হলো না।

তবে অনেকেই উন্মুখ হয়েছিলেন জর্জ ডব্লিউ বুশের মন্তব্যের জন্য। বুশ সাহেব বলেছেন, এ বিজয় মার্কিন জনগণের।
আসলে বিশ্বব্যাপী নেতৃবৃন্দ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। মোটকথা এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। তবে তার লাশ নিয়ে ছেলেখেলাটা বিশ্ব নিয়েছে অন্যভাবে। সাধারণের চোখে লাদেন কেমন? এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা খুব কঠিন। গতকাল ফেসবুকে বহু বন্ধুদের ভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাস দিতে দেখলাম। কেউ দিলো, ‘লাদেনকে মুসলমান হিসেবে সম্মান জানানো উচিত ছিল। পানিতে লাশ ফেলে দেওয়া মুসলমানের রীতি নয়। ’ আবার আরেক বন্ধুর স্ট্যাটাস ঠিক তার উল্টো। তিনি দিলেন ‘লাদেন একজন হত্যাকারী। হত্যাকারীর কোনো ধর্ম নেই। তাই মাটি নয়, পানিই তার প্রাপ্য। ’ তবে একটি স্ট্যাটাস দেখে মুচকি হেসে উঠি। স্ট্যাটাসটা ছিল, ‘লাদেন ইজ আউট ফ্রম তালেবান?’ হাসির কারণটা ধরতে পেরেছেন তো? কথাটা একদমই বাস্তব। তালেবান থেকে লাদেন গেছেন কিন্তু নেতৃত্বের দিক থেকে উঠে আসবেন অনেকেই। তবে একজন আইকন চলে গেল। ‘আইকন’ শব্দটা একটু বেশি নায়কের মতো মনে হলো নিশ্চয়ই। কিন্তু লাদেনকে তো আইকনই করে দেওয়া হলো, বিশেষ করে ৯/১১-র পর থেকে।
 
বিন লাদেনের মৃতদেহ পানিতে ফেলে দেওয়াকে তার প্রতি সহানুভূতি তৈরিতে যথেষ্ট সহযোগিতা করবে বলে অনেকেই মনে করছেন। আবার আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর মাটিতে এই মানুষটির কবর দেওয়া হলে তা হয়ে যাবে ইতিহাস। তার অনুসারীরা এটাকে মাজার বানিয়ে ফেলবে। সেই সুযোগ হতে দেয়া যাবে না।

আর সত্যিই তো লাদেনের কোনো ধর্ম নেই। কোনো জাতি নেই।

শান্তির ধর্ম ইসলাম। সেই ইসলামকে সন্ত্রাসীর ধর্ম বানিয়ে ফেলেছিল এই লাদেন। মুসলমান হিসেবে তার প্রতি কোনো মায়া-দরদ কাজ করে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদের মতো করেই মনে প্রশ্ন জাগে, এই লাদেন কে?  কী তার ধর্ম?

বাংলাদেশ: সময় ২১২০ ঘন্টা মে ০৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।