বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে।
দেশীয় বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ঘন জনবসতিপূর্ণ রাজধানী ঢাকার ১০০ কি.মির মধ্যে ৬ থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ৪০ ভাগেরও বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। শনিবার দুপুর সোয়া ১২টায় ভূমিকম্প অনুভূত হয় নেপালে ও ভারতে ও বাংলাদেশে। যুক্তরাষ্টের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এর তথ্য অনুযায়ী, নেপালে ও ভারতে ভূকম্পনের তীব্রতা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৯---যা ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি বয়ে এনেছে।
পাকিস্তানের অনেক জায়গায়ও তা অনুভূত হয়। বাংলাদেশের অন্য এলাকার চেয়ে রংপুরসহ সর্ব উত্তরের কয়েকটি জেলা হিমালয়ের খুব কাছে হওয়ায় সেখানে কম্পনের মাত্রা ছিল বেশি--- ৭ দশমিক ৫। তবে ঢাকাসহ দেশের ভেতরের অংশে তা ৫ দশমিক ৫ বা কোনো কোনো স্খনে সামান্য বেশি।
নেপাল, ভারতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হলেও বাংলাদেশে তেমন বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। নেপালে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এক কথায় ভয়ানক মানবিক বিপর্যয়।
শনিবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দূরে নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুর অদূরে হিমালয় অঞ্চলে। আমাদের দেশে ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ওপর নজর রাখে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এখনো আমাদের দেশে আধুনিক সিসমোগ্রাফ নেটওয়ার্ক বলে কিছু গড়ে ওঠেনি।
ভূমিকম্প-পরবর্তী সময়ে উদ্ধার অভিযানের জন্যও প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি আমাদের নেই। বাংলাদেশের সরকারগুলোর এ ব্যাপারে প্রস্তুতি বলতে তেমন কিছুই ছিল না; বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে কয়েকশ কোটি টাকার সরঞ্জাম কিনেছে বলে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন। তবে সেসবও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য।
শনিবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল যদি বাংলাদেশে হতো তাহলে কেমন হতো পরিস্থিতি? এ-প্রশ্নটি মনে রেখে তৈরি করতে হবে নিজেদের। তাই এমন অবস্থায় সরকারি পদক্ষেপের বাইরেও নিজেকে রক্ষা করতে কিছু বিষয় জানা থাকা প্রয়োজন। ভূমিকম্পের সময় মোটেই আতঙ্কিত না হয়ে এই দুর্যোগে রক্ষা পেতে কিছু সাধারণ পদক্ষেপ নিন।
১. দালানের থাম বা টেবিল বা শক্ত কিছুর নিচে অবস্থান করুন
ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ স্থায়িত্ব মিনিটখানেক যদি হয় এই সময়ে ঘরে অবস্থান করলে দালানের থাম, কাঠের টেবিল, খাটের নিচ বা শক্ত কিছুর নিচে সপরিবারে অবস্থান করুন। এতে মাথায় বা শরীরে বড় ধরনের আঘাত লাগা থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
২. বিদ্যুৎ ও গ্যাসসংযোগ দ্রুত বন্ধ করুন
ভূমিকম্পের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগ এবং গ্যাসের চুলা বন্ধ করে দিন। এতে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট ও আগুন লাগার মত অনাকাঙ্ক্ষিত র্দুঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
৩. তাড়াহুড়ো না করা
ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়ো করে বাইরে বের হতে গেলে ভিড়ে চাপা পড়তে পারেন বা মাথায় কিছুর আঘাত পেতে পারেন। এজন্য তাড়াহুড়ো না করে স্থিরভাবে আশপাশ পর্যবেক্ষণ করে তারপর বাইরে বের হবার চেষ্টা করুন।
৪.অনিরাপদ স্থানে আশ্রয় না নেওয়া
ভূমিকম্পের সময় নিরাপদ নয় এমন স্থানে আশ্রয় না নেয়া। যেমন ভূমিকম্পের সময় বিল্ডিং-এর সিঁড়িতে আশ্রয় নেয়া অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এসময় ভবন ভেঙ্গে না পড়লেও পড়লেও সিঁড়ি ভেঙ্গে পড়ে কারণ সিঁড়ির পাটাতন তুলনামূলকভাবে বেশি ভঙ্গুর হয়।
৫. মাঠে বা খোলা স্থানে অবস্থান নিন
ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার সময় যদি সম্ভব হয় আশেপাশে দালান কোঠা নেই এমন স্থানে বা কাছের খোলা মাঠ বা উন্মুক্ত স্থানে সপরিবারে চলে যান। এতে তুলনামূলকভাবে অনেক নিরাপদ থাকবেন আপনি।
৬.জরুরি জিনিসগুলো সাথে রাখুন
ভূমিকম্প-পরবর্তী সময়ে কাজে লাগতে পরে এমনসব জিনিস হাতের কাছে রাখুন। যেমন, জরুরি অবস্থার জ্ন্য মোবাইল ফোন, চার্জার, ব্যাটারি সঙ্গে রাখুন। এছাড়া শুকনো খাবার, পানি, কাপড়, দেশলাই, অ্যান্টিসেপ্টিক ওষুধ হাতের কাছে রাখুন।
৭. গাড়ি চালানো অবস্থায় থাকলে
ভূমিকম্পের সময় যদি গাড়ি চালানো অবস্থায় থাকেন তাহলে ধীরে ধীরে আপনার গাড়িটি রাস্তার বাঁ-পাশে পার্ক করুন। কোনো অবস্থাতেই ভূমিকম্পের সময় গাড়ি চালাবেন না।
ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত না হয়ে যদি এ বিষয় গুলো মনে রেখে কাজ করা যায়। তাহলে বড় ধরনের র্দুঘটনা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখা সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৫
জেএম