ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৭ মে ২০২৫, ১৯ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

খাদ্যরসিক রবীন্দ্রনাথ

রক্তিম দাশ. সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট.কলকাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৪৪, মে ৮, ২০১১
খাদ্যরসিক রবীন্দ্রনাথ

‘আমসত্ত্ব দুধে ফেলি
তাহাতে কদলি দলি
সন্দেশ মাখিয়া......’

লিখতেন আমসত্ত্ব দুধ আর সন্দেশ আর খেতেন নিমপাতার সরবত। না, শুধু নিমপাতার সরবত নয় বিভিন্ন ধরণের সাহিত্যসৃষ্টি যেমন তার নেশা ছিল ঠিক তেমনই খাদ্যরসিক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।



মাত্র ১২ বছর বয়েসে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার তার বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে দেশ ভ্রমণে বের হন। তারপর সারা জীবনে বহু দেশে ঘুরেছেন। আর প্রতিটি দেশের ভালো লাগা খাবারগুলো ঠাকুরবাড়ির হেঁসেলে চালু করে দিতেন।

যেমন ইউরোপের কন্টিনেন্টাল ডিসের অর্ন্তগত ফ্রুট স্যালাড ঠাকুরবাড়িতে চালু করেছিলেন।

একটা সময় ছিলো যখন ঠাকুরবাড়িতে সবাইকে নিয়ে কবিগুরু একসঙ্গে খেতে বসতেন।

কবি জাপানি চা পছন্দ করতেন। সঙ্গে তাদের চা খাওয়ার রেওয়াজটি। তিনি জাপানে গেলেই প্রায় প্রতিদিন তার জন্য ‘টি সেরিমনি’-র আয়োজন করতেন গুণমুগ্ধরা।

১৯১৩ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। তার আগে ১৯১২ লন্ডনে ‘গীতাঞ্জলি’র ্ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। ওই দিনের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল ইন্ডিয়ান সোসাইটি, লন্ডন। সেদিনের খাদ্য তালিকা হয়েছিলে কবির পছন্দে।

তালিকায় ছিল-গ্রিন ভেজিটেবল স্যুপ, ক্রিম অফ টমেটো স্যুপ, স্যামন ইন হল্যান্ডেন সস এ্যান্ড কিউকামবার, প্রি সলটেড ল্যাম্ব উইথ গ্রিন ভেজিটেবল, রোস্ট চিকেন, ফেঞ্চ ফ্রাই, গ্রিন স্যালাড ও আইসক্রিম।

বাইরে এই ধরনের খাবার খেলেও বাড়িতে তিনি কম তেল মশলা যুক্ত খাবার খেতেন।

কবি স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর রান্না ঠাকুর বাড়ির অন্দরমহলে খুব জনপ্রিয় ছিল। তার হাতের রান্না খেতে সবাই খুব পছন্দ করতেন, বিশেষত দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি নাকি টকের সঙ্গে ঝাল মিশিয়ে বেশ নতুন পদ তৈরি করতেন।

ঠাকুরবাড়িতে প্রায়শই খামখেয়ালি সভা বসত। সেই কবি থাকতেন মধ্যমনি। সেই খামখেয়ালিপনা থেকেই হয়তো তিনি রাত ২টোর সময় মৃণালিনী দেবিকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে কিছু রান্না করে খাওয়াতে বলতেন। শোনা যায় এই ঘটনা প্রায়ই ঘটতো মাঝরাতে মৃণালিনী দেবী  রান্না করে রবীন্দ্রনাথকে  খাওয়াতেন।

কবি দেশি খাবারের মধ্যে পছন্দ করতেন কাঁচা ইলিশের ঝোল। চিতল মাছ আর চালতা দিয়ে মুগের ডাল, নারকেল চিংড়ি।

তিনি কাবাব খেতে খুব পছন্দ করতেন যেমন-শ্রুতি মিঠা কাবাব, হিন্দুস্থানি তুর্কি কাবাব, চিকেন কাবাব নোসি।

কলকাতার ঠাকুরবাড়িতে এখনও সযতেœ রক্ষিত আছে মৃণালিনী দেবীর পাকঘর। সেখানে রয়েছে তার ব্যবহৃত একটি চুলা, আর বেশ কিছু চিনামইটর বাসন।

কবি কাঁচা আম খেতে ভালবাসতেন। আচারও খেতেন। কাদম্বরী দেবী কবি লুকিয়ে কাঁচা আম এনে দিতেন।

এখানেই শেষ নয়, কবিগুরু পানের ভক্ত ছিলেন। তার নাতজামাই কৃষ্ণ কৃপালিনী তাকে একটি সুদৃশ্য পানদানি বা ডাবর উপহার দিয়েছিলেন। যা আজও ঠকুরবাড়িতে রক্ষিত আছে।

ঠাকুরবাড়ির রান্নায় বেশি করে মিষ্টি দেওয়ার প্রচলন ছিল। গরম মশলা, লবঙ্গ, দারুচিনি বেশি পরিমানে ব্যবহৃত হত। রান্নার তালিকায় প্রতিদিনই দীর্ঘ পদ থাকত। আর তাতে অবশ্যই থাকত শুক্তো আর দইমাছ্ নিয়মিত।

বাংলাদেশ সময় ১৫০৬, মে ৮, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।