ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৭ মে ২০২৫, ১৯ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

জীবনজয়ের গল্প

দু হাত নেই, তবু কম্পিউটার চালান মামুন

আসিফ ইকবাল কাজল, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:২৯, মে ১৬, ২০১১
দু হাত নেই, তবু কম্পিউটার চালান মামুন

দু হাত নেই, তবু কম্পিউটার নিজের বশে এনেছেন অদম্য মামুন। তিনি কম্পিউটারে ফটোসপ ও টাইপিং ছাড়াও মোবাইলে রিংটোন এবং গানলোড করতে পারেন।

পুরো নাম মামুন হোসেন। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বলিয়াডাঙ্গা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।

মামুন জানান, তিনি যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়েন তখন দুষ্টুমির ছলে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হন। বিদ্যুতের খুটিতে উঠে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। ওই দুর্ঘটনায় তার জীবন বাঁচলেও দুই হাত কেটে ফেলতে হয়। গরিব পিতা ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসা করান। সেই থেকে মামুনের আর লেখাপড়া হয়নি। তবু থেমে থাকেননি তিনি। মুখ দিয়ে কলম ধরে লেখা শিখেছেন।

একসময় তার মনে ভীষণ ইচ্ছা জাগে নিজের হাত নেই তাতে কি, তিনি কম্পিউটার শিখবেন। ২০০৯ সালের  ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি কালীগঞ্জে হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড পল্লীতথ্য কেন্দ্রের কম্পিউটার সেন্টারের আসেন কম্পিউটার শিখতে। সেখানে প্রশিক্ষক শাহাজান আলী বিপাশ কিছুটা অবাক হন, ভাবেন কীভাবে সম্ভব হাতহীন মামনুকে কম্পিউটার শেখানো। এ সময় মামুন জানান, তার হাত না থাকলেও তিনি কম্পিউটার শিখতে যথেষ্ট আগ্রহী, যেভাবেই হোক তিনি কম্পিউটার চালানো শিখবেনই। হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড পল্লীতথ্য কেন্দ্রের কম্পিউটার সেন্টারে চলে মামুনের অবিরাম কসরত। শেষ পর্যন্ত সফল হন মামুন।

মামুনের প্রশিক্ষক শাহাজান আলী বিপাশ জানান, দু মাসে মামুন ফটোশপ প্রোগ্রাম শেষ করে টাইপিং শেখেন  ‘অন স্কিন কি-বোর্ডে’র মাধ্যমে। মামুনের এই প্রবল ইচ্ছাশক্তির কথা স্থানীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে ডি-নেট, ইসলামী ব্যাংক ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক এক কর্মকর্তা তাকে একটি করে মোট তিনটি কম্পিউটার দেন। এই কম্পিউটার দিয়ে মামুন কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা বাজারে দোকান দেন। সেখানে তিনি কম্পিউটার দিয়ে ট্রেনিং, কম্পোজ ও মোবাইল ফোনের ব্যাবসা শুরু  করেন। প্রতি মাসে খরচ বাদে মামুন এখন আয় করেন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।  
 
মামুনের সাফল্যে মা মাজেদা বেগম খুব খুশি। তিনি জানান, ছেলের খাবার গ্রহণ, কাপড় পরাসহ বেশির ভাগ কাজ তাকেই করে দিতে হয়। এখন সে কিছু কিছু কাজ করতে শিখেছে। মামুনের ইচ্ছা ছিল একটি কম্পিউটারের। এখন তার ঘরে তিনটি কম্পিউটার। ইচ্ছাশক্তি ও মানুষের ভালবাসায় মামুন এখন আর  কারো করুনার পাত্র নয়। দুটি হাত না থাকার পরও মামুন অনেকের জন্য এখন উদাহরণ।

বিষয়টি নিয়ে কালীগঞ্জ নুর আলী কলেজের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম মন্টু জানান, প্রতিবন্ধী মামুন কম্পিউটার শিখে যে সাফল্য অর্জন করেছেন, তা কেবল নজিরবিহীন নয়, দুঃসাহসিকও বটে। তিনি বলেন, মামুনের মতো আর সব প্রতিবন্ধীদের বেলায় যদি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসেন তবে প্রতিবন্ধীরা সমাজে বোঝা না হয়ে,  হবে সম্পদ।

বাংলাদেশ সময় ১৪২৫, মে ১৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।