ইতিহাসে “আই হ্যাভ এ ড্রিম” ভাষণটি গুরুত্ব বহন করছে। এই ভাষণের মাধ্যমে মার্টিন লুথার কিং তরুণ প্রজন্মের কাছে অন্যরকম নেতা হিসেবে ধরা দিয়েছেন।
সাদা-কালো ভেদাভেদের বিপক্ষে গর্জে উঠেছিল মার্টিনের কন্ঠ।
একটা সময় কালোদের সাথে সাদারা মিশতে চাইতো না। নাগরিক হিসেবে সব অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হতো কালোদের। বর্ণবাদীর দেশ ছিল আমেরিকা। সেই বর্ণবাদীর বিরুদ্ধে মার্টিন লুথার কিং আন্দোলন করেছিলেন। সেই আন্দোলনের জন্যই আজ বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছেন।
১৯৬৩ সালের সেই ভাষণটি সংক্ষেপিত আকারে অনুবাদ করে দেয়া হলো।
-------------------------------------
বন্ধুরা, আমি আজ আপনাদের বলছি, বর্তমানের সমস্যা ও বাধা সত্ত্বেও আমি আজও স্বপ্ন দেখি। আমার এই স্বপ্নের শেকড় পোতা আছে আমেরিকানদের অন্তরের গভীরে।
আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন এই জাতি জাগবে এবং বাঁচিয়ে রাখবে এই বিশ্বাস: ‘ সব মানুষ সমান: আমরা এই সত্যকে স্বতঃসিদ্ধভাবে গ্রহণ করছি’।
আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন জর্জিয়ার লাল পাহাড়ে সাবেক দাস আর সাবেক দাস মালিকের সন্তানেরা ভ্রাতৃত্বের এক টেবিলে বসতে সক্ষম হবে।
আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন মরুময় মিসিসিপি রাজ্য, অবিচার আর নিপীড়নের উত্তাপে দম বন্ধ করা মিসিসিপি হয়ে উঠবে মুক্তি আর সুবিচারের মরূদ্যান।
আমি স্বপ্ন দেখি, আমার চার সন্তান একদিন এমন এক জাতির মধ্যে বাস করবে, যেখানে তাদের চামড়ার রং দিয়ে নয়, তাদের চরিত্রের গুণ দিয়ে তারা গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
আমি আজ এই স্বপ্ন দেখি।
আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন আলাবামা রাজ্যে, যেখানকার গভর্নরের ঠোঁট থেকে কেবলই বাধা-নিষেধ আর গঞ্জনার বাণী ঝরে, একদিন সেখানকার পরিস্থিতি এমনভাবে বদলে যাবে যে কালো ছেলে-মেয়েরা সাদা ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে ভাইবোনের মতো হাত ধরে থাকবে।
আমি আজ এই স্বপ্ন দেখি।
আমি স্বপ্ন দেখি, একদিন সব উপত্যকা উত্তীর্ণ হবে, সব পাহাড় আর পর্বত হবে আনত, উঁচ-নিচু জমিন সমান হবে, আঁকাবাঁকা জায়গাগুলো সমান হবে এবং সৃষ্টিকর্তার জয় উদ্ভাসিত হবে এবং একসঙ্গে সব মানব তা চোখ দিয়ে দেখবে।
এই-ই আমাদের স্বপ্ন। এই স্বপ্ন নিয়েই আমি দক্ষিণে ফিরে যাব। এই বিশ্বাস নিয়ে হতাশার পর্বত থেকে আমরা সৃষ্টি করব আশার প্রস্তর। এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা আজকের এই কোলাহল থেকে জন্ম দেব ভ্রাতৃবন্ধনের সুন্দরতম সংগীতের। এই বিশ্বাস নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করব, প্রার্থনা করবো একত্রে, একদিন আমরা মুক্ত হব এই জেনে, একসঙ্গে শামিল হব সংগ্রামে।
সেটা হবে সেই দিন, যেদিন ঈশ্বরের সন্তানেরা গাইতে পারবে গান, ভাষায় দেবে নতুন অর্থ: ‘ও আমার দেশ, তুমি তো মুক্তির স্নিগ্ধ ভূমি। যে মাটিতে আমার পিতারা শুয়ে আছে, যে মাটি তীর্থযাত্রীদের গরিমা, তার প্রতিটি পাহাড়ের ঢাল থেকে বেজে উঠুক মুক্তির গান। ’
এবং আমেরিকাকে মহান এক দেশ হতে হলে এটাই সত্য হতে হবে। তাই মুক্তি ধ্বনিত হোক নিউ হ্যাম্পশায়ারের বিপুল পাহাড়চূড়া থেকে। মুক্তি ধ্বনিত হোক নিউইয়র্কের শক্তিমান পাহাড়গুলো থেকে। মুক্তি ধ্বনিত হোক পেনসিলভানিয়ার ওই আকাশছোঁয়া আলেঘেনির শীর্ষ থেকে।
মুক্তি ধ্বনিত হোক কলোরাডোর তুষারমোড়া পাহাড় থেকে।
মুক্তি ধ্বনিত হোক ক্যালিফোর্নিয়ার বঙ্কিম চূড়া থেকে!
শুধু তা-ই নয়, মুক্তি ধ্বনিত হোক জর্জিয়ার স্টোন মাউন্টেইন থেকেও!
মুক্তি ধ্বনিত হোক টেনেসির লুকআউট পাহাড় থেকে!
মুক্তি ধ্বনিত হোক মিসিসিপির প্রতিটি টিলা ও পাহাড় থেকে। প্রতিটি পাহাড়ের খাঁজ থেকে বেজে উঠুক মুক্তির গান।
যখন আমরা মুক্তিকে ধ্বনিত হতে দেব; যখন প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি বসতি, প্রতিটি রাজ্য এবং শহরে বাজবে মুক্তির গান; তখন আমরা সেই দিনকে আরও কাছে নিয়ে আসতে পারব, যেদিন কালো মানুষ ও সাদা মানুষ, ইহুদি ও জেন্টাইল, প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক সবাই হাতে হাত ধরে গাইবে সেই নিগ্রো মরমিসংগীত।
‘এত দিনে আমরা মুক্ত হলাম! এত দিনে পেলাম মুক্তি! ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তোমাকে ধন্যবাদ, আমরা আজ মুক্ত!
ফিচার
আমি স্বপ্ন দেখি...
তরুণদের প্রতি মার্টিন লুথার কিং
| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।