ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বড়দের মতো ছোটদেরও প্রয়োজন যোগ্য সম্মান

সানজিদা সামরিন, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩২ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৫
বড়দের মতো ছোটদেরও প্রয়োজন যোগ্য সম্মান

ঢাকা: পারিবারিক বা পারিপাশ্বিক যেকোনো সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ হচ্ছে পারস্পরিক সম্মানবোধ। যদি পারিবারিক সম্পর্কের কথাই বলি, তাহলে ছোটদের যেমন বাবা-মা, বড় ভাই-বোন ও বাকি বড়দের প্রতি সম্মান রেখে চলা উচিত, তেমনি বড়দেরও উচিত পরিবারের ছোট সদস্যদের মতামত ও অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখানো।



ছোট সদস্যদের বেড়ে ওঠা ও তাদের সুস্থ মানসিক গঠন তৈরির পিছনে বড়দের এ মূল্যবোধটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনেক সময় পরিবারের ছোট সদস্যদের সঙ্গে বড়দের পারিবারিক কলহ দেখা দেয়।

এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই বড়দের ধারণা, ছোট ছেলেটি বা মেয়েটিরই সব ভুল বা তারই বিনয়ের অভাব। কারণ, সে ছোট, ভুল তারই হবে। কিন্তু এ ধারণা সবসময় ঠিক নয়। হতে পারে, দীর্ঘদিনের কোনো অমীমাংসিত ঘটনার প্রেক্ষিতে এ দ্বন্দ্ব।

আত্মসম্মানবোধ
সাধারণত একটি ছেলে বা মেয়ের বয়ঃসন্ধিকালের শুরু থেকেই অর্থাৎ ১১ থেকে ১২ বছরেই আত্মসম্মানবোধ তৈরি হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে যেকোনো বিষয়ে কারও সামনে বকাঝকা বা গায়ে হাত তুললে তা তাদের আত্মসম্মানে আঘাত হানে। ছোটদের যেমন বড়দের সঙ্গে বিনয়সুলভ আচরণ করা উচিত, তেমনি বড়দেরও উচিত তাদের সবসময় ছোট না ভেবে বয়স, মানসিকতা, সময় ও পরিবেশ বুঝে আচরণ করা। একটি বয়সের পর শাসনের পরিবর্তে তাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমঝোতা করাই শ্রেয়।

অনুভূতি ও মতামত প্রকাশের সুযোগ
একটি ছেলে বা মেয়ে বড় হওয়ার সময় তাদের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও মত প্রকাশ করার যথাযোগ্য স্থান তৈরি করে দেওয়া উচিত। পাশাপাশি ভালো মতামতের প্রেক্ষিতে উৎসাহ দেওয়া উচিত। যেকোনো বিষয়ে তুমি ছোট, তুমি বোঝ না, তোমার চেয়ে জীবন অনেক বেশি দেখেছি, এসব না বলাই ভালো। অবশ্যই বড়রা অনেক বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও দূরদর্শি। তবে একটি কথা মনে রাখা উচিত, ছোট ছেলেটি বা মেয়েটি পরিবারের ছোট সদস্য হলেও সামাজিকভাবে সে হয়তো বড় হয়েছে, সামাজিক মর্যাদা পাচ্ছে, সামাজিক চাহিদা ও বয়স হারে মানসিক চাহিদাও বাড়ছে। হয়তো স্কুল, কলেজ বা দলবদ্ধ কাজের ক্ষেত্রে সে বড় বড় সিদ্ধান্তও নিচ্ছে। সেখানে পরিবারে তাকে বারবার ছোট ও অবুঝ বললে সেটি তার জন্য বাড়তি মানসিক চাপ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আস্থা রাখুন
সব কাজে বাঁধা দেবেন না। ‘না’ এর আধিক্য তার স্বনির্ভরতা, সিদ্ধান্ত তৈরিতে বা‍ধা সৃষ্টি ও দূর্বল চিত্তের অধিকারী করে গড়ে তুলতে পারে। এছাড়াও তার আত্মবিশ্বাস ও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠায় বাধা হতে পারে। একটি কথা মাথায় রাখুন, সে ছোট বলে তার সবকাজ ভুল নয়।

পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বিচার করুন
বাবা-মা ও ভাই-বোন এ সম্পর্কগুলো আদর্শগত। বাবা-মায়ের কাছে ছেলে-মেয়েকে সন্তান ছাড়া একজন স্বতন্ত্র মানুষ হিসেবে বিচার করা একটু কঠিন। তারপরও একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে আপনার সন্তানের সামাজিক ও মানসিক চাহিদা, মতামত ও চিন্তাধারা সম্পর্কে ভাবতে চেষ্টা করুন। কোনো সমস্যা হলে তর্ক নয় আলোচনা দিয়ে সমাধান করুন।

ভাবনার দিক পরিবর্তন
পৃথিবী প্রতিনিয়ত পাল্টাচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে আমাদের জীবন ও চাহিদা। আপনার সময় দিয়ে সন্তানকে সবসময় বিবেচনা না করে জীবনের মূল কাঠামো ঠিক রেখে সময় ও পরিবেশ বুঝে সৎভাবে জীবনযাপন করতে শেখানোই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। কারণ, সবার জীবনের গতিপথ এক নয়। একেকজনের জীবন একেক রকম। নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে অন্যের জীবন নিয়ন্ত্রণ করাটা অপেক্ষাকৃত ভুল পদ্ধতি।

গোপনীয়তা রক্ষা
বড় হওয়ার সঙ্গে মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়গুলোও জড়িত। সন্তানের ব্যক্তিগত বিষয়গুলোকে সম্মান করুন। সেগুলো নিয়ে জোরাজুরি করবেন না। সবচেয়ে বড় কথা, সন্তানের প্রতি আস্থা রাখুন। দেখবেন আপনার আস্থা, মূল্যবোধ ও সম্মান আপনার সন্তানকে আপনার অনুগত করে তুলবে এবং তার কাছে আপনি হয়ে উঠবেন অনেক বেশি সম্মানিত ও বিশ্বস্ত।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৫
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।