ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

তিস্তায় পাথর খোঁজা শিশু

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭
তিস্তায় পাথর খোঁজা শিশু তিস্তায় পাথর তুলছে শিশু। ছবি: সাগর

তিস্তা ব্যারাজ ঘুরে: তিস্তা ব্যারাজের পূর্বগেট। বাম তীরের পাশে ছোট্ট একটি খাল। হাঁটু পানিতে নেমে পাথর সংগ্রহ করছে শিশুরা। প্রতিবার পাথর তোলার সঙ্গে সঙ্গে হাসি ফুটছে মুখে। পাথরের ওজন টানার কষ্টকর কাজটাও কি অবলীলায় চালিয়ে যাচ্ছে তারা! ক্লান্তি যেনো কিছুতেই ছোঁয় না ওদের।

শুকিয়ে আসা তিস্তায় এখন এমনিতেই মাছের আকাল। জাল গুটিয়ে অনিশ্চিত সময় কাটাচ্ছে জেলেরা।

এসব শিশুও তাই রোদে পিঠ পেতে দিনমান মাছের বদলে পাথর খোঁজে হাঁটু পানির নিচে। অভাবের তাড়নায় পড়ালেখা আর স্কুলেরও সঙ্গেও যে ভীষণ আড়ি ওদের।

বাংলানিউজকে তারা জানায়, হাঁটু পানির তিস্তায় মাছের আকাল পড়ায় তারা পাথর সংগ্রহ করছে। প্রতিদিন এভাবে ৩/৪ ঘণফুট পাথর সংগ্রহ করে প্রতিটি শিশু। এসব পাথর বামতীর বাঁধের কয়েকজন ঠিকাদার ৫০ টাকা ঘণফুট দরে নগদ অর্থেই কিনছেন। তিস্তা থেকে পাথর তুলে তীরে নিচ্ছে শিশুরা।  ছবি: সাগর
 
শিশুদের একজন আরিফ। স্থানীয় দোহানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র হলেও জীবিকার তাগিদে পাথর সংগ্রহ করে সে। মাঝে মধ্যে স্কুলে যায়। তার বাবা সাহেদ আলী আগে তিস্তায় মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করতেন। এখন তিস্তায় পানি না থাকায় কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তাতে চলে  না তাদের ৫ সদস্যের সংসার।

এ জন্যই তিস্তার এ খালে পাথর সংগ্রহ করে আরিফ। সে বলে, পেটে ভাত না থাকলে স্কুল যাই কেমনে?তিস্তায় পাথর খুঁজছে শিশুরা।  ছবি: সাগর

পাথর বিক্রি করে দৈনিক আয় হয় দেড় থেকে দু’শ’ টাকা। সে টাকায় মায়ের চিকিৎসা হয় - যোগ করে আরিফ।

শুধু আরিফই নয়, পাথর তুলছে রোহানী, শরিফুল, জালাল, রবিউল, শামছুলসহ অনেকেই। সবার বয়স ৮/১২ বছরের মধ্যে।

রোহানী'র বাবা মোকসেদ আলী আগে তিস্তায় মাছ ধরলেও এখন অসুস্থ হয়ে পড়ায় কাজে অক্ষম হয়ে পড়েছেন বছর দুই হলো। তাই স্কুল আর বই খাতা রেখে বাবার সংসারের হালটা তাকেই ধরতে হয়েছে। সংসারের চাকা সচল রাখতে পাথর আহরণ করছে রোহানী। বর্ষাকালে মাছ ধরলেও এখন পানি শূন্য তিস্তায় অন্য শিশুদের সঙ্গে পাথর তুলছে সে। তিস্তায় শিশুদের পাথরের খোঁজ।  ছবি: সাগর

এরা সবাই লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়নের তিস্তা ব্যারাজের জেলে পাড়ার শিশু।

স্থানীয়রা জানান, তিস্তা পানি শূন্য হওয়ায় মাছ নেই এ নদীতে। তাই জেলে পাড়ার শিশুরা দল বেঁধে এখন পাথর তুলছে তিস্তা ব্যারাজের ভাটির খালে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।